মেহেরপুরে আত্বসাতকৃত উপবৃত্তির টাকা ফেরৎ দিলেন প্রধান শিক্ষক
জাহিদ মাহমুদ, মেহেরপুর: মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তির আত্বসাতকৃত টাকা অবশেষে ফেরৎ দিলেন প্রধান শিক্ষক কাজি মতিনুল ইসলাম। অভিভাবকদের আন্দোলনের মূখে টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য হলেন স্কুলে প্রধান শিক্ষক। আজ রবিবার সকাল নয়টার সময় স্কুল প্রাঙ্গনে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তির পরিপৃর্ন টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়েছে। সকালে সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আশাফুর দোলা ও রাধাকাক্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইসমাইল হোসেনের উপস্থিতিতে এই টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়।
সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আশাফুর দোলা জানান, জেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে বিদ্যালয়ের ৪১৮ জন শিক্ষার্থীর মাঝে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি শিক্ষার্থীকে তার প্রাপ্য টাকা দেওয়া হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক যে টাকা কেটে নিয়ে ছিল সেই টাকা গুলো তার কাছ থেকে ফেরৎ নেওয়া হয়েছে। ৪১৮ জন শিক্ষার্থীর মাঝে উপবৃত্তির ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ছয়শত টাকা বিতরণ করা হবে তিনি জানান।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইসমাইল হোসেন জানান, শনিবার উপ বৃত্তির টাকা বিতরণের সময় কোচিং ফি সহ বিভিন্ন ফি দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক কাজি মতিনুল ইসলাম প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্ষন্ত কর্তন করে উপবৃত্তির বাকী টাকা ছাত্রদের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে অভিভাবকরা তাকে অবরদ্ধ করে রাখে। আজ সকাল থেকে স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের মাঝে কর্তনকৃত টাকা ফেরৎ দেওয়া হচ্ছে।
স্কুল কমিটির সদস্য ও জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য সাজু আহম্মেদ জানান, প্রধান শিক্ষক কাজি মতিনুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক মমতাজ উদ্দিন শুধু উপবৃত্তির টাকা আত্বসাত না তারা বিদ্যালয়ের অনেক অনিয়মের সাথে জড়িত আছে। আমরা অভিযুক্তদের শাস্তি চাই। উপবৃত্তির আত্বসাতকৃত টাকা বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক জুয়েল রানা সহ গ্রামের গন্যমান্য ব্যাক্তিরা।
আত্বসাতকৃত টাকা ফেরৎ পাওয়া ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী জুলেখা খাতুন জানায়, গতকাল প্রধান শিক্ষক আমার কোচিং ফ্রি সহ চারশত টাকা কেটে নিয়ে ৮শত টাকা দিয়েছিল। আজ বাকী চারশত টাকা ফেরৎ দিয়েছে। বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ফয়সাল আহম্মেদের পিতা মিনারুল ইসলাম জানান, সকালে প্রধান শিক্ষক আমার ছেলেকে পাঁচশত টাকা ফেরৎ দিয়েছে। গতকাল এই টাকা কেটে নিয়েছিল প্রধান শিক্ষক। আত্বসাতকৃত টাকা ফেরৎ দেওয়ার বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কাজি মতিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস,এম তৌফিকুজ্জামান জানান, সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে কর্তনকৃত উপবৃত্তির টাকা ফেরৎ দেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট আমরা খুলনা বিভাগীয় অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবে হেড কোয়াটার।
প্রসঙ্গত রাধাকাক্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপ বৃত্তির টাকা নিয়ে প্রধান শিক্ষকের দুনীতির প্রতিবাদে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র ও অভিভাবকরা অবরুদ্ধ করে রাখেন প্রধান শিক্ষককে। শনিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকাক্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কাজি মতিনুল ইসলামকে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র, অভিভাবকরা দুই ঘন্টা তার অফিস রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণীর ৪১৮ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে উপ বৃত্তির টাকা বিতরণের সময় কোচিং ফি সহ বিভিন্ন ফি দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক কাজি মতিনুল ইসলাম প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্ষন্ত কর্তন করে নেয়।