Connecting You with the Truth

মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদন্ড বহাল

mir kasem_95188নিজস্ব প্রতিবেদক: জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বেঞ্চ আজ এ রায় দেয়। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। এটি আপিলে সপ্তম মামলা যার চুড়ান্ত রায় হলো।
আপিলের রায়ে বলা হয়, আসামিপক্ষের আনা আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হয়েছে। প্রসিকিউশন আনীত অভিযোগের মধ্যে ৪, ৬ ও ১২ নং অভিযোগ থেকে মীর কাশেম আলীকে খালাস এবং ২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মীর কাশেম আলীকে ট্রাইব্যুনালে দেয়া দন্ড বহাল রাখা হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদন্ড সর্বোচ্চ আদালতও বহাল রেখেছে। রায়ে প্রত্যাশিত ফল পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধকালীন ছাত্রসংঘের নেতৃত্বে থেকে যে সব যুদ্ধাপরাধী পাকবাহিনীর সহযোগী আলবদর বাহিনীতে ছিলেন তাদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সর্বোচ্চ দন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্রসংঘের ওই সময়ের সেক্রেটারী জেনারেল মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকেও সর্বোচ্চ দন্ড দেয়া হয়েছে।
এটর্নি জেনারেল বলেন, ১১ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়েছে। এ অভিযোগে রয়েছে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা। কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আপিলের ওপর আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার জন্য আজ ৮ মার্চ দিন ধার্য করা হয়েছিল।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মীর কাশেমের আপিল মামলাটির শুনানি শুরু হয়। আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষে ৭ কার্যদিবসে এ মামলার শুনানি ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাশেম আলীর পক্ষে এডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর এ আপিল দায়ের করেন। আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাশেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।
মামলায় মীর কাসেমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৪টি অভিযোগ আনা হয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশন আনীত ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মীর কাশেম আলীর দোষ প্রমাণিত হয়েছে। তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে এসব অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনালের রায়ে অব্যাহতি দেয়া হয়। প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে তাকে ২০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাকে ৭ বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ১৪ নম্বর অভিযোগ ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এই ৮টি অভিযোগে তাকে সর্বমোট ৭২ বছর কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। ১১ নম্বর অভিযোগে রয়েছে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে মীর কাশেমকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। ১২ নম্বর অভিযোগে রয়েছে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। ১১ ও ১২ নং অভিযোগ ছাড়া বাকি ১২টি অভিযোগই অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ মীর কাশেমের বিরুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র আলবদর বাহিনীর চট্রগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান, তা ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণিত হয়। আজ আপিলের রায়েও তা প্রমাণিত হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতার করা হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
মীর কাশেম আলীর রায়কে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে সুপ্রীমকোর্টের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রমনা জোনের ডিসি আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের জানান, সুপ্রীমকোর্টের প্রধান ফটক, মাজারগেট ও বার কাউন্সিল গেটে সাধারণ মানুষের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

Comments
Loading...