বাংলাদেশের শিল্পখাতে শ্রমিকদের অসন্তোষ যেন থামছে না। একের পর এক আন্দোলন, সড়ক অবরোধ, এবং হরতাল কর্মসূচি শুধু শ্রমিকদের নয়, পুরো সমাজকেই বিপর্যস্ত করে তুলছে। গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের বেতন, কাজের শর্ত এবং নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে যে আন্দোলন চলছে, তা এক ধরনের সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসব আন্দোলন কেন থামছে না?
প্রথমত, শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রধান কারণ হলো বেতন বকেয়া থাকা। দেশের প্রায় সব বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের বেতন সময়মতো পরিশোধ করা হয় না। কারখানা মালিকরা যখন তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হন, তখন শ্রমিকদের কাছে আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে, শ্রমিকদের মনে অস্বস্তি এবং ক্ষোভ জমে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়।
দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অভাবও একটি বড় কারণ। বহু কারখানায় শ্রমিকরা খারাপ পরিবেশে কাজ করছেন, যেখানে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। বড় বড় দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটলেও সেগুলোর পরও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের মনে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়, যার কারণে তারা বারবার আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন।
তৃতীয়ত, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক ব্যবস্থা না নেয়া। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি সচেতনতা রয়েছে, তবে সঠিক সময়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা এবং মালিকদের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা না হওয়ার কারণে শ্রমিকরা বারবার রাস্তায় নামছেন। গাজীপুরের বিভিন্ন আন্দোলন তার বড় উদাহরণ। বেতন পরিশোধের জন্য সরকার বারবার আশ্বাস দিলেও, তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় শ্রমিকদের হতাশা বাড়ছে।
এছাড়া, শ্রমিকদের দাবি পূরণে কর্তৃপক্ষের অপ্রতুল মনোযোগও ক্ষোভের কারণ। শ্রমিকেরা তাদের অধিকারের জন্য যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেন, তা ক্ষতিকর অবস্থায় পরিণত হতে সময় নেয় না। সময়মতো বেতন না দেয়া, কাজের পরিবেশের উন্নতি না হওয়া এবং শ্রমিকদের প্রতি উদাসীন মনোভাব তাদের আন্দোলনে আরও গতি আনে।
তবে, প্রশ্নটা থেকেই যায়—শ্রমিক অসন্তোষ কেন থামছে না? এর উত্তর হলো—মালিকদের দিক থেকে দায়িত্বহীনতা, সরকারের অপ্রতুল পদক্ষেপ এবং শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণ না হওয়া। এসব সমস্যার সমাধান না হলে শ্রমিক আন্দোলন থামার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না। সরকারের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের দাবি মেটানো, যাতে এই অস্থিরতা বন্ধ করা সম্ভব হয়।