বেনাপোল কাষ্টমস কর্মকর্তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা
বেনাপোল প্রতিনিধি: দেশের বৃহত্তম স্থল বন্দর বেনাপোলের কাষ্টমস হাউজের ৪ নং শুল্কায়ন গ্রæপের রাজস্ব কর্মকর্তা ও হেডকোয়ার্টার সুপার উত্তম কুমার সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, খারাপ আচরণসহ ব্যবসায়ীদের নানা হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।উর্ধতন কর্মকর্তাদের ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। কাস্টমস কমিশনারসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে তার গভীর সম্পর্কের কারণে সাধারন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করতে সাহস পান না।
জানা গেছে, ৪ নং শুল্কায়ন গ্রæপের কাজ হয়ে থাকে বাংলাদেশ কাস্টমস ট্যারিফ ফাস্ট সিডিউল-২০১৫-১৬ এর চ্যাপ্টার ৭১ থেকে ৮৪, ৮৬ ও ৮৮ থেকে ৯৮ পর্যন্ত। অর্থ্যাৎ ন্যাচারাল অব কালচারেড পেয়ারলেস, প্রিকুয়াস অর সেমি প্রিকুয়াস স্টোনস. মেটালস, ইমিটেশন জুয়েলারী, আয়রন এন্ড স্টীল, আর্টিক্যালস অফ আয়রন এন্ড স্টীল, কপার এন্ড আর্টিক্যালস দেয়ার অফ, নিকেল এন্ড আটিক্যালস দেয়ার অফ, এলোমিনিয়াম এন্ড আর্টিক্যালস, ফয়েল, শীট, টুলস, মেটাল, অপটিক্যাল, মিউজিক্যাল ইন্সট্রোমেন্ট, ফার্নিচার, বেডিং , মেটারেসেস, টয়েস, গেমস এন্ড স্পোর্টস, ব্যাগেজসহ বিভিন্ন মেশিনারীসহ তার পার্টস।
তিনি এসব পণ্য চালানের প্রতিটি বিল অব এন্টির বিপরীতে সিএন্ডএফ এজেন্টের কাছ থেকে ৮শ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ আদায় করে থাকেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তার টেবিলের সামনে আমদানি পণ্য ছাড় করাতে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সিএন্ডএফ কর্মচারিরা। যারা তার চাহিদামত টাকা বা ঘুষ দিতে অনিহা প্রকাশ করেন তিনি সে সব বিল অব এন্ট্রিতে স্বাক্ষর করেন না। এ ছাড়া উল্টো নোট দিয়ে বিল অব এন্ট্রি উপরের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দেন। প্রতিবাদ করলে তিনি মারমূখী আচরণ ও বিল অব এন্ট্রি ছুড়ে ফেলে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার হয়রানির কারনে বেনাপোল বন্দরের রাজস্ব দিন দিন কমে যাচ্ছে। ব্যবসায়িরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এ বন্দর থেকে।
কাস্টমস সুত্র জানায়, কাষ্টমসের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে যে সমস্ত অবৈধ ঘুষের টাকা এবং বিভিন্ন সংস্থার লোকদের ম্যানেজ করার জন্য যে টাকা লেনদেন হয় হেডকোয়ার্টার সুপার হিসেবে উত্তম কুমার সমাদ্দারের হাত দিয়ে হয়ে থাকে। এছাড়াও কাস্টমসের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কর্তাদের বিমানের টিকিটসহ বিভিন্ন খাতের লাখ লাখ টাকা লেনদেন তার হাত দিয়েই। আর এ কারণে উর্ধতন কর্মকর্তারা তাকে ভালো জায়গায় পোস্টিং দিয়ে রেখেছেন।এ ভাবে তিনি প্রতি মাসে বেনাপোল কাষ্টমস হাউস থেকে লাখ লাখ টাকা অবৈধ ভাবে আয় করছেন।
তিনি বেনাপোলে যোগদান করার পর ২ নং শুল্কায়নের রাজস্ব কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়। এখান থেকে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় বেনাপোল চেকপোষ্ট কাষ্টমসে। সেখানে দায়িত্ব থাকা অবস্থায় তার নামে ভারতে স্বর্ণ পাচারকারীদের সহযোগিতার অভিযোগ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশের পর তাকে চেকপোষ্ট থেকে বদলী করে বেনাপোল কাষ্টমস হাউজে আনা হয়। পরে তাকে ৪ নং শুল্কায়ন গ্রæপে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর সাথে তাকে হেড কোয়ার্টার সুপারের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক সিএন্ডএফ কর্মচারি জানান, কাস্টমস সুপার উত্তম কুমার সমাদ্দারের অত্যাচারে এ গ্রæপে কাজ করা যাচ্ছে না। সে ঘুষের জন্য ব্যবসায়ীদের সাথে খারাপ আচরন,নানা হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের খারাপ বাক্য বিনিময় এর ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। তিনি কারো কোন কথা শুনেন না। সে যেটা বলবেন সেটাই শুনতে হবে। এ ছাড়াও তিনি তার গ্রæপের যে ক‘জন সহকারি রাজস্ব অফিসার রয়েছেন তাদেরও নানা ভাবে বদলীর হুমকি দিয়ে থাকেন।আর সে বিভিন্ন সময় বলে থাকেন এনবিআরের চেয়ারম্যান নাকি তার খুব কাছের আত্মীয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এক সিএন্ডএফ এজেন্টের মালিক জানান, তার আচরণ কমিশনার ও জেসির মত। কারণ তিনি হেড কোয়ার্টার সুপার ও কাস্টমসের থলিরদার। কমিশনার ও জেসির সাথে সুসম্পর্ক থাকায় তিনি এ সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, কাষ্টমসের হয়রানি এবং ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করতে পারলে রাজস্ব আদায়ের গতিশীলতা ফিরে আসবে। এখানে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের চেয়ে দেশের স্বার্থ দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে উত্তম কুমার সমাদ্দারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেক সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকদের টাকা দিতে হয়। বড় সাহেবদের বিমানের টিকিট কেটে দিতে হয়। এ টাকা কি বেতন থেকে দিব। আপনাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আপনাদের মত লোকদের দিচ্ছি। এছাড়া কাস্টমসের উর্ধতন কর্মকর্তারাও আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকে। আপনি যত খুশি লেখেন। আমাকে সরানোর ক্ষমতা কারো নেই। কর্মকর্তারা বুঝে শুনেই আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের নির্দেশ আমি পালন করছি।এ ব্যাপারে বেনাপোল কাষ্টমস কমিশনার এ এফ এম আব্দুল্লাহকে ফোন করলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। আমি জরুরি মিটিংয়ে আছি। ঘুষ লেনদেন সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না।