লালমনিরহাটে খ্রিষ্টান আখ্যা দিয়ে হেযবুত তাওহীদের দুই সদস্যকে মারধর, থানায় অভিযোগ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটে খ্রিষ্টান আখ্যা দিয়ে হেযবুত তাওহীদের দুই সদস্যকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এতে লালমনিরহাট সদর থানাধীন পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের লুৎফর রহমান নামে এক সদস্য মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর অবস্থায় লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেলে আহত লুৎফর রহমান বাদী হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

থানায় অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওমর ফারুক জানান, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট সদর থানাধীন পঞ্চগ্রাম ইউনিয়েনের কিষামত নগরবন্দ এলাকার নুরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ভোরে মারা যান। নিহত ব্যক্তি হেযবুত তাওহীদের সদস্য হওয়ায় পাশ্ববর্তী বড়বাড়ি ইউনিয়নের সাদেকনগর এলাকার একই সংগঠনের সদস্য লুৎফর রহমান ও রইচ উদ্দিন এদিন সকাল ৮টার দিকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে নিহতের বাড়ি যান।

এ সময় নিহত ব্যক্তির ভাই হক জামালের যোগসাজশে আমজাদ হোসেন, জাহিদ হোসেন, আবুল হোসেন ও শাহ জামালসহ আরও কয়েকজন উগ্রপন্থীরা হেযবুত তাওহীদ সদস্য লুৎফর ও রইচ উদ্দিনকে খ্রিষ্টান আখ্যা দিয়ে বাড়িতে অবরুদ্ধ করে এলোপাথাড়ি মারধর করে। এতে মাথায় সজোরে আঘাত পেয়ে জখম হয়ে গুরুতর আহত হন লুৎফর। এ সময় তাদের সাথে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে হামলাকারীরা। পরে ঘটনাস্থলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এসে তাদের উদ্ধার করে এবং আহত অবস্থায় লুৎফর রহমানকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে লুৎফর রহমান লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। পরে ওই দিন বিকেলে আহত লুৎফর রহমান বাদি হয়ে আমজাদ হোসেন, হক জামালসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এ ঘটনায় স্থানীয় পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, সকালে নিহত নুরুজ্জামানকে দেখতে এসে ভুল বোঝাবুঝির কারণে লুৎফর ও রইচ উদ্দিন নামের দুইজন বয়জ্যেষ্ঠ লোককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেছি। লুৎফরকে খ্রিস্টান আখ্যা দিয়ে মারধর করা খুবই অন্যায় হয়েছে। কেন তাদেরকে আঘাত করা হলো। কারা আঘাত করলো এবং এর ইন্ধনদাতা কে? বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখতে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দিয়েছি। যেহেতু নিহত নুরুজ্জামানের দাফন বিকেলে সম্পন্ন হবে তাই এমন শোকাহত অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দেয়া হয়নি। তবে যারা লুৎফরকে মেরেছে তাদের শাস্তির মুখোমুখি করতে পরবর্তীতে বসে বিচার করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে হেযবুত তাওহীদের লালমনিরহাট জেলা সভাপতি একরামুল হক জানান, আমরা হেযবুত তাওহীদ দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইসলামের প্রকৃত রুপরেখা মানুষের মাঝে উপস্থাপন করে আসছি। আমাদের এই কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্ঠী নানা সময়ে অপপ্রচারের মধ্যদিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করে থাকে। আজ আমাদের এক সদস্য মৃত্যুবরণ করে। পার্শ্ববর্তী এলাকার অপর দুই সদস্য নিহত নুরুজ্জামানকে দেখতে গেলে ঠিক সে রকমই একটা ঘটনা ঘটায় একশ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। এ সময় কয়েকজন লেবাসধারী নুরুজ্জামানের পরিবারকে উস্কে দিয়ে আমাদের বয়জ্যেষ্ঠ দুই সদস্যকে মারধর করে গুরুতর আহত করেছে। এ ঘটনায় আহত লুৎফর রহমান বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ ঘটনায় উস্কানীদাতাসহ হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

Comments
Loading...