Connecting You with the Truth

সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতিতে একমত আমেরিকা ও রাশিয়া

lavrov_kerry_munich_syria_640x360_afp_nocreditআন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে যুদ্ধ চলার পর সিরিয়ায় জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী অন্তত আড়াই লাখ মানুষ নিহত ও পয়ষট্টি লাখ মানুষ বাস্তুহারা হওয়ার পর দেশটিতে যুদ্ধবিরতিতে একমত হয়েছে পরাশক্তি দেশগুলো। বিশ্বের ইতিহাসে সিরিয়া কোনো দেশ আক্রমণ করেনি বা কোনো দেশে সিরিয়া আক্রমণ না করলেও দেশটির বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ, ইসরায়েল ও পরাশক্তি দেশগুলো অস্ত্র ও লোকবল দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। এক পর্যায়ে আইএস জঙ্গিরা এ যুদ্ধে যোগ দেয়। জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এক বৈঠকে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতির জন্য একটি চুক্তির বিষয়ে সম্মত হয়েছে বৃহৎ শক্তির দেশগুলো। এটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর করা হবে।
সিরিয়ার একটি বড় শহর আলেপ্পো দেশটির সেনাবাহিনীর দখলে চলে আসে। এ পর্যায়ে সৌদি আরব সেখানে সেনা সদস্য পাঠানোর কথা বললেও তা সম্ভব হয়নি। এর পাশাপাশি সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আমেরিকা, রাশিয়া, তুরস্ক ও ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা চলে আসছিল। ইরান এ আলোচনায় এগিয়ে আসে। সিরিয়ায় যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে হাজার হাজার বাস্তুহারা মানুষের স্রোত ইতিমধ্যে ইউরোপের দেশগুলোতে যেয়ে আশ্রয়ের খোঁজে জড় হচ্ছে। সিরিয়ার আশে পাশের প্রতিবেশি দেশ যেমন তুরস্ক, সৌদি আরব, জর্ডান, লেবাননে লাখ লাখ সিরিয় উদ্বাস্তু আশ্রয় নেয়ার পর মানবিক বিপর্যয় নেমে আসার পর জাতিসংঘ কার্যত কিছুই করতে পারছে না। এমনি প্রেক্ষাপটে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে পরাশক্তিগুলো বাধ্য হল।
জার্মানির মিউনিখে এই বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন সিরিয়ার অবরুদ্ধ এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেবারও বিষয়েও তারা সম্মত হয়েছে। সে সংবাদ সম্মেলনে মি: কেরির পাশে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ এবং সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত।
মি: কেরি বলেছেন এই যুদ্ধবিরতি ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আল-নুসরা ফ্রন্টের জন্য কার্যকরী হবেনা। তিনি বলেন এই যুদ্ধবিরতির বিষয়টি বেশ কঠিন হতে পারে। কারণ এই উদ্যোগকে সবগুলো পক্ষ কতটা সম্মান করবে তার উপর সফলতা নির্ভর করবে।
অবরুদ্ধ এলাকাগুলোতে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেবার জন্য জাতিসংঘের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। মি: কেরি এবং মি: ল্যাভরভ মনে করেন সিরিয়ার সরকার এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে অতিদ্রæত শান্তি আলোচনা শুরু করা উচিত।সাড়ে চার বছরের যুদ্ধে সিরিয়া এখন বিধ্বস্ত এক দেশ।
এই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বৃহৎ শক্তিগুলো এমন এক সময়ে সম্মত হলো যখন রাশিয়ার বিমান হামলার সহায়তা নিয়ে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী আলেপ্পোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই এলাকাটি সরকার বিরোধীদের দখলে থাকলেও এর অধিকাংশ এলাকা পুনর্দখল করতে শুরু করেছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের অভিযোগ ইরানের সেনাবাহিনী ইরাক হয়ে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে। ইসরায়েলের নেতারা এর ফলে ইরান ও ইসরায়েলের সীমান্ত অভিন্ন হয়ে যাচ্ছে বলে গত সপ্তাহে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সিরিয়ার সঙ্গে ইরানের সীমান্ত না থাকলেও ইসরায়েলের সঙ্গে রয়েছে এবং সিরিয়া ও ইরাক সীমান্ত দিয়েই ইরানের সেনাসদস্য ঢুকছে বলে ইসরায়েল অভিযোগ করলেও তা নাকচ করে দিয়েছে তেহরান।
প্রায় সাড়ে বছর আগে সিরিয়ার সংঘাত শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করতে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো অনেক চেষ্টা করেছে।
কিন্তু সিরিয়ার যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশারের পক্ষে রাশিয়া সম্পৃক্ত হবার পর পরিস্থিতি দ্রæত বদলাতে থাকে। রাশিয়া বলছে জঙ্গিগোষ্ঠি ইসলামিক স্টেট বা আইএসকে লক্ষ্য করে তাদের বিমান হামলা চালানো হচ্ছে।
কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো অভিযোগ করে প্রেসিডেন্ট আসাদ বিরোধীদের লক্ষ্য করে রাশিয়া বিমান হামলা চালাচ্ছে।
গত সাড়ে চার বছরের যুদ্ধে সিরিয়ায় ৬৫ লাখ মানুষ বাস্তুুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসেবে এখনো পর্যন্ত এই যুদ্ধ আড়াই লাখ মানুষ মারা গেছে। সিরিয়া থেকে হাজার হাজার শরণার্থীর স্রোত ইউরোপের দিকে গেছে। এতদিন পরে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বৃহৎ শক্তিগুলো যে একমত হয়েছে সেটি কতটা কার্যকর হবে তা এখন দেখার বিষয়। বিবিসি বাংলা।

Comments
Loading...