‘বিকলাঙ্গ’ সংবিধান স্বাভাবিক করছে সরকার -সুরঞ্জিত
স্টাফ রিপোর্টার:
সামরিক আইন দিয়ে জিয়াউর রহমান সংবিধানকে ‘বিকলাঙ্গ’ করেছিলেন। এখন ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সেটাকে দূর করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। চলমান রাজনীতি বিষয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু একাডেমী।
সুরঞ্জিত বলেন, “এবারের অধিবেশনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর একটা বিষয় সামনে এসেছে। আমরা আশা করছি যে, এ বিলটি সংসদ সদস্যরা সংসদে আনবেন। কিন্তু তার আগে এ বিলটি সংসদীয় কমিটিতে আনতে হবে। আর ওই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে সংসদে বিল আনা হবে।” তিনি বলেন, আমি সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে আইনটি আমার কাছে আসবে। যারা সংসদে নেই, আমি তাদেরও ডাকবো। তারা তাদের মতামত দিতে পারবেন। বিএনপি চাইলে তারাও এতে মতামত দিতে পারবে। সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলকেও ডাকবো, তাদের মতামত নেওয়া হবে। তবে তাদের মতামত গ্রহণ করা হলো, না বর্জন করা হলো এটা বড় কথা নয়। এ মতামত রেকর্ড করা হবে এবং সংসদীয় কমিটির কাছে থাকবে। শতবর্ষ পরেও কেউ দেখতে চাইলে পাবেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সংবিধানের সংশোধনী (বিচারপতিদের অভিশংসন) নিয়ে এখন যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, এটা চায়ের কাপে ঝড় তোলার মতো। এ আইনটি নতুন নয়, এটা বাহাত্তরের সংবিধানেও ছিল। জিয়া সামরিক আইন দিয়ে এ আইনটি পাকিস্তানের আদলে পরিবর্তন করেছিলেন। আমরা ওটাই ফিরিয়ে আনছি। এটা গতবার একসঙ্গে নিয়ে আসলেই হতো। তাহলে আর এখন মাতামাতি হতো না। ওটা ঠিক হয়নি। তারপরও এখন আনছি এটাই বড় কথা। বিলম্বে হলেও সঠিক কাজটি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য সংবিধান সংশোধন করলেই হবে না। এর জন্য আরেকটি আইন লাগবে। ওই আইনটি পাস হলে এখন যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সংশয়ের কথা তারা বলছেন, এটা থাকবে না। এ সংশোধনী হলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও ¯িপকার আইনের উর্ধ্বে নন, তারা আইনের লঙ্ঘন করলে বা অসদাচরণ করলে তার ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। তেমনি বিচারপতিদের জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কিভাবে বিচার করা হবে, কারা এদের তদন্ত করবেন?- সে আইনটি সংবিধান সংশোধনীর পর প্রণয়ন করতে হবে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘সরকারে আর আমাদের মন্ত্রী রাখবো না’ এমন বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, এরশাদ ও রওশন এরশাদের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এটা করলে এরশাদ ও তার দল, সঙ্গে সঙ্গে সংসদীয় গণতন্ত্র রক্ষা পাবে। তারা দেশের প্রকৃত বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হবে। দেশের মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করবে। তখন রাস্তার বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি হালে পানি পাবে না। ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার জন্য দায়ী কারা? এমন প্রশ্নের জবাবে সুরঞ্জিত বলেন, নির্বাচন মানলে নির্বাচন কমিশন মানতে হবে। তারা মানে নি। ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য সরকারি দল যতোটা না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী বিএনপি। নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা তাদের রাজনৈতিক ভুল। এ ভুলের কাফফারা তাদের দিতে হচ্ছে। কৃষক লীগের অর্থ সম্পাদক নাজির মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, সাম্যবাদী দলের নেতা হারুণ চৌধুরী প্রমুখ।