রাজ্যের স্বার্থ দেখেই তিস্তা চুক্তি : মমতা ব্যানার্জি
পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি সম্ভব নয় বলে জানালেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতার জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে মমতা একথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন।
চ্যানেলটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ এডিটর সুমন দে’র এক তিস্তা সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে মমতা জানান ‘রাজ্যের স্বার্থে যা করার আমি তাই করবো। আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি। বাংলাদেশকে যতটা সাহায্য করার দরকার করবো কিন্তু সেটা রাজ্যকে বাঁচিয়ে’।
মমতা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার ব্যাক্তিগত সম্পর্ক খুব ভাল, রাজনৈতিক সম্পর্কও খুব ভাল। আর সে কারণেই ৬৬ বছরের পুরোনো সমস্যা স্থলসীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছি। কিন্তু সব কিছুতো আর পাওয়া যায় না। যেখানে রাজ্যের স্বার্থ রয়েছে সেখানে রাজ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ আমি যেহেতু এজায়গায় (মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে) আছি। মানুষতো আমাকে ধরবে। বাংলার স্বার্থে আমি মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বা বেইমানি করতো পারি না। কিন্তু যেখানে আমি পারবো এবং দুই দেশেরই ভাল হবে সেটা আমি অবশ্যই করবো’।
যদিও এদিন প্রথমে তিস্তা নিয়ে কোন কথাই বলতে চান নি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান ‘এবিষয়ে আমি একটি কথাও কথা বলতে চাই না’। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে তিস্তা সহ অন্যান্য বিষয়ে না জানানোর জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মমতা।
তিনি বলেন ‘ওরা (কেন্দ্র) আমাদেরকে না জানিয়ে ইচ্ছেমতো সবকিছু করে। রাজ্যকে জানানোর প্রয়োজন বলেই মনে করে না। কাজেই আমার সঙ্গে এবিষয়ে কোন আলোচনা হয় নি, তাই না জেনে বলবো না’।
একসময় উত্তেজিত হয়ে মমতা বলেন ‘আমি তো শুনেছি ২৫ মে বাংলাদেশে গিয়ে তিস্তা নিয়ে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হবে। কিন্তু আমি তার কিছুই জানি না। আমি পত্রিকাতেই দেখেছি যে ওরা (হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল) আসছেন। কিন্তু আমি এখনও পর্যন্ত সরকারি তরফে কোন চিঠি পাই নি। এমনকি দিল্লিতে শেখ হাসিনার ভারত সফরে পশ্চিমবঙ্গ সহ সীমান্তবর্তী পাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের থাকার ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল সেব্যাপারেও তার কিছু জানা নেই। এমনকি এই বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য কেন্দ্রের তরফে এখনও পর্যন্ত কোন আমন্ত্রণ জানানো হয় নি বলে এদিন দাবি করেন তিনি। সবশেষে তিনি বলেন ‘সবকিছু রেডি করে আমাকে যদি স্ট্যাম্প মারার জন্য আমন্ত্রণ জানায় তখন আমিও ‘সরি’ বলে দেবো। কারণ আমাকে প্রথমে রাজ্যের স্বার্থটাই দেখতে হবে।
আগামী ৭ এপ্রিল ভারত সফরে আসছেন শেখ হাসিনা। এই সফরকালে ভারতের সঙ্গে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হতে পারে বলে খবর। যদিও সবচেয়ে বেশি নজর থাকবে অমীমাংসিত তিস্তা পানি বন্টন চুক্তির বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু সেই সফরের আগে তিস্তা নিয়ে মমতা যেভাবে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করলেন তাতে এই চুক্তির বিষয়ে খুব একটা অগ্রগতি হবে না বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞ মহলের।
উল্লেখ্য ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং’এর সফরসঙ্গী হিসেবে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার নাম থাকলেও রাজ্যের স্বার্থের প্রশ্ন তুলে শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করেন মমতা। তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে একেবারে শেষ সময়ে বেঁকে বসায় তা আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। ফলে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়েন মনমোহন সিং। হতাশ হয় প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশও।
এর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ২০১৫ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানে সেদেশ সফর করেন মমতা। এরপর ওই বছরের মে মাসেই ভারতের সংসদে স্থলসীমান্ত চুক্তি সংশোধনী বিল পাশ হয়। সমাধান হয় প্রায় ৬৬ বছরের পুরোনো একটি সমস্যার। এর পরই জুন মাসে ঢাকায় যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সফরেও সঙ্গী হন মমতা। দুই দেশের মধ্যে বহু বকেয়া সমস্যা মিটলেও এখনও কাঁটা হয়ে রয়েছে তিস্তা। যদিও ঢাকা সফরে গিয়ে দুইবারই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তিস্তার জট কাটার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন মমতা।