শীতের প্রস্তুতি
শীত আসি আসি করছে। গভীর রাতের হিমেল হাওয়ায় নিজেকে গুটিয়ে রাখা, ভোরে ঘাসের ডগায় জমা হওয়া শিশির বিন্দু -এ সবই শীতের আগমনী বার্তার জানান দিচ্ছে। প্রায় দরজার কাছে চলে এসেছে শীত। কিন্তু তার আগে তো কিছু বাড়তি প্রস্তুতি দরকার। বিভিন্ন রোগবালাই, ত্বকের যত্নসহ পোশাক-আশাক, ঘরদোর ও অন্যান্য সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে এখন থেকেই সাবধার হতে হবে। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নিই শীতের আগাম প্রস্তুতি সম্পর্কে।
শীত আসলেই দেখবেন- ত্বক বা চর্মের উপরিভাগ ফেটে যাচ্ছে বা শুকিয়ে যাচ্ছে, ঠোঁট শুকিয়ে যাবে। শরীরে একটু রুক্ষ রুক্ষ ভাব থাকবে। তার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী যেমন- পেট্রোলিয়াম জেলি, স্নো ক্রিম, লিপজেল, অলিভ অয়েল, বডি লোশন ইত্যাদি কিনে রাখুন।
শীত আসার আগেই শীতের জামাকাপড়গুলো ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে নিন। কারণ, অনেকদিন তুলে রাখা শীতের পোশাক না ধুয়ে কখনোই পরা ঠিক না। আর হ্যাঁ, অবশ্যই সব সময় আলমারির ভেতর ন্যাপথলিন দিয়ে রাখবেন।
পরিবারের নবজাতকের জন্য বা বয়ষ্কদের জন্য জামা কাপড় বা প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ভুলবেন না। কেননা শীত তাদেরকে বেশি আক্রমণ করে। এর কারণ হচ্ছে পাতলা বা শুষ্ক ত্বকের অধিকারী ব্যক্তির শীত সহ্যক্ষমতা কম। কাজেই পরিবারের অন্য সদস্যদের যত্ন নেবার পাশাপাশি তাদের বিশেষ যত্ন নিন।
এছাড়া ঠাণ্ডাজনিত জ্বর, সর্দি কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদির জন্য আদা-লেবুর চা, হাল্কা গরম পানি, মধু খুব উপকারী। প্রত্যহ সকালে মুখ ধোওয়ার পরে ১-৩ ভাগ হাল্কা গরম পানিতে ১ চা চামচ মধু ও এক কোওয়া ছোট লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে শরীরে ঠাণ্ডাজনিত সব সমস্যা দূর হয়।
শীত মোকাবেলার জন্য গরম জিনিসপত্র যেমন ল্যাপ, কম্বল, কাঁথা, জাজিম ইত্যাদি তৈরি না থাকলে এখুনি তৈরি করতে দিন।
শীতকাল নানা রকম তাজা শাক সবজির মৌসুম। এ সময়ে বাজারে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, শিম, মূলা, লাউ শাক, কুমড়া শাক ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় যেগুলোতে প্রচুর ভিটামিন থাকে। তাই শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণের জন্য এ সময় প্রতিদিন নিয়ম করে শাক সবজি খান।
কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করা লিনেন বা উলের সোয়েটার, চামড়ার জ্যাকেট, মাফলার, কানটুপি, লেপ, কম্বল বা চাদর গুলোর যত্ন নেয়া শুরু করুন এখন থেকেই। আর এজন্য এগুলো পুনরায় ব্যাবহার উপযোগী করতে এগুলোকে রোদে শুকিয়ে নিন।
শীতকালে সরিষার তেল ও কালিজিরা খুব উপকারী। সরিষার তেল রান্নায়, বিভিন্ন পদের ভর্তায় ব্যবহার ছাড়াও অনেকে গায়ে মাখার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে পারেন। কালিজিরা ভর্তা এবং বিভিন্ন রেসিপিতে ব্যবহার করা যায়।
অনেকদিন ফেলে রাখার কারণে গরম কাপড়গুলো পোকা-মাকড় কেটে ফেলতে পারে। এজন্য ওই জায়গাগুলো রিপু করে নিলে তা পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠবে।
যেসব ঘরে কাচের জানালা আছে, শীতের সময় তাতে অবশ্যই ভারী পর্দা ব্যবহার করতে হবে। যদি জানালার কোনো কাচ ভেঙে বা নষ্ট হয়ে যায়, তবে দ্রুত সারিয়ে নিতে হবে।
ব্লেজার, কোট, জ্যাকেট ভালো করে নরম ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে তারপর ব্যবহার করুন।
শীতের সময় ঘরের মেঝে যেহেতু ঠাণ্ডা থাকে, তাই শীত আসার আগেই শতরঞ্জি কিংবা সামর্থ্য থাকলে ফ্লোরম্যাট কিনে রাখা ভালো।