রাজবাড়ীর পাংশায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে কাঠপোড়ানো ইটখোলা
রিয়াজুল করিম, রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে ইটখোলা। এছাড়া ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের খেলাধূলাসহ ইটভাটার ধোয়ায় শারীরিক সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে তারাপুর দাখিল মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোট জমির পরিমান এক একর ২১ শতাংশ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে দুইশ ৭০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১৬জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত। এছাড়া তিনজন কর্মচারী রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিদ্যালয়ের ১৫ শংতাশ জমিতে ইট তৈরী করা হয়। ইটতৈরীর কারনে ওই স্থানটি মাঠের অন্য অংশের তুলনায় নিঁচু।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাংশা-বাহাদুরপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে হাবাসপুর ইউনিয়নে তারাপুর দাখিল মাদ্রাসার সীমানা ঘেঁষে এএমবি ব্রিকস। ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। দুই পাশ দিয়ে সারি সারি বিভিন্ন গাছের কাঠ সাজানো রয়েছে ইটপোড়ানোর জন্য। তবে কোন কয়লা ভাটার আশেপাশে দেখা যায় নাই। মাদ্রাসার মাঠের একপাশে শ্রমিকেরা বিশ্রাম নিচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মাঠের একটি অংশ জুড়ে কাচা ইট সাজানো। ভাটা থেকে ইঞ্জিনচালিত স্থানীয় বিভিন্ন অবৈধ যান বাটাহাম্বার, নছিমন ধূলা উড়িয়ে উচ্চ শব্দে ইট নিয়ে যাচ্ছে। পাশেই শ্রেণিকক্ষে শ্রেণিকার্যক্রম সম্পন্ন করছে শিক্ষার্থীরা।
সুরজ আলী খান, আহসান হাবীব সহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, মাঠে ইট তৈরীর কারনে আমাদের খেলার মাঠটি অনেক ছোট। আমরা ঠিকমতো খেলাধূলা করতে পারি না। ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার সময় বল গেলে আমাদের সঙ্গে ভাটার লোকজন খুব রাগারাগি করে। আর বর্ষার সময় ইট তৈরীর স্থানে পানি জমে থাকায় ইটভাটা বন্ধ থাকলেও আমরা কোনো সময়েই ওই স্থানটি ব্যবহার করতে পারি না।
শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান, নাহিদ হাসান অভিযোগ করে ইটপোড়ানোর সময় অনেক গন্ধ বেরোয়। সেই সঙ্গে ধোয়া। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। সেই সঙ্গে হয় অনেক শব্দ দূষন। এছাড়া মাঠে ইট তৈরীর সময় মাঝেমধ্যেই শ্রমিকেরা উচ্চ স্বরে গান গায়, আবার কখনো কখনো নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে। এতে করে আমাদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়।
মাদ্রাসার সুপার আবদুল কাদের জানান, ইটভাটার কাছে আমাদের কিছু জমি অনেক আগে থেকে লিজ দেওয়া রয়েছে। আমরা এক দাতার কাছে কিছু অনুদানের আশ্বাস পেয়েছি। টাকা হাতে পেলে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাচীর নির্মাণ করবো। তবে ইটভাটার বিষয়ে আমরা বিভিন্œ সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি।
ইটভাটার মালিক রবিউল ইসলাম ছগিরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, এই সিজনে কয়লা আনা হয় নাই। ব্যবসায় এখন ডাল সিজন চলছে। আমরা ইটভাটাটি সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করতেছি। তাছাড়া মাদ্রাসার সঙ্গে আমরা বেশ কিছু জমি বদল করে নিয়েছি। বাকী অংশের জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত টাকা দেই। আর আমি অল্প কয়েক বছর ধরে ইটভাটা পরিচালনা করছি। এরআগে আমার ভাই এই ইটভাটার ব্যবসা করতেন।
মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, ইটভাটার কারনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের সমস্যা হয়। বিষয়টি ইটভাটার মালিকের সঙ্গে স্থানীয় বিভিন্ন প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। এতে করে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হলেও কার্যকর তেমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায় নাই।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুল হক জানান, ইটভাটার ধোয়ায় শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্ট, ব্রকাংকাইটিসসহ দীর্ঘ মেয়াদী নানা ধরনের রোগ হতে পারে। এসব রোগ এখনো সনাক্ত না হলেও পরবর্তীতে আক্রান্ত হওয়ায় খুব ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া এ ধরনের পরিবেশে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক বর্ধন ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে এ ধরনের কারখানা না থাকাই ভালো।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম খান জানান, মাদ্রাসার পাশে ইটভাটার বিষয়টি জানি। কিন্তু মাদ্রাসার মাঠের জমি লিজ নিয়ে ইট তৈরী করার বিষয়টি জানা ছিলো না। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।