প্রধান বিচারপতিকে সংযত হয়ে কথা বলার পরামর্শ সুরঞ্জিতের

প্রধান বিচারপতিকে সুরঞ্জিত অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখা ‘সংবিধান পরিপন্থি’ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার এমন বক্তব্যকে ‘অনভিপ্রেত’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের আইন, বিচার ও সংসদীয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সোমবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রয়াত এম এ আজিজের শোকসভায় সুরঞ্জিত এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সুরঞ্জিত বলেন, সাংবিধানিকভাবে তিনি (প্রধান বিচারপতি) দেশের প্রধান তিনজনের একজন। প্রধান বিচারপতিরা প্রধান বিচার করেন, প্রধান প্রধান কথা বলেন না। এই পদে থেকে সাধারণত প্রধান কথা শোনা যায় না। এই পদে থেকে তিনি এমন কিছু কথা বলে ফেলেছেন যা জাতীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন। এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে কথা বলতে বলতে তিনি কোথায় চলে যাচ্ছেন এর সীমানা থাকছে না।
সুরঞ্জিত বলেন, আর এখন তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন যা সংবিধানের কোথাও নেই। সংবিধান রচনা করেছি আমরা। সংবিধানের কোন জায়গায় লেখা আছে বিচারপতিরা অবসরে গেলে রায় লেখা যাবে না? এ কথা সংবিধানের কোথাও লেখা নেই। নিজস্ব কোন্দলের জন্য জাতীয়ভাবে এত বড় একটা উত্তেজনা সৃষ্টি করবেন এটা আমরা আশা করি না। আপনার এ কথা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে সংযত হয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে সংবিধানের অন্যতম এই প্রণেতা বলেন, আপনার এই কথা কোনো রাষ্ট্রীয় সহনশীলতার কথা নয়। এই সমস্ত পদে এগুলো কী? আপনারা দুই বিচারপতির মধ্যে গোলমাল, আক্রোশ-বিক্রোশ এটা বাইরে আসবে কেন? আমি এবং তুমি এটা জনগণ জানবে কেন? আপনাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, আর আপনি সেটা নিয়ে পাবলিকলি কথা বলে অনেককে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। এতে আমরা খুবই মর্মাহত।
সুরঞ্জিত বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিদের প্রতি এমনিতেই আমরা সন্মান একটু বেশি দেখাই। তাদের কথাবার্তায় সাবধানতা থাকা উচিত। তাহলে সন্মানবোধটা কমবে না। ওনি যা বলেছেন এটা তো কোনো আইন নয়। উনি যদি মনে করেন শপথ শেষ হয়ে গেলে আর বিচার দেখতে দেব না সেটা অবসরে যাওয়ার কতদিন আগ থেকে জাজমেন্ট ঘোষণা করতে হবে? এটাও আইনে আনতে হবে। সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু হলে এটা বাতিল করতে পারে হাইকোর্ট। বিচার বিভাগকে সেই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনাকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেয়ার পর রাগ-অভিমান, বিদ্বেষ সব ভুলে গিয়ে দেশের জন্য, জাতির জন্য আপনার কাজ করে যাওয়ার কথা। আর আপনি বলে উঠলেন আপনার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। আইনের শাসনের যুগ, আপনারা তো স্বাধীন, আলাদা। সংবিধানে স্পষ্ট লেখা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি এই তিনটি অঙ্গনই একে অপরের পরিপূরক।
শোকসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ।