বাস্তুচ্যুতদের প্রণোদনা নয়, সহযোগিতা দরকার -ড. ওয়াল্টার কলিন
ডেস্ক রিপোর্ট:
নানামাত্রিক কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ সব বাস্তুচ্যুতদের উন্নয়নে প্রণোদনা নয়, দরকার সহযোগিতার বলে জানিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের অধ্যাপক ও পরিবেশবাদী সংগঠন নেনসিন ইনেসিয়েটিভ’র চেয়ারপারসন ড. ওয়াল্টার কলিন। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন, ২০১০ সালে একটি গবেষণা হয়েছে। বিশ্বের ১৬০টি দেশকে নিয়ে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। এর ফলাফলে দেখা যায় ৫০ কোটি মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে। এর বেশিরভাগই আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মধ্যেই। আমরা যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পড়ি এ জন্য বিষয়টিকে আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। জলবায়ু সংকট তখনই গুরুত্বপূর্ণ যখন মানুষ এর প্রভাবে বাস্তুচ্যুত, স্থানচ্যুত হতে বাধ্য হয়। এই সমস্যা না থাকলে জলবায়ু পরিবর্তন কোনো সমস্যাই হতো না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত কাল বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড র্স্ট্যাটেজিক স্টাডিজ ভবনে (বিআইআইএসএস) ‘জলবায়ু পরিবর্তনে স্থানচ্যুত মানুষ: বিশ্ব বিতর্ক’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ। সমাপণী বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজক সুইজারল্যান্ড ও নরওয়ে থেকে পরিচালিত একটি সংগঠন নেনসিন ইনেসিয়েটিভ। বাংলাদেশও উক্ত সংগঠনের একটি সদস্য। বাংলাদেশ ছাড়াও কেনিয়া, কোস্টারিকা, জার্মানি, মেক্সিকো, ফিলিপাইন ইত্যাদি রাষ্ট্র এ সংগঠনটির সদস্য হিসেবে রয়েছে।
এ সময় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাস্তুচ্যুত, স্থানচ্যুত মানুষের যে সমস্যা তা আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। এ জন্য একত্রে কাজ করতে হবে। কারণ এটি এখন একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। এ সমস্যা বৃদ্ধি পেলে দেশ, জাতি, রাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে মানুষ আশ্রয় খুঁজবে। এ জন্য এক হতে হবে, একত্রে কাজ করতে হবে এখন থেকেই। অধ্যাপক ওয়াল্টার কলিন তার বক্তব্যে বলেন, সারা বিশ্বে স্থানচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১৬০ মিলিয়ন (২০০৮ থেকে ২০১৩)। তারা বাস্তুহারা হয়েছে। এদের প্রণোদনা নয়, সহযোগিতা করতে হবে। আর তবেই তাদের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটবে। গোটা বিশ্বে যেসব স্বল্প আয়ের দেশ রয়েছে, সে সব দেশে এ হার অনেক বেশি। কারণ তারা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এতে সে সব স্বল্প আয়ের দেশে সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দায়ী দেশগুলো এ জন্য দায় নিচ্ছে না, এটিও বড় একটি সমস্যা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কলিন বলেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আইলায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতির শিকার হয়েছে। ২০১৩ সালে ফিলিপাইন ও তার আশেপাশের অঞ্চলে টাইফুনের আঘাতে ৪০ লাখ মানুষ গৃহহারা হয়। এছাড়া পাপুয়া নিউগিনিতে ২০০৮ সালে সমুদ্রের বড় ঢেউয়ের আঘাতে সেখানকার ৭৫ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়ে, গৃহ হারায়। সম্প্রতি হাইতিতে ভূমিকম্পের ফলে ২৩ লাখ মানুষ ক্ষতির শিকার হয়েছে। প্রতি বছরই এ ধরনের জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কেবলই বাড়ছে। এর একটা সমাধান দরকার। বাস্তুচ্যুত এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মানুষের পরিচয়হীনতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে এক মত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাদের পরিচয় নির্ধারণ করতে হবে। কারণ তারা যুদ্ধে নয়; মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক নানা কারণে সমস্যার মুখে পড়ে আজ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ সময় উল্লেখ করা হয় এ ধরনের সমস্যা পাঁচ রকমভাবে আসে। যেমন- হঠাৎ করে, ধীরে ধীরে, রাষ্ট্র ভাঙলে, সংঘাতের ফলে ইত্যাদি। এ জন্য যে সংকট তৈরি হয় তা হলো- মানবিক, মানবাধিকার, অভিজোযন, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা।
বক্তারা এই সমস্যা মোকাবেলায় একটি স্থায়ী সংবিধান তৈরির আহ্বান জানান। যার আওতায় প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাস্তুচ্যুতদের উন্নয়নে প্রণোদনা ছাড়াও দীর্ঘ মেয়াদী সহযোগিতা দেওয়া হবে। এই উদ্যোগের সঙ্গে যোগ দিয়েছে মরক্কো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বিশ্বে প্রতিবছর কার্বনের মতো মানব উৎপাদিত প্রায় ৪৯.৫ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়। এর প্রায় অর্ধেক শোষণ করে নেয় প্রকৃতি। সমুদ্র প্রতিদিন ৩০ মিলিয়ন টন কার্বন শোষণ করে। তবে এতে কার্বন থেকে নিঃসরিত এসিড সাগর ও মহাসাগরগুলোর জীববৈচির্ত্র্যরে উপর মারাÍক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আর এর বেশির ভাগের জন্যই দায়ী উন্নত দেশগুলো। কিন্তু দেশগুলো এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে না, আর এটিকে আগামীর জন্য সবচেয়ে বড় শঙ্কার বলেও এ সময় বক্তারা উল্লেখ করেন।