রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণে আর কত প্রহর অপেক্ষা?
আনোয়ার হোসেন আকাশ, রাণীশংকৈল প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠ রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজ এখন পর্যন্ত জাতীয়করন ঘোষন না হওয়ায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণে আর কত প্রহর অপেক্ষা? এলাকাবাসির প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজটি জাতীয়করণ ঘোষনা করা হোক, করতে হবে। কলেজে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, সুধিমহলের মাঝে হতাশার ছাপ দেখা গেছে। সকলে আশার চাহনি নিয়ে সরকার বাহাদুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কবে অত্র কলেজকে জাতীয়করণ ঘোষনা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ডাক্তার, প্রকৌশলী, উকিল, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, রিক্সা-ভ্যানচালক, দিনমজুর, সুধিমহল সহ সকলে ক্ষোভের সাথে বলেন, রাণীশংকৈলে যদি কোন কলেজকে জাতীয়করন ঘোষনা করতে হয় তাহলে সার্বিক বিষয়ে গুনগুত মান বিচার বিশ্লেষন করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করন হওয়া উচিত। কলেজটি স্বাধীনতা পরবর্তী সময় (১৯৭২) থেকে এ পর্যন্ত মান-সম্মত শিক্ষা দিয়ে আসছে। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাণীশংকৈলের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ কেন্দ্র ও অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছে। যে প্রতিষ্ঠানের উপর ভর করে রাণীশংকৈল থানা স্থাপন করা হয়েছে পরবর্তীতে উপজেলা নামকরণ করা হয়। নামকরণের রূপকার হল রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজ। নিঃস্বার্থ নিবেদিত প্রাণ হিসেবে যারা কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, যে শ্রমে ছিলনা কোন খাদ অথচ আজ মনে হয় তাদের শ্রমের প্রতি অমর্যদা করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয়করনের তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে যা শিক্ষার জন্য দূর্ভাগ্য। তারা আরও বলেন, আমাদের মনে হয় ডিগ্রী কলেজ কোন ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়েছে। এ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রাণীশংকৈল উপজেলা ও আ’লীগের প্রাণ পুরুষ আ’লীগ দলীয় এমপি মরহুম আলী আকবরের সম্মানের প্রতি অসম্মান দেখানো হয়েছে।
কৃষক, দিনমজুর, ভ্যানওয়ালা, উচ্চ বিত্ত ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সকলের অভিমত রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজ সর্বাগ্রে জাতীয়করণ হওয়া উচিত। অত্র কলেজে ৭টি বিষয়ে অর্নাস কোর্স চালু রয়েছে। ৫.৫৬ একর জমির উপর এক বিচিত্র রূপ নিয়ে শিক্ষা কাযক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও কলেজের রয়েছে তিনটি দ্বিতল ভবন, তন্মধ্যে ১টি দ্বিতল ভবন নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত। ১টি একতলা ভবন এবং ৪ তলা ভবনের নির্মান কাজ শেষ পর্যায়ে চলছে।
এছাড়াও রয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের ১টি মসজিদ, ১৩টি দোকানঘরসহ তিনতলা আবাসিক হোটেলের নির্মান কাজ প্রক্রিয়াধীন। প্রায় সাড়ে চারশ ফুট ইট প্রাচীর দিয়ে ঘেরা কলেজ ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের প্রাচীর সংলগ্ন ফুটপাতের রাস্তাটি কলেজ অর্থায়নে পাকা করে রাখা হয়েছে। বড়ই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ রয়েছে কলেজ ক্যাম্পাসে। আমগাছ, কাঁঠালগাছ, মেহগনি, নিম, ডাবসহ নানা জাতীয় বৃক্ষাদি প্রাকৃতিক রূপ ছড়িয়ে আছে। যে রূপ আকৃষ্ট করে সর্বস্তরের মানুষকে। কলেজ ক্যাম্পাসে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ভাষা আন্দোলনের স্বাক্ষর বহন করে দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে উপজেলা প্রশাসন ও স্থাণীয়ভাবে ২১ শে ফেব্রুয়ারী, ২৬মার্চ ও ১৬ ডিসেম্ব জাতীয দিবসগুলো পালন করা হয় কলেজ প্রাঙ্গনে। শহিদ মিনারে প্রশাসনিক রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে শহীদদের স্মরনে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হয়। এ কলেজটিতে ডিগ্রী, এইচএসসি ও অর্নাস পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবেও পরীক্ষা নিয়ে আসছে। এ কলেজে রয়েছে আধুনিক বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, নিজস্ব লাইব্রেরী, বিএনসিসি, মেয়েদের রোভার্স। সপ্তাহে একদিন মেয়েদের স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস দেওয়া হয়। কলেজের উদ্যোগে বির্তক প্রতিযোগিতা, অভিভাবক সমাবেশ, নবীনবরন সহ জ্ঞান ও শিক্ষা মূলক অনেক কমসূচী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যা অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয় কিনা এমন নজির মিলেনা।
অন্যদিকে অত্র প্রতিষ্ঠানে ১০ দিন ব্যাপী বৈশাখী মেলা সংস্কৃতির ধারক বাহক হিসেবে স্বাক্ষর বহন করে আসছে। প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় তাফসীর মাহফিল। কলেজ প্রাঙ্গণে প্রতি বছর সনাতন ধর্মীয় দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন এখানে। অত্র কলেজে ৪৮৪০ জন শিক্ষার্থী বিদ্যা অর্জন করছেন। যারা পূর্বের ন্যায় দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করে দেশ-জাতীর সেবায় অগ্রনী ভ’মিকা পালন করবে। ডিগ্রী ও এইচএসি পরীক্ষায় প্রতি কছর উপজেলার সেরা ফলাফল অর্জন করে আসছে। তারপরও রাণীশংকেল ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করনে এত বাধার কারণ কি প্রশ্ন গণমানুষের। এলাকারবাসির প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজকে জাতীয়করন করতে হবে, জাতীয়করণ করা চাই, করা হোক।
এ প্রসঙ্গে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, সাবেক সাংসদ হাফিজউদ্দীন আহম্মেদ, কলেজের ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তায় অত্র কলেজকে অর্নাস কোর্স এ উন্নিত করা হয়েছে। আমরা মনে করি কোন কলেজ জাতীয় করণ করতে হলে যে সব নীতিমালার প্রয়োজন আমাদের কলেজে সে সব নীতিমালা সমুহের কোন কমতি নেয়। সরকার বাহাদুর যদি আমাদের কলেজকে জাতীয়করনের মর্যাদা না দেন সেটি হবে আমাদের জন্য দূর্ভাগ্য।