Connecting You with the Truth

‘পরীমণির বাসায় নিয়মিত বসতো মদের আড্ডা’

নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর বনানী থেকে মাদকসহ আটক ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা পরীমণিকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলন করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটি র‌্যাবের সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

এসময় র‌্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমণির বাসায় মিনিবার ছিল, যেখানে ডিজে পার্টি করা হতো। সেখানে মাদক গ্রহণ চলতো। পরীমণি ২০১৬ সাল থেকে মাদক সেবন করতেন। এমনকি ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি ও আইসও সেবন করতেন নায়িকা পরীমণি। তার বাসায় একটি মিনি বারও রয়েছে। আর চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ পরীমনির বাসায় এসব মাদক সাপ্লাই (সরবরাহ) করতেন।

র‌্যাব বলেন, পরীমণি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন অশ্লীন ভিডিও তৈরি করতো। ভুক্তভোগিদের অভিযোগের ভিত্তিতে এসব বিষয়ে তদন্ত করা হবে। অতিমাত্রায় মাদক সেবন করতেন পরীমণি। সেজন্য ব্যক্তিগত বাড়িতে নিজেই মিনিবার তৈরি করেছেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, পরীমণি লাইভে এসে কেন এই ভিডিও করলো, সেটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা সেটি দেখা হচ্ছে। এটি যাচাই-বাছাই করা হবে।

র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, র‌্যাবের অভিযানে রাজধানীর বনানী হতে অবৈধ মাদকসহ শামসুর নাহার স্মৃতি স্মৃতিমণি ওরফে পরীমণি ও মো. নজরুল ইসলাম ও রাজসহ ৪ জন গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং তার সহযোগী মোঃ মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকার গুলশান, বারিধারা ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টি আয়োজনের বেশ কয়েকটি স্থানের তথা প্রদান করে। ফলশ্রুতিতে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর অভিযানে ৪ আগস্ট রাজধানীর বনানী এলাকায় বিকাল হতে রাত পর্যন্ত অভিযাল পরিচালনা করে পরীমণিকে আটক করা হয়।

তিনি বলেন, ৩৩ বোতল বিভিন্ন প্রকার বিদেশি মদসহ দেড় শতাধিক ব্যবহৃত বিদেশী মদের বোতল, ইয়াবা ও শিশা সামগ্রি, এলএসড়ি, আইস ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতদের হাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

খন্দকার আল মঈন বলেন, পরীমণিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়- পরীমণি পিরোজপুরের কলেজে (এইচএসসি) জীবনে অধ্যয়ণরত অবস্থায় চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। তিনি ২০১৪ সালে। চিত্র জগতে অন্তর্ভুক্ত হন। এ পর্যন্ত তিনি ৩০টি সিনেমা এবং ৫/৭টি টিভিসিতে অভিনয় করছেন। ঢাকায় এসে চিত্র জগতে একা দৃঢ় অবস্থান তৈরিতে মোঃ নজরুল ইসলাম রাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশি মদসহ নিয়মিত এ্যালকোহল সেবন করেন। পরীমণি ২০১৬ সাল হতে অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে। মাত্রাতিরিক্ত সেবনের চাহিদা মেটাতে বাসায় একটি মিনিবার স্থাপন করেছেন। মিনিবার থাকায় তার ফ্ল্যাটে ঘরোয়া পার্টি আয়োজন পরিপূর্ণতা পেত বলে তিনি জানান।

র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত মো. নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের সরবরাহ করত এবং পার্টি করতো। রাজ মাদরাসা হতে দাখিল পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন বলে দাবী করেন। বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য ও ঠিকাদারী কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজ জগতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটে। বিভিন্ন সিনেমা/নাটকে তিনি নানান চরিত্রে অভিনয়ের সঙ্গে নামে বেনামে প্রয়োজনায় যুক্ত হন। রাজ মাল্টিমিডিয়া নামেও তার একটি প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়িক জগত ও চিত্র জগতের দুই ক্ষেত্রে তার সংযোগ থাকায় তিনি অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত নজরুল ইসলাম রাজ, শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের সহযোগিতায় ১০/১২ জনের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। উক্ত সিন্ডিকেটটি রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা করে থাকে। উক্ত পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের নিকট হতে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমান অর্থ পেয়ে থাকেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করত।

এছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করত। একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরণের পার্টির আয়োজন করা হত। পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে আগত ব্যক্তিদের চাহিদা/পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে পার্টি সমূহ আয়োজন করত। নজরুল ইসলাম রাজ এর সিন্ডিকেট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপব্যবহার করতেন। সুদর প্রসারী পরিকল্পনায় তারা অগ্রসর হতেন ও স্বার্থ চরিতার্থ করতেন। তার রাজ মাল্টিমিডিয়া কার্যালয়টি অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হত। অবৈধ আয় হতে অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় আমদানি, ড্রেজার বালু ভরাট ও ঠিকাদারী ও শোবিজ জগতে বিনিয়োগ করেতেন। বর্ণিত ব্যবসায় বেশ কয়েকজন অবৈধ অর্থের যোগানদাতাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছেন। ব্যবসায়িক কাঠামাতে অস্বচছতা রয়েছে।

Comments
Loading...