”শিক্ষাকে আমরা একটা ব্যবসায় পরিণত করেছি”
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আমরা শিক্ষাকে একটা ব্যবসায় পরিণত করেছি। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক যারা; এই শিক্ষকেরা এখন নিজ প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নেয়ার চেয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নেয়ার জন্য ঝুঁকে যান। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষার মান নিয়ে দু-একটি কথা বলতে চাই? আমার এই কথা শুনলে অনেকে অখুশি হবেন, সেটা হলো শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারী প্রত্যেকের সর্বত্র অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার কি মান ছিল, আজকে আমরা কোথায় চলে যাচ্ছি। আমরা এই রকম একটা প্রতিষ্ঠানকে (ঢা.বি) কি রক্ষা করতে পারব? তিনি বলেন, শিক্ষার আলো জ্বালাতে হলে গুরুজনদের, যেভাবে আমরা শ্রদ্ধা করতাম এটা বজায় রাখতে হবে। আমাদের শিক্ষকবৃন্দ তাদের কাছে অনুরোধ করব, গুরুজনদের কাছ থেকে আমরা যে শিক্ষা পেয়েছি, সেই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের দেয়ার জন্য। যখন দেখি একজন ছেলে বা মেয়ে এই প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে আইন পেশায় যায়, তখন তাকে একটার বেশি দু’টি প্রশ্ন করলে তার মুখ থেকে কোনো কথা বের হয় না। তখন খুবই কষ্ট লাগে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৯৭১ সালে জগন্নাথ হলে যত রক্ত ঝরেছে, আর কোনো হলে এত রক্ত ঝরেনি। মুক্তিযুদ্ধের কিছু কাগজপত্র আমাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল। সেখানে দেখেছি কি মর্মান্তিক, নৃশংসভাবে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল? তাদের রক্ত যদি না ঝরত, তাহলে হয়তো আমরা এত তাড়াতাড়ি স্বাধীনতা পেতাম না। তাদের প্রতি রইল আমার গভীর শ্রদ্ধা। দেশের প্রতিটি আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ হলের যেসব শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরেছে, তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, বাঙালি জাতি এখন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি শত্রু সম্পত্তি আইন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুখে অসাম্প্রদায়িক আর কাজে অন্য কিছু করলে তো চলবে না। এই জায়গায় আরো সততা, আরো নিষ্ঠা আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে সরকারকে। বলতে বলতে বলা শেষ হয়েছে। এখন রাস্তায় নামতে হবে।
অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কানুতোষ মজুমদারের সভাপতিত্বে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আআমস আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক অজয় রায়, আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ এমপি, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. অসীম সরকার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য জগন্নাথ হলের প্রাক্তন ছাত্ররা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে পুনর্মিলনীতে যোগ দেন।