যশোরে হেযবুত তওহীদের বিশাল কর্মীসভা
যশোরে হেযবুত তওহীদের বিশাল কর্মীসভা
ইসলামের সুমহান আদর্শ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান
নিজস্ব প্রতিবেদক:
হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেছেন, উগ্রবাদ, ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতা রুখতে ইসলামের সুমহান আদর্শ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এসময় তিনি উগ্রবাদিদের বিরুদ্ধে জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে কর্মীদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান।
গতকাল যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মীসভায় তিনি এ আহ্বান জানান। যশোর জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি মোহাম্মদ জহির রায়হানের সভাপতিত্বে কর্মীসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। এদিন সকাল ১০টায় পবিত্র কোর’আন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। এসময় হাজারো কর্মী সমর্থকের উপস্থিতিতে জেলা পরিষদ মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন,আজকে পৃথিবীতে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার হচ্ছে, সীমান্তে সীমান্তে সংঘর্ষ, যুদ্ধ-রক্তপাত ঘটছে। পৃথিবীর কোথাও আজ শান্তি নেই। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলো এসবের বলির পাঠা হচ্ছে। যার ফলে দেশের রাজনীতিতেও অস্থিরতা বিরাজ করছে, ভঙ্গুর অর্থনীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম রেকর্ড বেড়েছে, সামাজিক অপরাধ আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি ঘটছে। এই সুযোগে কিছু ধর্মব্যবসায়ী, যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতির ফায়দা লুটতে চায়, উগ্রবাদি যেসব গোষ্ঠী দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায় তারা সরব হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে হেযবুত তওহীদ ইসলামের সুমহান আদর্শ মানুষের সামনে তুলে ধরছে। আমরা বলছি, আল্লাহর দেওয়া দীনুল হক মানবজীবনে যদি কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় তবে মানুষ শান্তি পাবে, পৃথীবিতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, মানুষের অর্থনৈতিক সংকট দূর হবে। এখন যারা আন্তরিকভাবে মনে-প্রাণে চায় আল্লাহর দেওয়া দীন মানবজীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক, তাদেরকে অবশ্যই একটা কথার উপরে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেটা হচ্ছে আল্লাহ ও তার রসুলের হুকুম ছাড়া আর কারো হুকুম মানবো না। এই ঘোষণা দিয়েই আরবের জাহিলিয়াতের যুগে রসুল (সা.) সাহাবীদের তওহীদের উপরে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। এরপর সেই ঐক্যবদ্ধ সাহাবীদের রসুল (সা). কঠোর শৃঙ্খলা শিক্ষা দিয়েছেন, তাদেরকে একজন নেতার আনুগত্য করার শিক্ষা দিয়েছেন। যাবতীয় শিরক-কুফর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জীবন-সম্পদ উৎসর্গ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। ফলে তারা জীবনের সর্বস্ব কোরবানি করে, শত্রুর আঘাতে জর্জরিত হয়ে আল্লাহর দেওয়া দীনুল হক অর্থাৎ শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন। এরফলে সমগ্র আরব উপদ্বীপে এমন ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, মানুষ দরজা খুলে ঘুমাত, চুরি ডাকাতির ভয় ছিল না। সারা গায়ে অলংকার পরিহিত অবস্থায় একা একজন নারী শত শত মাইল পথ চলে যেত; সম্পদ বা ইজ্জত হারানোর ভয় ছিল না। জীবন-সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আদালতে মাসের পর মাস কোনো মামলা আসত না। মাপে কম দেওয়া বা খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার চিন্তাও লোকে করত না। রাষ্ট্রের কর্মচারীরা ঘুষ-দুর্নীতি থেকে ছিলেন মুক্ত। মানুষের অভাব দূর হয়ে গেল, মদ্যপান বন্ধ হল, মানুষ সুস্থচিন্তার অধিকারী হল। পারিবারিক জীবনে দাম্পত্য কলহ দূর হয়ে সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হল। সম্পত্তির উত্তরাধিকারীরা ন্যায্য অধিকার পেল। অশ্লীলতা, ব্যভিচার বন্ধ হয়ে মানুষ পবিত্র জীবনযাপন করতে থাকল।
তিনি আরো বলেন, আজকে ইসলামের সেই প্রকৃত আদর্শ হারিয়ে যাওয়ার ফলে আলেম নামক এক শ্রেণির লোক ধর্মকে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা ধর্মীয় লেবাস ব্যবহার করে উগ্রবাদী, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে তা কোর’আন-হাদিসের নাম বলে চালিয়ে দিচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানকে ভুলখাতে প্রবাহিত করে তাদের ব্যক্তিস্বার্থ, রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করছে। এখন হেযবুত তওহীদ যখন ইসলামের সেই প্রকৃত আদর্শ নিয়ে মাঠে নেমেছে তখন এই উগ্রবাদী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে নেমেছে। ওয়াজ মাহফিলের নামে সমাবেশ করে, মসজিদের মিম্বরের মতো জায়গায় বসে তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার, গুজব রটনা করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ধর্মব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সর্বদা সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। তওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য অতীতে সাহাবীরা যেভাবে নিজেদের কোরবানী দিয়েছেন, সেভাবে নিজেদের জীবন কোরবানি দেওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে, পারস্পরিক ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এই উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যে কোন আঘাতে হতোদ্যম না হয়ে, হতবাক না হয়ে সবর অবলম্বন করতে হবে। কেউ যদি কোথাও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন, কোন ষড়যন্ত্রকারী যদি হেযবুত তওহীদের নামে মিথ্যাচার করে গুজব রটনা করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তবে সঙ্গে সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করবেন।” তিনি কর্মীদের আরও বলেন, “অন্যরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও আমরা তাদের ফাঁদে পা দিব না। তবুও আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। তবে আমাদেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আমাদের অফিস, ঘরবাড়ি, জানমাল, কল-কারখানা যা কিছু আছে সকল কিছু ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার নৈতিক অধিকার আমাদের রয়েছে। সে জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হবেন।”
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় আমির মো. নিজাম উদ্দিন, খুলনা-১ বিভাগের আমির মো. শামসুজ্জামান মিলন, খুলনা বিভাগীয় সমন্বকারী আজমল হোসাইন, ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি নুহু মুন্সি, খুলনা জেলা সভাপতি মো. আমিন হোসাইন, সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি মো. এস এম নুর আলম, মাগুরা জেলা সভাপতি বিএম শামীম আশরাফ প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যশোর জেলা হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মেহেদী।