পঞ্চগড়ে শহীদ মকবুল হোসেন সড়ক দ্রুত পাকা করার দাবি এলাকাবাসীর
পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ‘শহীদ মকবুল হোসেন সড়ক’ পাকাকরণের জোর দাবি জানিয়েছেন ওই সড়কে চলাচলকারী গ্রামবাসীরা। প্রায় ৪৮ বছর আগে উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের পাঠানপাড়া থেকে দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তাটি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর সৈনিক শহীদ মকবুল হোসেনের নামে নামকরণ করা হয়। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও আজো কাচা এবং বেহাল অবস্থায় থাকা রাস্তাটিতে অনেক কষ্ট করে চলাচল করতে হয় ওই ইউনিয়নের তিন গ্রামের বাসিন্দাদের।
জানা যায়, বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক থেকে দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ, পাঠান পাড়া ও জামাদার গছ এই তিন গ্রামের মানুষের চলাচলের রাস্তা এটি। দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ গ্রামে ছয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় পাঁচ হাজার লোকের বসবাস। ইতোমধ্যে চারজন মুক্তিযোদ্ধার ইন্তেকাল হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির দের কিলোমটার রাস্তায় একাধিক স্থানে বড় বড় গর্ত। সেই গর্তে কাদাপানি ও ময়লা জমেছে। ভ্যান-রিকসা কিংবা বাইসাইকেল ঠিকমত চলাচল করতে পারছে না। কিছুদূর যেতে না যেতেই যাত্রীদের নেমে পায়ে হেটে যেতে হয়।
এলাকাবাসি জানায়, বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গর্ত আর কাদায় পিচ্ছিল হয়ে থাকে। ফলে পা পিছলে পড়ে অনেকে আহত হয়। গ্রামের বৃদ্ধ, অসুস্থ্য, বয়স্ক অনেকে চলাচল করে এই রাস্তায়। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের পায়ে হেটে চলতে হয়। এতেকরে তারা সময়মত স্কুলে পৌছাতে পারে না। অনেক সময় কাদা ছিটকে পথচারীদের পোশাক নোংড়া হয়ে যায়। বিশেষ করে কেউ জরুরি কাজে কিংবা রাতে চলাচলে চড়ম ভোগান্তিতে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে যান চলাচেলর প্রায় অযোগ্য এই রাস্তাটি। তাই রাস্তাটি দ্রুত পাকা চায় স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ীরা জানায়, দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ গ্রামের পশ্চিমে মহানন্দা নদী থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক পাথর উত্তোলন করে এই সড়ক দিয়ে ট্রলিতে করে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে এনে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এছাড়াও সড়কটি দিয়ে তিন গ্রামের মানুষ সপ্তাহে দুইদিন বাজার সদাই নিতে আসে তিরনই হাটে। এতে করে নিয়মিত চলাচলে এলাবাসি চরম দূর্ভোগে পড়েছে।
উল্লেখ্য ১৯৭২ সালে গ্রামের লোকদের নিয়ে দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ গ্রামের সন্তান বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: আনওয়ারুল হক ও মৃত জহিরুল হক মাস্টারের উদ্দ্যোগে মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে শহীদ মকবুল হোসেনের নামে সড়কটির নামকরণ করেন।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনওয়ারুল হক জানান, শহীদ মকবুল হোসেন সড়ক মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জরিত একটি সড়ক। তিনি বলেন, আমি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ছাত্র ছিলাম। আমি এবং দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ ও পাঠান পাড়ার কয়েজন যুবক মিলে গোয়াল গছ ইপিআরে(বর্তমান বিজিবি ক্যাম্প) বাংকার সংস্কারের জন্য, বাঁশ, পাট, দড়ি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাদ্য সামগ্রী নিয়ে এই রাস্তায় হেটে যেতাম। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের একটি স্মৃতিময় সড়ক এটি। আমার ছাত্রজীবন এবং দীর্ঘ ৩৬ বছরের কর্ম জীবন সমাপ্ত হয়েছে। আমি অবসরে আছি। কিন্তু আজো সড়কটি পাকা হয়নি। সড়কটি পাকা কার জন্য আমি কয়েকবার উপর মহলে জানিয়েছি। সড়কের এমন বেহাল দশা যে মানুষ চলাচল করতে কষ্ট পাচ্ছে। আমি জোর দাবি জানাচ্ছি সড়কটি যেন সরকার মুজিব জন্মশতবর্ষে পাকার কাজ শুরু করেন।
দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা, বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি অনেক বার এই সড়কটি পাকা করার জন্য উর্ধ্বতন মহলে জানিয়েছি, নিজ উদ্দ্যোগে গ্রামবাসিদের নিয়ে রাস্তাটি আনেকবার মেরামতও করেছি। এই ইউনিয়নের সব রাস্তা পাকা হয়েছে। আমাদের রাস্তাটি আগে পাকা হওয়া জরুরি ছিলো। তবে আশা করি কতৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন।
ওই গ্রামের বাসিন্দা শহীদ মোকবুল হোসেনের ভাতিজা ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ওসমান গনি বলেন, রাস্তাটি আমার চাচার নামে নামকরণ করা, এটা শুধু নামকরণই করা হয়েছে কিন্তু আজও পাকা হলো না, তিনি আরো বলেন, এই রাস্তা দিয়ে তিন গ্রামের প্রায় ৪/৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। প্রায় ৫’শ ছাত্র-ছাত্রী এই রাস্তা দিয়ে স্কুল কলেজে যাতায়াত করে, গ্রামে একটা রুগি হলে ডাক্তারের কাছে আনা যায় না। তাই আমি কতৃপক্ষের কাছে সবার পক্ষ থেকে সড়কটি পাকা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নবীজুল হক বলেন, আমরা এই গ্রামে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম, এখন দুজন আছি, ১৯৭২ সালে সড়কটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন নামে করা হলেও আজও পাকা হয়নি, আইজ ৮/১০ বছর থেকে শুনতেছি সড়কটি পাকা হচ্ছে, কিন্তু হয়না। আমার বয়স ৭৬ বছর আরেক মুক্তিযোদ্ধা তারও বয়স ৭৫/৭৬, আমি এই রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে চলাচল করি, অনেক সময় বাজার থেকে রাতের অন্ধকারে সাইকেল নিয়ে হেটে হেটে যেতে হয়। এতে করে খুব কষ্ট হয়। রাস্তা এতই খারাপ সাইকেল চালিয়ে যাওয়া যায় না। স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা যায় এই রাস্তায়। কবে যে রাস্তাটি পাকা হবে জানি না। আমি বেচে থাকতে রাস্তাটি পাকা দেখে যেতে চাই। সরকারের কাছে আমার জোর দাবি রাস্তাটি যেন অতি তাড়াতাড়ি পাকা হয়।
সাবেক ইউপি সদস্য মো. সফিজুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে তেঁতুলিয়া উপজেলার মধ্যে একমাত্র আমাদের গ্রামে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা, এখনে আওয়ামীলীগের ৯০% ভোটার রয়েছে তবুও কি কারণে যে সড়কটি পাকা হয়না জানিনা। একটু বৃষ্টি হলে রাস্তা দিয়ে আর যাতায়াত করা যায় না। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলে খুব অসুবিধা হয়। জরুরি মুহূর্তে, কোন দূর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, কিংবা এ্যাম্বুলেন্স সময়মত পৌছাতে পারে না। সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি যেন রাস্তাটি দ্রুত পাকা হয়।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুজ্জামান বলেন, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলাধীন পাঠান পাড়া থেকে দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ রাস্তাটির এক কিলোমিটার উন্নয়নের জন্য সম্প্রতি ঠিকাদারের অনুকুলে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। আশা করি এ বছরের অক্টোবরে ১০ অথবা ১৫ তারিখের মধ্যে কাজ শুরু হবে ইনশাল্লাহ।
তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বলেন, সড়কটির এক কিলোমিটার পাকা করনের টেন্ডার ইতোমধ্যে হয়েছে। এতে এক কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। তবে করোনার জন্য কাজ শুরু করা যায়নি। তবে দ্রুত কাজ শুরু হবে। এবং বাকি আধা কিলোমিটার রাস্তা পরবর্তীতে হবে।
বাংলাবাদ্ধা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কুদরত-ই-খুদা মিলন বলেন, রাস্তাটির টেন্ডার পাশ হয়েছে। ঠিকাদারের সাথে আমার কথা হয়েছে কাজ শুরু করবে। তবে বর্ষার কারনে কাজ শুরু করা হয়নি। বর্ষায় কাজ শুরু করলে জনসাধারণের চলাচলে কষ্ট হবে। এই বিবেচনায় কাজ দুই মাস পেছানো হয়েছে। তবে কাজ দ্রুত শুরু হবে।