নড়াইলে আইনশৃংখলার চরম অবনতি : এক মাসে চার খুন
নড়াইল প্রতিনিধি: সম্প্রতি নড়াইলের লোহাগড়ায় উপজেলায় আইন শ্রৃংঙ্খলা বাহিনী চরম অবনতি ঘটেছে। উপজেলায় মাত্র ১ মাসের ব্যাবধানে বিভিন্ন স্থানে ৪ জন খুন হয়েছে, এক জনের হাতের কজ্বি কেটে বিচ্ছিন্ন করা সহ অনন্ত ৪২ জন আহত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে একাধিক ছিনতায় হয়েছে, ঈদকে সামনে রেখে লোহাগড়া বাজারের ব্যাবসায়ীরা আতংকে রয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানাগেছে, গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তরের জের ধরে ১৪ আগষ্ট দিবাগত রাত নয়টার দিকে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার চরমল্লিকপুর গ্রামে বাসিন্দা বিএনপির নেতা মোহাম্মদ মল্লিক (৬৫) কে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকেরা। এসময় আহত হয় নিহত মোহাম্মদ মল্লিক এর ভায় ফুলে মল্লিক (৩০)। এ ঘটনায় উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি এস এম ফেরদৌস রহমানসহ ২২ জনকে আসামি করে ১৭আগস্ট নিহত ব্যক্তির ছেলে আলমগীর মল্লিক বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় মামলা করেন।
২০ আগষ্ট কাশিপুর ইউনিয়নের গন্ডব গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ভাইয়ের লাঠির আঘাতে ছোট ভাই আশিক মোল্লার (১৯) মৃত্য হয়। ঐ দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নড়াইল সদর হাসপাতলে তার মৃত্যু হওয়ার সাথে সাথে ময়না তদন্ত না করে পরিবারের লোকেরা হাসপাতল থেকে লাশ নিয়ে তড়িঘড়ি করে নিহতের বাড়িতে দাফনের প্রস্তুতি নেয়। তাৎক্ষনিক ঘটনা স্থালে সাংবাদিকরা পৌছালে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান নিহতে বাবা সলেমান মোল্লাকে বলে এখন আমার কিছু করার নেয়। লাশ মর্গে পাঠাতে হবে। পরে লাশ ময়না তদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতলে ফেরত পাঠায়। ময়না তদন্ত শেষে ২১ আগষ্ট লাশ দাফন করা হয়। তবে এঘটনা কোন হত্যা মামলা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে মোটা অংকের টাকা খেয়ে পুলিশ ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছে।
২৩ আগস্ট বিকাল সাড়ে পাঁচ টায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দিঘোলিয়া ইউনিয়নের কুমুড়ী গ্রামে প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান পলাশের নিজের সর্টগানের গুলিতে ইলিয়াছ মীর (৫৫) কে নিহত করে । পরে সংঘর্ষ বাধে এতে দুই পক্ষের অনন্ত ৭ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে লোহাগড়া থানা পুলিশ সংঘর্ষ চলা কালে অনন্ত ১২ রাউন্ড ফাকা গুলি ছোড়ে। এসময় ২ জন কে আটক করে পুলিশ। এখনও এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় এখনও অতিরুক্ত পুলিশর মোতায়েন রয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার গোপীনাথপুর সওদাগরপাড়ায় জুলমাত খাঁ নামে ১৪ বছরের কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিবেশিরা। বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রতিবেশি রনি, সাহিদুল, ওবায়দুলসহ সাত থেকে আটজন গোপীনাথপুর সওদাগরপাড়ায় ইকলাছ খাঁর ছেলে জুলমাত (১৪) ও জুঙ্গুকে (১৬) কুপিয়ে জখম করে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদেরকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ঐ দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে জুলমাতের মৃত্যু হয়। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে ১৮ আগষ্ট রাত সাড়ে ১০ টার দিকে লোহাগড়ার পৌর এলাকার খলিশাসাখালী গ্রামে জহুর কাজী (৫২) নামে মাঝ বয়াসী ব্যাক্তীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ডান হাতের কাজ্বি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। সে বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে চিকিৎসাধিন আছে। এঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
২২ আগষ্ট দুপুরে লোহাগড়া সরকারী কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র নাজমুল খন্দকারকে কুপিয়ে যখম করে ১ম বর্ষের পারভেজ। পুলিশ পারভেজকে আটক করেছে। এদিকে লোহাগড়া পৌর এলাকার পোদ্দারপাড়ার সম্পাদশালী হিন্দু ব্যাবসায়ীরা প্রতিনিয়ত ডাকাতির আতংকে আছেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন স্বর্ণ ব্যাবসায়ী জানান, দোকানের টাকা ব্যাংকে নেওয়ার সময় আমরা আতংকে থাকি কখন টাকা ছিনতায় হয়ে যাবে। টাকা বহন করার সময় কাচা তরকারির ব্যাগে টাকা লুকিয়ে পরিবহন করতে হচ্ছে। খোদ আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরাও চাঁদা ও ছিনতায়ের আতংকে রয়েছে, ২২ আগষ্ট সন্ধায় লোহাগড়া থানা থেকে ৫০ গজ দূরে জনসম্মখুকে লোহাগড়া বাজার ব্রীজের উপর ছিনতায়ের কবলে পড়ে দিঘোলিয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলী নেত্রী বিউটি বেগম। এসময় ছিনতায়কারীরা তার শরিরের থাকা স্বর্ণালংকার, মোবাইল, ও টাকা ছিনিয়ে নেয় বাধা দিতে গেলে ছিনতায় কারিরা তার স্বামীকে মারপিট করে। আলোচিত এ ঘটনায় জড়িত ছিনতায়কারীরা স্থানীয় খমতাসীন নেতার মদদ পুষ্ট।
এলাকায় আইন শ্রৃংঙ্খলা ঠিক আছে দাবী করে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত শেখ লুৎফর রহমান জানান, সম্প্রতি যে খুন, যখম, ছিনতায়সহ যে ঘটনা ঘটেছে সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর একটির সাথে অন্য ঘটনার কোন সম্পর্ক নেয়। প্রতিটা ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।