Connecting You with the Truth

‘পড়াশুনার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পদত্যাগ করে ঢাকায় চলে যান’ -বেরোবি উপাচার্যকে মেয়র ঝন্টু

DSC05849বেরোবি প্রতিনিধি:

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) চলমান সংকট দূর করে পড়াশুনার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে উপাচার্যকে পদত্যাগ করে ঢাকায় চলে যেতে বলেছেন রংপুর সিটি করপোরেশন মেয়র আলহাজ্ব সরফুদ্দিন আহাম্মদ ঝন্টু। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত ‘সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর চলমান আন্দোলনের সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি এই কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী যদি স্বেচ্ছায় চলে না যান তাহলে তাঁকে কীভাবে বিদায় করতে হয় তা রংপুরের মানুষ জানে বলেও তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
বেরোবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবীকে অপসারণের দাবিতে গত তিন মাস থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা। গত ২৭ অক্টোবর ২০১৪ তারিখ থেকে শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন দাবিতে এই আন্দোলন শুরু করলেও তাতে উপাচার্য কর্ণপাত না করায় পরে এটি সর্বজনীন আন্দোলনে রূপ নেয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক সমিতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে আন্দোলন পরিচালনার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে ‘সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’ গঠন করা হয়।
সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক এবং বেরোবি শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ড. আর এম হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে মেয়র ঝন্টু বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই উপাচার্যকে বিদায় করেই এটিকে ভালোভাবে পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে আমাদের যা করা দরকার আমরা তাই করবো।’ উপাচার্যের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনি এককভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে জিম্মি করে ছেলে-মেয়েদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারেন না। আপনি ঢাকার মানুষ, ঢাকায় থাকতে ভালোবাসেন, তাই সেখানেই চলে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত করেন।’
উপাচার্যকে উম্মাদ ও পাগল আখ্যায়িত করে সিটি মেয়র বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি ভিসি বলে যা করবেন তাই হবে আর এখানকার সব মানুষ কুকুর শিয়াল তাহলে ভুল করবেন। কারন রংপুরের মানুষের অনেক সাধনার ফসল এই বিশ্ববিদ্যালয়। আপনি যদি সেচ্ছায় না যান তাহলে এখানকার মানুষ জানে কীভাবে আপনাকে পোটলা গুটিয়ে বিদায় করে দিতে হবে।’
রংপুর সিটি মেয়র আরও বলেন, ‘এ রকম স্বেচ্ছাচারি এবং একগুয়েঁমি উপাচার্য দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পাওে না। যিনি প্রতিষ্ঠান প্রধান হয়ে দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সমস্যা সমাধান করতে পারেন না।’
সিটি মেয়র উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, ‘আপনি যোগদান করার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে জংলা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ রংপুরের মানুষকে কুকুর শিয়াল মনে করেন। এসব কুকুর-শিয়ালের মধ্যে আপনার থাকার দরকার নাই। আপনার (উপাচার্য) মতে, রংপুরের মানুষের আয়োডিনের অভাব। আমাদের ছেলে-মেয়েদের হয়তো আপনার সন্তানের মত এত আয়োডিন নেই। তাই পারলে আমরা আয়োডিনের ঘাটতি কিভাবে পূরণ করব পরামর্শ দিয়ে রংপুর ছেড়ে চলে যান। রংপুরবাসী আপনার মত নির্লজ্জ এবং অযোগ্য মানুষ চায়না।’
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘এই অযোগ্য উপাচার্যের তোয়াক্কা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ভিসিকে বাদ দিয়েই আপনারা সকল কার্যক্রম চালিয়ে যান। প্রয়োজনে উপাচার্যকে বাদ দিয়েই ২০১৪-১৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করেন, রংপুরের মানুষ আপনাদের পাশে থাকবে।’
উপাচার্যের অনুসারীদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘আমি জানি উপাচার্যের কিছু দালাল আছেন। আপনারা এই সমাবেশের আশেপাশে থাকেন বা যেখান থেকেই এই কথাগুলো শোনেন এগুলো উপাচার্যকে পৌছে দিন। নতুবা তাঁর পক্ষের কোনো কথা থাকলে এখানে বলে যান। এমন একজন স্বেচ্ছাচারী মানুষের সাথে থাকার জন্য আপনাদেরকেও জবাবদিহি করতে হবে।’
সমাবেশে সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব ও নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ উপাচার্যের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি চলে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত করে দিন আমরা দশ দিনের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো। সেশনজট কমাতে প্রয়োজনে সকাল-বিকেল ক্লাস নিব। আরো যা করা দরকার তাই করবো।’
সভাপতির বক্তব্যে ড. হাফিজুর রহমান সেলিম বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি এই অবাঞ্ছিত উপাচার্য চলে যাওয়ার পর আমরা সকল সমস্যা দূরীকরণে সবাই মিলে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব।’ তিনি উপাচার্যকে দ্রুত অপসারণ করার জন্য আবারো সরকার ও রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার শামসুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক মোহাম্মদ রফিউল আজম খান।

Comments
Loading...