পরমাণু কর্মসূচি কমালে ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ প্রত্যাহার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে তেহরান ও ছয় বিশ্বশক্তি। এ সমাঝোতা চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ছয় বিশ্বশক্তির অন্যতম দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ইরানও এটাতে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বিরোধিতা করেছে ইসরায়েল। সুইজারল্যান্ডের লুজান শহরে আট দিন ধরে আলোচনার পর বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা সমঝোতার পৌঁছান।
পরে লুজানে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রূপরেখা চুক্তির বিষয়ে মতৈক্যের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে ছয় বিশ্বশক্তির পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মগেরিনি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ উপস্থিত ছিলেন।
জারিফকে পাশে রেখে মগেরিনি ঘোষণা করেন, অবশেষে ‘চূড়ান্ত পদক্ষেপ’ অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মূল বিষয়গুলোর সমাধানে যৌথভাবে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। আলোচকেরা এখন এই কর্মপরিকল্পনার খসড়া বিষয়বস্তুর জন্য কাজ শুরু করবেন। তাদের ঘোষণায় জানানো হয়, পরমাণু প্রকল্পের বিষয়ে ইরান ছাড় দেবে আর পশ্চিমারা তুলে নেবে অবরোধ।
ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ব্রিটেন, চীন, জার্মানি, রাশিয়া ও ফ্রান্সের ওই আলোচনার সমন্বয় করে ইইউ। ওই সমঝোতার ঘোষণা আসার পর বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউস থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ওবামা এটাকে ‘ভালো চুক্তি’ বলে অভিহিত করেন। এর মাধ্যমে তেহরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা রোধ করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইরানের পরামাণু প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ কমাতে সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলো ও ইসরায়েলের সঙ্গে তার নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করবে বলে জানান ওবামা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও এই সমাঝোতাকে একটি ভালো চুক্তির ‘শক্ত ভিত্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তবে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওবামার সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনার সময় সতর্ক করে বলেছেন, এই চুক্তি ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকার ও বিরোধী রিপাবলিকান দলের নেতা জন বোয়েনার সুপারিশ করে বলেছেন, ইরান তাদের পরমাণু প্রকল্প ব্যবহার অব্যাহত রাখবে না। এটি ব্যতয় হলে দেশটির ওপর যে-কোনো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে এবং ওই অঞ্চলের অস্থিতিশীলতার আরো বাড়বে।
যদিও ওবামা এ চুক্তিকে রাজনীতির চেয়ে বড় কিছু বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই চুক্তি যুদ্ধ ও শান্তির বিষয়। যদি কংগ্রেস এই চুক্তি বাতিল করে তাহলে আন্তর্জাতিক ঐক্য ভেঙে পড়বে এবং সংঘাতের পথ উন্মুক্ত হবে।’
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন দুই পক্ষের মতৈক্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এই সমঝোতা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।
চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেন, ‘প্রতিনিধি দেশগুলো চুক্তির জন্য বিস্তারিত কর্মপ্রক্রিয়াতে রাজি হয়েছে। প্রতিনিধি দেশগুলোর কেউ যদি অজুহাত তোলে আমরা সেটা মেনে নেব না ।’ তথ্যসূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি।