শেরপুরে এক শিশুর রহস্যজনক মৃত্যুতে হয়রানীর শিকার একটি নিরীহ পরিবার
শেরপুর প্রতিনিধি: নুরে আলম (১২) নামে এক শিশুর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে চলছে নানা প্রোপাগান্ডা। এতে হয়রানীর শিকার হলেন একটি নিরীহ পরিবার। ইতোমধ্যে ওই পরিবারের প্রধান ও এলাকার মাতাব্বর ৮৫ বছরের বৃদ্ধ ওমেদ আলী মারা গেছেন। মৃত্যুর পরও প্রোপাগান্ডাকারীরা তার জানাযা ও লাশ দাফনে নানাভাবে বাধাঁ দিয়েছে। এতে মৃত্যের সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা পুলিশের ভয়ে জানাযা ও দাফনে অংশ গহণ করতে পারেনি। বরং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলা বাজরা ক্ষান্ত হয়নি। তাদের বাড়ি ঘরে প্রবেশ করে সকল মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এ অভিযোগ মৃত ওমেদ আলী সাহেবের সন্তান ও এলাকাবাসীর। রহস্যজনক শিশু মৃত্যুর এ ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুর সদর উপজেলার মুন্সীরচর গ্রামে। এ ঘটনায় আতংক আর উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন পরিবারটি।
শেরপুর সদর উপজেলার মুন্সীরচর পূর্বপাড়া এলাকার গোপন মিয়ার প্রতিবেশি এলাকার মাতাব্বর উমেদ আলী। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত চলছিল পূর্ব শত্রুতা। গত ৩১ জানুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় গোপন মিয়া তুচ্ছ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে ছেলে নুরে আলমকে মারপিট করে। পরের দিন সকালে আশপাশের লোকজন গোপন মিয়ার ঘরের পাশে কাঠাল গাছের ডালে শিশুটিকে ঝুলন্ত দেখতে পায় এলাকাবাসী। এ সময় শিশুটির গলায় ছিল একটি জাম্ফার পেচাঁনো। এটি ছিল ওই গাছের ডালের সাথে ঝুলন্ত। পুলিশ ওই গাছ থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। সংগ্রহ করেন লাশে সুরতহাল। মেডিকেল রিপোর্টের জন্যে এ লাশ প্রেরণ করেন ময়না তদন্তে। এ ব্যাপারে থানায় রেকর্ড হয় অপমৃত্যুর মামলা।
পরে একটি কুচক্রী মহল নুরে আলমের বাবা গোপন মিয়াকে বাদী করে প্রতিবেশি মতি মিয়া (৪৫), মতি মিয়ার বাবা ৮৫ বয়সের বৃদ্ধ উমেদ আলী, তার ভাই মেহেব মিয়া (৩৭), ভাইবউ নাসরিন বেগম (২৮), স্ত্রী মোর্শেদা বেগম (৪০), পুত্র মামুন মিয়া (২৬) ও মেয়ে মালেকা খাতুন (২০)সহ ৭ জনকে আসামী করে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করে। এ মামলাটি রেকর্ড হয় গত ৪ ফেব্র“য়ারি।
এ শিশুকে ‘ঘাড় মটকে হত্যা’র আলামত পাওয়া গেছে। এটি ময়না তদন্তে প্রাথমিক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পুলিশও এগোচ্ছে সেই গতিতে। তবে কারা এ হত্যা করেছে? এ প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে এলাকাতে। জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মোবারক হোসেন জানান, মৃত নুরে আলমের ময়না তদন্তের আংশিক রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্টের পর দেওয়া হবে চুড়ান্ত রিপোর্ট। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই জীবন চন্দ্র বর্মণ জানান, এখনো ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
মৃত ওমেদ আলীর পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাদেরকে ফাঁসাতে ছেলেকে হত্যা করে নিজ ঘরের পাশে কাঠাল গাছে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। এলাকাবাসী জানান, এ মামলার আসামিরা এমন অপরাধ করতে পারেনা বলে। এছাড়া দীর্ঘদিন যাবত ওমেদ আলী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনার আগে মতি মিয়া তার অসুস্থ্য বাবা ওমেদ আলীকে নিয়ে নিয়ে ঢাকায় একটি মেডিকেলে ছিল। গত ৩ মার্চ তার বাবা ওমেদ আলী ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে মারা যান। পরে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরাস্থানে এনে দাফনেও নানা ধরণের হুমকি দেয় ওই চক্রটি। অবশেষে গ্রামবাসী এর তীব্র প্রতিবাদ করে। এতে পিছু হটে। পরে ওইদিন রাতে তার লাশ পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হয়। মরহুমের জানাযায় বিপুল সংখ্যক লোক অংশ গ্রহণ করেন। জানাযায় অংশ গ্রহনকারীরা বলেন, তিনি একজন ভাল লোক ছিলেন। গ্রাম্য শালিসে ন্যায্য বিচার ও সামাজিক কর্মকান্ডে স্বত:স্ফুর্ত অংশ গ্রহনে তার প্রশংসা করেন অনেকে। তারা দাবি করেন এমন কাজ তিনি কখনোই করতে পারেন না। পুলিশ গভীরভাবে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে প্রকৃত ঘটনা। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তারা।