হংকংয়ে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশি শ্রমিক
স্টাফ রিপোর্টার:
চীনের বাণিজ্য প্রদেশ হংকংয়ে অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য বেশিরভাগ অনুপ্রবেশকারী শেনঝেন প্রদেশকে বিরতি স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করছে। গত বছর কয়েকশ অনুপ্রবেশকারী যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিক এই পথে নৌকাযোগে হংকংয়ে প্রব্শে করেছে বলে জানিয়েছে হংকংয়ের একটি দৈনিক। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট রোববারের সংখ্যায় এক প্রতিবেদনে লিখেছে, স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা প্রথমে চীনের মূল ভূখণ্ডকেই ব্যবহার করে। এরপর তারা শেনঝেনে আসে এবং সেখানে অবস্থান করে। এখানে দালালদের ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার হংকং ডলার দিয়ে মেশিনচালিত দ্রুতগামী নৌকায় করে হংকংয়ে যায়। এই অনুপ্রবেশকারী ও পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
পত্রিকাটি বলেছে, শেনঝেনকে যাত্রাবিরতি স্টেশন হিসেবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর এদের মধ্যে চীনের বাইরে থেকে আসা মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর ৫০ শতাংশ হারে বাড়ছে। হংকংয়ে আটক হওয়া এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা থেকে এমন পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছর প্রথম ছয় মাসে হংকংয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী আটক করা হয় ২৯১ জন। আর চলতি বছর একই সময় আটকের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪৭ জনে। পুলিশের জনসংযোগ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা বেড়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি গ্রীষ্মে লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেছে। পুলিশের দৃঢ় বিশ্বাস তারা এবার লান্তাউ উপকূলের পশ্চিম ও দক্ষিণে রাতের অন্ধকারে অবতরণ করা আরো বেশি সংখ্যক অনুপ্রবেশকারীকে আটক করতে সক্ষম হবে। সূত্র আরো জানায়, প্রত্যেকটি নৌকায় ১০ থেকে ১২ জন লোক থাকে। সাধারণত তারা অবতরণ করে তাইও অথবা ফান লাউ উপকূলের কাছে। আর এরা চীনের মূল ভূখণ্ডেই কিছুদিন অবস্থান করে। তবে এটা পরিষ্কার নয় যে, ঠিক কতোজন অনুপ্রবেশকারী পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারে। অনেককে ধরে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে সোপর্দ করা হয়। এরা তুয়েন মুন ইমিগ্রেশন পার হওয়ার আগেই আটক হয়। সেখানে আশ্রয় শিবিরে অনেককে আটকে রাখা হয়। আশ্রয়প্রার্থী একজন পাকিস্তানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি শেনঝেনে তিনবার একটি বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। গত দশকে হংকংয়ে প্রবেশের জন্য তিনি এ কৌশল নিয়েছিলেন। হংকংয়ে বসবাসকারী কামাল নামে এক বাংলাদেশি বলেন, হংকংয়ে অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য তিনি শেনঝেনকে যাত্রা বিরতি স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করেন। আর দক্ষিণ এশীয়দের জন্য ভিসায় বিধিনিষেধ আরোপের পর এই কৌশল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ফ্রি প্রবেশের সুবিধা স্থগিত করে চীন সরকার। কামাল মিনতি করে বলেন, ‘দয়া করে এই অনুপ্রবেশ ঠেকান। কারণ এটি যেমন বোকামি তেমনি বিপজ্জনক।’ কারণ হিসেবে তিনি তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি দেখেছেন, হংকংয়ে আসার পর কত বাংলাদেশি মানবেতন জীবনযাপন করেন! অবশ্য হংকংয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আনাগোনা একদম ঐতিহাসিক ঘটনা। এখানে ভাগ্য বদলের আশায় দক্ষিণ এশিয়া থেকে প্রচুর মানুষ আসে। বহু বছর থেকেই এমনটি চলে আসছে। বর্তমান পরিসংখ্যানটি তারই ধারাবাহিকতা।