বাংলা একাডেমির বইয়ে ভুল তথ্য! চাল কুমড়া দিয়ে তৈরী হয় একতারা !
ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ,
আমরা জানি বাংলা একাডেমি তার জন্ম লগ্ন থেকেই লোক সাহিত্য এবং লোকসংস্কৃতি সংগ্রহ ও বই রুপে প্রকাশ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলা একাডেমি ২০১০-১১ অর্থ বছরে দেশের ৬৪ জেলার লোক সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির সকল বিষয় তুলে ধরার প্রয়াস পায়। এ কারণে “বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা ঝিনাইদহ” নামে বাংলা একাডেমি থেকে আষাঢ়-১৪২১/ জুন-২০১৪ একটি বই প্রকাশ হয় । যার প্রধান সম্পাদক ছিলেন শামসুজ্জামান খান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন মো. আলতাফ হোসেন এবং সহযোগি সম্পাদক ছিলেন আমিনুর রহমান সুলতান। এছাড়া এই বইয়ের প্রধান সম্বয়কারী ছিলেন সন্দীপক মলিক্ষক, সমন্বয়কারী ছিলেন এ.এইচ.এম. আক্তারুল ইসলাম এবং সংগ্রাহক ও সংকলক ছিলেন মোহাম্মদ জাহিদুজ্জামান। বইটি পড়ে ঝিনাইদহের লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির বিষয়ে জ্ঞান পিপাসুদের মাঝে উন্নত ধারণা জন্মানোর কথা থাকলেও কোন কোন অধ্যায় পড়ে অনেকেই হতাশ হয়েছেন। বিশেষ করে “লোক বাদ্য যন্ত্র অধ্যায়”(পৃষ্টা১৯৩) এর “একতারা” বিষয়ের বর্ণনা পড়ে পাঠকদের “চক্ষু চড়ক গাছ”। ঝিনাইদহ আউল বাউলদের অঞ্চল। এখানে জন্মেছেন পাগলকানাই, পাঞ্জু শাহ ও লালন ফকির মত বাউলেরা। আর বাউলদের প্রধান বাদ্য যন্ত্র “একতারা”। একারেন এ এলাকা তথা সারা বাংলাদেশের মানুষেরা জানে কি দিয়ে কি ভাবে একতারা তৈরি করা হয়। কিন্তু এ বইয়ে নির্মান সামগ্রী ও নির্মান কৌশল যে ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তা একেবারেই কল্পকাহিনী ছাড়া কিছু না। একতারা তৈরির বিষয়ে যার নুন্যতম জ্ঞান আছে সেও এ বিষয় পড়ে হতবাক হয়েছে। একতারা তৈরির প্রধান উপকরণ পাকা লাউ বা কদুর বশ। কিন্তু এই বইয়ে আছে “ চালকুমড়ার কথা”। তিনি কি জানেন চালকুমড়ার খোলস রসুনের খোসার মত পাতলা। চালকুমড়ার ভিতরের অংশ ফেলে দেয়ার পরে তা কয়েক মিনিটও স্থায়ী হয় না। তা ফেটে যায়। একতারা বানানো তো দুরের কথা……..! এছাড়া তিনি একতারা তৈরির বর্ণনায় লিখেছেন “ চালকুমড়ার পিছন ফুটো করে গুনা বা তার লাগাতে হবে।” কিন্তু প্রকৃত পক্ষে একতারা বানাতে হলে লাউ বা কদুর বশের দু’পাশ থেকে কেটে নিচের দিকটা চামড়ার ছাউনি দিতে হয় এবং চামড়া মধ্য ভাগে ফুটা করে তার বা গুনা পরাতে হয়। তবে বর্তমানে নারিকেলের মালা ও কাঠের খুদায় করা অংশ দিয়েও একতার বানাতে দেখা যায়। এই বইয়ে বণর্নায় আছে একতারা তার বা গুনাকে টাইট করার জন্য দুপার্শ্বের বাঁশের লাঠির পাশে দু থেকে তিনটা কাঠি সংযোজন করতে হবে। কিন্তু একতারা তৈরির কারিগরদের মতে একতারা একটি তার বা গুনা টাইট কারা জন্য একাধিক কাঠির কোনই প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে ঝিনাইদহের বিখ্যাত বাউল শিল্পি সলেমান বয়াতীর সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, বইয়ে বর্নণীত চালকুমড়া দিয়ে কোন ভাইবেই একতারা তৈরি করা যায় না। একতারা তৈরির কারিগর গহর শাহ জানান, একতারার প্রধান উপকরণ লাউ বা কদুর বশ। তবে অতিতে এক সময় বড় মাকাল ফল দিয়ে একতারা তৈরি করা হত। কিন্তু চালকুমড়া দিয়ে কোনদিনই কোন ভাবে একতারা বানানো যায় না। এ বিষয়ে এলাকার বাউল শিল্পিদের সাথে কথা হলে তার বইটি ভুল সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।