Connecting You with the Truth

সাকিব-মুস্তাফিজের চূড়ান্ত লড়াই আজ

sm

রসিকতা করে টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা একদিন বললেন, ‘আমি আইপিএলে খেলা দেখি মাত্র ৮ ওভার। চার ওভার সাকিবের বোলিং, চার ওভার মুস্তাফিজের বোলিং।’ আসলে বাংলাদেশে আইপিএলের যে জনপ্রিয়তা তা তো এই ৮ ওভারকে ঘিরেই। তাই আইপিএলের অ্যালিমিনেটর ম্যাচটা কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম সানরাইজার্স হায়দরাদের মধ্যে হলেও এটি আসলে ‘সাকিব বনাম মুস্তাফিজ’ ম্যাচ। আর এক ম্যাচেই ৮ ওভার দেখার সৌভাগ্য হবে এ দেশের ক্রীড়ামোদীদের!

অবশ্য একে সৌভাগ্য না বলে দুর্ভাগ্য বলাই ভালো! কেননা বাদ পড়তে হবে যে কোনো একজনকে। যার দল হারবে তারই শেষ ম্যাচ। কোয়ালিফায়ারে দুই বাংলাদেশি মুখোমুখি হোক এটা কেউ চাননি। হয়তো সবাই আশা করেছিলেন দুই বাঙালির দেখাটা যেন শেষ ম্যাচেই হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আগেই দেখা হওয়ায় ফাইনালের আগেই বাদ পড়তে হবে সাকিব কিংবা মুস্তাফিজের যে কোনো একজনকে। আগামীকালের ম্যাচে কাকে সমর্থন দেবেন বাংলাদেশের সমর্থকরা! সাকিবকে, নাকি মুস্তাফিজকে?

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচেও মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই বাংলাদেশি। সে ম্যাচে অবশ্য কলকাতার জয়টাই কাম্য ছিল অনেকের— সেটাই স্বাভাবিক ছিল। কেননা হায়দরাবাদের প্লে-অফ আগেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। আর হারলেই বাদ পড়ে যেত সাকিবের কলকাতা। তার চেয়ে ভালো শেষ ম্যাচে নাইটরা জেতায় দুই দলই সুযোগ পেয়েছে প্লে-অফে।

কাল কলকাতা ও হায়দরাবাদের সমর্থনে বাংলাদেশের সমর্থকরা যে দুই ভাগে বিভক্ত হবেন তা অনুমান করার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই! এবারের আসরে সাকিব শুরু থেকেই নিজের স্বাভাবিক পারফরম্যান্স দেখাতে পারছেন না। তবে খুব খারাপ করছেন তাও নয়। কিন্তু মুস্তাফিজ প্রথম ম্যাচ থেকেই যেন মহাতারকা। সাদামাটা একটি দল নিয়েও সানরাইজার্স যে প্লে-অফে উঠেছে তার পেছনে বড় ভূমিকা কাটার মাস্টারের। সাতক্ষীরার এই তরুণ পেসার এখন ব্যাটসম্যানদের কাছে মূর্তিমান এক আতঙ্ক।

মুস্তাফিজকে এখনো বুঝতে পারেন না কোনো ব্যাটসম্যান। তার কাটার, স্লোয়ার, ইয়র্কার একেবারেই দুর্বোধ্য। ডেথ ওভারে মুস্তাফিজের তুলনা হয় না। হায়দরাবাদের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ইনিংসের ১৭ ও ১৯তম ওভার যেন মুস্তাফিজের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। কলকাতার বিরুদ্ধে সর্বশেষ ম্যাচেও তো শেষ দুই ওভারে রান দিয়েছেন তিন করে। অথচ ওই সময় মারকুটে ইউসুফ পাঠান ছিলেন উইকেটে। তারপরও মুস্তাফিজের বলে সুবিধা করতে পারেননি।

মিডিয়ার কাছে অকপটে ডেভিড ওয়ার্নার বলেছিলেন, ‘মুস্তাফিজ হচ্ছেন ডেথ ওভারের সম্রাট।’ তবে শুরুর ম্যাচগুলোর চেয়ে এখন মুস্তাফিজের পারফরম্যান্স কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে। খারাপ হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। সাতক্ষীরার অজপাড়া গাঁয়ের এই ছেলে পরিবারকে ছাড়া কত দিন আর একা একা বিদেশবিভূঁইয়ে চাঙ্গা থাকতে পারবেন। বাড়ি আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছেন কাটার মাস্টার।

খেলার মাঠে মুস্তাফিজকে প্রাণবন্ত মনে হলেও ভারতে ভীষণ একাকিত্ব বোধ করছেন মুস্তাফিজ। কারও সঙ্গে ঠিকমতো মিশতেও পারছেন না। ভাষার কারণেও তাকে বিপত্তিতে পড়তে হয়। কারও সঙ্গে প্রাণ খুলে আড্ডা দিতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে মাঠের খেলায় মনোযোগ দেওয়া কঠিন। তারপরও মুস্তাফিজ দাপুটে পারফরম্যান্সই দেখাচ্ছেন।

১৪ ম্যাচে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। এখনো সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার সুযোগ রয়েছে তার সামনে। আইপিএলে এখন পর্যন্ত ১৯ উইকেট নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর চাহাল। ১৮ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মুস্তাফিজের সতীর্থ সান রাইজার্সের ভুবনেশ্বর কুমার। মুম্বাইয়ের ম্যাকক্লেঘন নিয়েছেন ১৭ উইকেট। মুম্বাই প্লে-অফে উঠতে না পারায় ম্যাকক্লেঘনের সামনে আর সুযোগ নেই। তাই চাহাল ও ভুবনেশ্বর যদি একটু খারাপ করেন সেক্ষেত্রে মুস্তাফিজই হয়ে যেতে পারেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।

তবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার না হলেই বা কি? মুস্তাফিজের যে নামডাক হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। সাম্প্রতিক ক্রিকেট বিশ্বে কাটার মাস্টারকে নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে হয়েছে তা অন্য কোনো ক্রিকেটারকে নিয়ে এতটা হয়েছে কি! আইসিসির বোর্ড সভাতেও মুস্তাফিজকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো ইতিমধ্যে তাকে ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, মুস্তাফিজ বাংলাদেশের গর্ব। এ ছাড়া কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা তো এখনো মুস্তাফিজের প্রশংসা করেই যাচ্ছেন। তাই কালকের ম্যাচে বাংলাদেশি ভক্তদের সমর্থনের কথা চিন্তা করলে, সাকিবের চেয়ে মুস্তাফিজের পাল্লাটাই ভারী থাকার কথা। কেননা আইপিএলে সাকিবের সামনে কোনো মাইলফলক অপেক্ষা করছে না, কিন্তু মুস্তাফিজের সামনে রয়েছে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার দারুণ এক সুযোগ। তবে কালকের ম্যাচে কলকাতা কিংবা হায়দরাবাদ যে দলই জিতুক কিংবা হারুক, দুই বাংলাদেশি দাপট দেখাক— এমন প্রত্যাশা নিয়েই ‘পাখির চোখ’ করে টিভির সামনে বসে থাকবেন ক্রিকেটামোদীরা।

মাইলফলকের সামনে… m

সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। এখন উইকেট সংখ্যা ১৬। বেঙ্গালুরুর চাহাল ১৯ উইকেট নিয়ে শীর্ষে। তবে কালকের ম্যাচ জিতলে মুস্তাফিজের সামনে আরও একটি ম্যাচ থাকবে। আর সেটিতে জিতলেই ফাইনাল। সে দিক চিন্তা করলে চাহালের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলার সম্ভাবনা রয়েছে মুস্তাফিজের। তাই ভাগ্য সহায় থাকলে প্রথম আসরে অংশ নিয়েই আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার অনন্য গৌরব অর্জন করতে পারেন মুস্তাফিজ। বিডিপি/আমিরুল ইসলাম

Comments
Loading...