বিদায় ভেট্টরি
স্পোর্টস ডেস্ক:
চশমা পরা নিপাট ভদ্রলোক। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে কিংবদন্তিতুল্য। ডেনিয়েল ভেট্টরি। জানাই ছিল, বাঁহাতি স্পিনারের বিদায়ের সুর বাজছে। মঙ্গলবার অকল্যান্ড বিমানবন্দর থেকে সেই সুরই ভেসে এল। যার অর্থ চিরদিনের জন্য ক্রিকেট কিডস গুছিয়ে রাখছেন ভেট্টরি। মাঠে তার পদধূলি আর কখনোই পড়বে না। তাই বিশ্বকাপ ফাইনালটাই হয়ে থাকলো ভেট্টরির শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। একই সঙ্গে যবনিকাপাত ঘটলো তার ১৮ বছরের ক্যারিয়ারেরও। অকল্যান্ড বিমানবন্দরে ভেট্টরি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফাইনালই ছিল আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে এটা ছিল দারুণ এক সুযোগ। তবে গত ছয় সপ্তাহ ধরে আমরা যেভাবে খেলেছি তাতে আমি গর্বিত।’ ৩৬ বছর বয়সী ভেট্টরি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছিলেন ১৯৯৭ সালে। যার শেষটা হলো ২০১৫ বিশ্বকাপ দিয়ে। বিদায়টা আরও রঙিন হতে পারতো যদি কাপটা উঠতো ব্রেন্ডন ম্যাককালামের হাতে। তারপরও যেটা হয়েছে সেটিই বা কম কিসে! নিউজিল্যান্ড যে এরআগে কখনোই বিশ্বকাপ ফাইনালের মুখ দেখেনি। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি (১১৩) টেস্ট খেলা ক্রিকেটার ভেট্টরি। টেস্টে তার উইকেট সংখ্যা ৩৬২টি। টেস্ট ক্রিকেটে ৪০০০ রান এবং ৩০০ উইকেট পেয়েছেন এমন অলরাউন্ডারের সংখ্যা তিনজন। কপিল দেব, ইয়ান বোথাম এবং ভেট্টরি। ওয়ানডেতে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন সাবেক নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। ২৯৫টি ওয়ানডে খেলে ভেট্টরি উইকেট তুলে নিয়েছেন ৩০৫টি। সেরা বোলিং ফিগার ৭ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট।
২০১৫ বিশ্বকাপ নিয়ে মোট পাঁচবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন ভেট্টরি। এরমধ্যে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে একটি ম্যাচও খেলা হয়নি। ২০০৩-২০১৫, চার বিশ্বকাপে ৩২ ম্যাচ খেলে ভেট্টরি তুলে নিয়েছেন ৩৬টি উইকেট। এরমধ্যে ১৫টিই এবারের বিশ্বকাপে।
২০০৭ সালে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের কাছ থেকে নেতৃত্বের বাটনটা নিয়ে টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৩২ ম্যাচে, ওয়ানডেতে ৮২টিতে। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেট টি-টোয়েন্টিতে ৩৮টি উইকেট পেয়েছেন ৩৪ ম্যাচে।
চোট থেকে ফিরে বিশ্বকাপে খেলাটা সহজ ছিল না। ভেট্টরি সেই কঠিন কাজটাই করেছেন সহজভাবে। ক্যারিয়ারজুড়ে কিউইদের হয়ে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন ভেট্টরি। যার স্বাক্ষর তিনি রেখে গেছেন টেস্টে ছয়টি সেঞ্চুরি করে।
ভেট্টরি টেস্ট ক্রিকেটকে শেষ বলে দিয়েছিলেন ২০১২ সালে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে তিনি টেস্টে ফেরেন গত বছরের নভেম্বরে শারজায়, পাকিস্তানের বিপক্ষে। কারণটা ছিল বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে তৈরি করা। সাফল্যও পেয়েছেন। দলকে ফাইনালে তুলতেও অবদান রেখেছেন। কিন্তু অধরা বিশ্বকাপ ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হলো না। তাই আর সব কিউই সাবেকদের মতো তাকেও বিশ্বকাপ না জেতার আক্ষেপ নিয়েই ক্রিকেট ছাড়তে হলো।