শালিস ডেকে গৃহবধূকে মারধরের অভিযোগ
হাতীবান্ধা সংবাদদাতা, লালমনিরহাট:
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় শালিসি বৈঠকে ডেকে ভাতিজা বউ কাজল আক্তার রিতাকে (২৪) মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে আ.লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূরল আমিনের বিরুদ্ধে। আহত ওই গৃহবধূ বর্তমানে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ঘটনায় রবিবার সকালে ওই গৃহবধূর বাবা আবুল কালাম বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এর আগে শনিবার রাতে উপজেলা সির্ন্দুনা ইউনিয়নের পূর্ব সিন্দুর্না গ্রামে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূরল আমিনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার পূর্ব সিন্দুর্না গ্রামের সিন্দুর্না ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নূরল আমিন(৫০), এছাড়া তিনি সিন্দুর্না ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার বড় ভাই নুর মোহাম্মাদ বাবলু (৫৫), নূর মোহাম্মদ বাবলু উপজেলার আলহাজ সমশের উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। একই উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামের আব্দুর রউফ(৪৫) ও তার ছেলে রুবেল মিয়া(২৮)। এছাড়া সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূরল আমিনের চাচাতো ভাই আব্দুর রউফ ও রুবেল মিয়া আহত গৃহবধূ কাজল আক্তারের স্বামী।
জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে অভিযুক্ত রুবেলের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় কাজল আক্তার রিতার সাথে। তাদের সংসারে ৭ মাস বয়সী এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। হঠাৎ এরই মাঝে তাদের দুজনের মাঝে দ্বন্দ্ব বাধে। সেই দ্বন্দ্ব রুপ নেয় মামলায়। যা বর্তমানে চলমান। তারই প্রেক্ষিতে বিষয়গুলো স্থানীয়ভাবে আপোষ-মীমাংসার জন্য গত শনিবার রাতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূরল আমিনের বাড়িতে শালিসি বৈঠকও বসে। সেই বৈঠকের বিচারক নূরল আমিন। তিনি রিতার বাবাকে বলেন যে ছেলে সংসার করবে না। কিছু চাওয়া পাওয়ার থাকলে চাইতে পারেন। এতে তারা রাজি হন না। ফলে এ নিয়ে দু’পক্ষের মাঝে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে রিতার স্বামী রুবেল রিতার বাবার উপর হামলা মারধর শুরু করে। তা দেখে রিতা এগিয়ে গেলে নূরল আমিন রিতার চুলের মুঠি ধরে মারধর শুরু করে ও বাবলু ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে জখম করে।
এ বিষয়ে আহত ওই গৃহবধূ বলেন, যদি সঠিক বিচার না করে তাহলে বিচারে ডাকলো কেন? বিচারে ডেকে ওরাই বলে ছেলে সংসার করবে না। তাই আমি একটু ওর সাথে কথা বলতে চাইছি। কিন্ত আমিন চেয়ারম্যান ছেলের সাথে কথা বলতে দিবে না। এ নিয়ে আমার বাবার সাথে তর্ক শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে রুবেল আমার বাবাকে মারধর শুরু করে। আমি এগিয়ে গেলে আমিন চেয়ারম্যান আমার চুলের ধরে মারধর করে ও তার ভাই নুর মোহাম্মদ চুরি দিয়ে আমার হাতে আঘাত করে। যেখানে চারটি সেলাই দিয়েছে। আমি তাদের বিচার চাই।
এ বিষয়ে আহত গৃহবধূর বাবা আবুল কালাম বলেন, বিচারে ডেকে আমিন চেয়ারম্যান কোন কথা শুনেই বলে যে ছেলে সংসার করবে না। তোর কি চাওয়া পাওয়া বল। এমনকি তারা যা বলবে তাই। এতে আমি রাজি না হলে এ নিয়ে তাদের সাথে বাকবিতণ্ডা চলে। এর এক পর্যায়ে তারা সবাই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আমার মেয়েকে মারধর শুরু করে। আমি থানায় অভিযোগ করেছি, এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিন্দুর্না ইউপির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূরল আমিন বলেন, আমি বিচার ডেকেছি ঠিকই। তবে কারো চাচা হয়ে নয়, একজন বিচারক হয়ে। আর তারা যে অভিযোগ করে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেখানে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। আর আমি কেনই বা তাদের মারতে যাবো।
এ বিষয়ে জানতে গৃহবধূর স্বামী রুবেল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দিলে এক ব্যক্তি কলটি রিসিভ করে রুবেল নেই বলে জানায়। তার পরিচয় জানতে চাইলেই কলটি কেটে দেন।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. আল আকসা বলেন, আহত গৃহবধূকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।