Connecting You with the Truth

বিভিন্ন সংকটে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিপাকে গরীব ও দুস্থ রোগীরা

medicle hospital pictureফরিদপুর থেকে হারুন-অর-রশিদ ঃ
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী ওষুধসহ চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত উপকরণের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে,ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ চিকিৎসা সেবা। শিগগিরই এ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে হাসপাতালটিতে বড় ধরণের মানবিক বিপর্যয়ের আশংখা করা হচ্ছে। গত ২০ দিনের বেশী সময় ধরে এই সংকট চলছে বলে জানা যায়। যত দিন যাচ্ছে সংকট ততো বাড়ছে। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ায় রোগী ও তাদের স্বজনদের বাইরে থেকে বাড়তি দামে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন গরিব ও দুস্থ রোগীরা।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসক, সেবিকাসহ জনবলেরও অভাব রয়েছে। ফলে বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে রয়েছে শয্যা সংকট। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় রোগীদের মেঝে কিংবা বারান্দায় রেখে সেবা দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে হাসপাতালের নলকূপগুলোতে অতিরিক্ত আয়রণ থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে রোগী ও স্বজনরা নিরাপদ পানি পানসহ গোসল ও প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছেন না।হাসúাতালটির ইলেকট্রেশিয়ান কাম সাব-এসিসট্যেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ওবায়দুল হক দেওয়ান বলেন, হাসপাতালে সাধারন রোগী ও কর্মকর্তা কর্মচারিদের সুপেয় পানি সংকট প্রকট ধারণ করেছে। তিনি আরো জানান, এই নিয়ে একাধিকবার মন্ত্রী মহোদয়, পৌর মেয়র, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্ববধায়ক এবং গণপূর্ত বিভাগকে বারবার অবহিত করা সত্বেও অদ্যবধি এর কোনো সুরাতহাল হয়নি। কিন্তু বিষয়টি অস্বীকার করে হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক শফিকউল¬াহ বলেন, আমরা এ ব্যাপারে একাধিক বার চেষ্টা করা সত্ত্বেও সুপেয় পানির লেয়ার না পাওয়ায় সমস্যাটির সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না।তবে, এসমস্যা সমাধান কল্পে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প¬ান জরূরী বলেও কর্তৃপক্ষ মনে করছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৮৫ সালে ভিত্তিপ্রস্থ স্থাপনের পর ১৯৯৫ সালের ৩০ শে মে ২৫০ শয্যা নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির যাত্রা। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে শয্যা বাড়িয়ে ৫০০তে উন্নীত করা হয়। কিন্তু এখনো কার্যক্রম চলছে আগের জনবল দিয়ে। অথচ এ হাসপাতালে প্রতিদিন সেবা নিতে আসেন ফরিদপুর ছাড়াও পাশের রাজবাড়ী, যশোর, মাদারিপুর, গোপালগঞ্জ, ঝিনাইদাহ, মাগুরা ও শরীয়তপুর জেলার অনেক রোগী।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বর্তমানে হাসপাতালে প্রাণ রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ও প্রয়োজনীয় স্যালাইনসহ নিত্যপ্রয়োজনী মেডিকেল সরঞ্জামাদির তীব্র সংকট চলছে। এতে গরিব ও দুস্থ রোগীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। সরকারি হাসপাতালে এসে তাদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে রয়েছে জনবল সংকট। ফলে সেবা দিতে চিকিৎসক ও সেবিকাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সদর উপজেলার সি এ্যান্ড বি ঘাটের সোনা মিয়া (৩৫) , ঝিনাইদহর বিমল কুমার লস্কর , ফরিদপুরের কানাইপুরের নবী মিয়া, মাথার সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া সরোয়ারসহ আরো কয়েকজন জানান, সরকার বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের কথা বললেও হাসপাতালে প্যারাসিটামল, মেট্রিল ছাড়া কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না। অনেকে অভিযোগ করে বলেন দামী ঔষধ রোগীদের না দিয়ে ডাক্তাররা সেগুলো বাহিরে বিক্রি করে। ফলে এ সব প্রয়োজনীয় ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। তারা আরো জানান, আমরা গরিব মানুষ বলেই সরকারি হাসপাতালে আসি। কিন্তু এখানে এসেও টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আমরা চাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
কর্মরত সেবিকারা জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসে। কিন্তু সে অনুপাতে এখানে চিকিৎসক, কিংবা সেবিকা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক শফিকউল¬াহ জানান, ৫০০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০০ রোগী আসে। এর মধ্যে অর্ধেক আসে গুরুতর সমস্যা নিয়ে। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় তাই রোগীদের মেঝে কিংবা বারান্দায় চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সরবরাহ ঘাটতির কারণে ওষুধের সাময়িক সমস্যা হয়েছে। এটি দ্রুত সমাধান করা হবে। এছাড়া সুপেয় নলকূপ স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Comments