পঞ্চগড়ে হিল্লা বিয়ের ঘটনায় ৯ মাতাব্বরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি
পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের ছলিমনগর এলাকার আয়নাল হক ও জামিরন বেগম নামে এক দম্পত্তিকে মৌখিক তালাকের জেরে একঘরে করে রাখা হয়। একঘরে করে রাখার ঘটনায় ৯ জন শালিসী ফতোয়া দানকারী গ্রাম্য মাতব্বরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে পঞ্চগড়ের আমলী আদালত।
মহামান্য হাইকোর্ট ২০০১ সালে হিল্লা বিয়ের জন্য চাপ দেয়া ও হিল্লা বিয়ের ফতোয়া দেয়া দন্ডনীয় অপরাধ করে রায় দিয়েছে । এ রায়ের পর থেকে হিল্লা বিয়ের নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে হিল্লা বিয়ের ফতোয়া দেয়া সাংঘর্ষিক। এক সাথে তিনবার তালাক শব্দ উচ্চারণ করলে এক তালাক হিসেবে গন্য হবে। এটা কখনো তিন তালাক হবেনা। গ্রাম্য মাতাব্বররা এক্ষেত্রে অপরাধ করেছেন।
রবিবার দুপুরে দেবীগঞ্জ-২ আমলী আদালতের বিচারক এমএম মাহবুব ইসলাম এ গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ জারি করেন।
ওই পরিবারটিকে দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে হিল্লা বিয়ে দেওয়ার ফতোয়া প্রদানকারী সমাজপতিরা একঘরে করে রাখে। এ নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে সে সংবাদ বিচারকের নজরে আসে।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মতিউর রহমান সে ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি আমলে নেন।
পঞ্চগড়ের আমলী আদালত দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন এবং ২২ আগস্টের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দেবীগঞ্জ থানার ওসি মো. জামাল হোসেন গত ২২ আগস্ট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেবীগঞ্জ আমলী আদালতের বিচারক এম এম মাহবুব ইসলাম রবিবার সমাজপতি মো. শাহজাহান আলী, মুফতি মো. আনোয়ার হোসেন, মো. নাসির উদ্দীন, মো. আমির চাঁন, মো. শহীদ, মো. ছোরমান আলী, মো. জুলহক, মো. মোস্তফা ও মো. রাসেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জামাল হোসেন জানান, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘটনাটি তদন্ত করি। তদন্তে ওই দম্পতিকে একঘরে করে রাখার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্তে ওই নয় জনের নাম পাওয়া যায়। দেবীগঞ্জ আমলী আদালত সমাজপতিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে বলে শুনেছি। তবে পরোয়ানাটি এখনও দেবীগঞ্জ থানায় এসে পৌছে নাই। আমার কাছে এখন পর্যন্ত এসে পৌঁছেনি। পরোয়ানা হাতে পেলেই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সরকারি কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান এ ঘটনায় নয় জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ফতোয়া প্রদানের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধজ্ঞা রয়েছে। সরকারের আইন অমান্য করে যারা এ ধরনের কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ায় আদালত সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা আছে যদি কেউ তালাক দিতে চায় তাহলে ওই এলাকার স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মেয়র, কাউন্সিলদের নোটিশ প্রদান করতে হবে। সেই সঙ্গে তালাক গৃহিতাকে তালাকের নকল প্রদান করতে হবে। তালাক প্রদানের ৯০ দিনের মধ্যে যদি স্বামী স্ত্রী সমঝোতা করে তাহলে তালাক কার্যকর হবে না এতে স্বামী স্ত্রী মিলেমিশে এক সাথে বসবাস করতে পারবে। যদি তারা তালাক প্রদানের ৯০ দিনের মধ্যে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ৯০ দিন পর সে তালাক কার্যকর হবে। তালাকটি নিকাহ রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক।
আসাদুজ্জামান আপেল/বিডিপি