স্বাধীন পতাকার নীচে দাঁড়িয়ে আজও আস্ফালন করছে রক্তলোভী হায়েনার দল
আবু নাসের হুসাইন, সালথা প্রতিনিধি:
৬৯’ এর গণ অভ্যুৎথ্বান এর পর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তীতে আমরা একটি গর্বিত ভু-খন্ড, মানচিত্রের পাতায় একটি নতুন নাম “বাংলাদেশ” পেয়েছি। ৭১-এ যোগ হলেও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির তান্ডব আজও থেমে থাকেনি। ৩০ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন পতাকার নীচে আজও দাঁড়িয়ে আস্ফালন করছে রক্তলোভী হায়েনার দল। দৌর্দন্ড প্রতাপে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্বাধীন ভূখন্ডের উপর দিয়ে তারা। মা-মাটি আর স্বাধীন মাতৃভূমির উপর বিচরন করেও ষড়যন্ত্রের কালো থাবা বিস্তার করে, শকুনেরা রক্তের নেশায় মেতে আছে। পাকিস্তানের সহযোগি রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও তাদের দোসরদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত আজও শেষ হয়নি। সে সময়ের ভয়াল দিনগুলোর কথা স্মরন করে বর্তমানের মুক্তিযোদ্ধা ও বৃদ্ধ সাধারণ মানুষেরা আঁতঙ্কে উঠে আজো। সে সব পরিবারের সদস্যরা রাজাকারের দোসরদের ভয়ে এখনও জীবনের নিরাপত্তা খুঁজে, তাদের জন্য আমাদের করনীয় কিছুই নেই- শুধু অনুশোচনা ব্যতীত।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধ-অপরাধী, নারী ধর্ষনকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রদান করবার পর এদেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু রাজাকারের দোসররা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সরলতার সুযোগে দলের মধ্যে ঢুকে মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের প্রিয় দল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক শহিদ পরিবারে পক্ষ থেকে এমনই অনেক অনুযোগ আর অভিযোগের খাতা ভারী হলেও কার্যত: আজ রাজাকারের দোসরদের ষড়যন্ত্রের চাপে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেনা বলে শহীদ পরিবার ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ।
জানা যায়, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার সময়ে ফরিদপুরের সালথা-নগরকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নারী-ধর্ষন, সংখ্যালঘু সম্পদায়ের উপর জুলুমের একাধিক ঘটনা ঘটে ছিলো। সেই সময়ে ঘাতকরা উপজেলার বল্লভদি ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের চিত্ত রঞ্জন দাসসহ অগণিত লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। চিত্ত রঞ্জন দাসের ছেলে স্কুল শিক্ষক গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, আমার বাবাকে রাজাকাররা হত্যা করে পায়ে দড়ি বেঁধে লাশ নদীতে ভাঁসিয়ে দেয়। এ ঘটনার সময় আমি আমার মায়ের গর্ভে ছিলাম। আমার বাবার মুখ পর্যন্ত আমি দেখিনি, আমার মা যুবতি বয়সেই বিধবা হয়। তিনি আরো বলেন, আমার বাবা মারা যাবার পর মা আমাদেরকে নিয়ে ভারত চলে যান, সে-খানে আমার তিন ভাই অপুষ্টিজনিত কারনে মারা যায়- আমি ছয় মাস পর জন্মগ্রহন করি। অনেক কষ্টের মাঝে আমি বড় হয়েছি।
এদিকে ৭১-এ হায়েনাদের হাতে নিহত চিত্ত রঞ্জন দাসের ৭০ বছর বয়সী স্ত্রী জোসনা রানী দাস জানান, আমি স্বামী হত্যার বিচার পেয়েছি কিন্তু সরকার থেকে যে প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়েছিলো, ৭১’এর হায়েনাদের ষড়যন্ত্রের জন্যই সরকারের দেওয়া প্রতিশ্র“তি আজও পুরণ হয়নি। কিন্তু স্বাধীন পতাকার নীচে আজও দাঁড়িয়ে আস্ফালন করছে রক্তলোভী হায়েনার দল। রাজাকারের দোসরদের সমস্ত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্র“তি পুরনের দাবি জানান তিনি। তিনি আরো জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাটির টানে আমি একমাত্র ছোট শিশু গোপালকে বুকে ধারণ করে স্বামীর ভিটায় বুক ভরা আশা নিয়ে আজো বেঁচে আছি।