হজযাত্রীদের ফেলে পালালো বহু এজেন্সি
হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর বাকি মাত্র তিন দিন। শেষ মুহূর্তে রাজধানীর আশকোনার হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীদের কান্নাকাটি আর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। হজ যাত্রীদের ফেলে পালিয়েছে বহু এজেন্সি। তাদের মোবাইল বন্ধ, অফিসেও তালা। ইতিমধ্যে হজ অফিসে ৬৪টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট গাফিলাতি ও প্রতারণার অভিযোগ দাখিল হয়েছে। অনেকের ভিসা আছে কিন্তু টিকেট হয়নি। কারো কারো টিকেট থাকলেও ভিসা করেনি এজেন্সি। যাদের বিমানের টিকিট কাটা বাকি রয়েছে, তাদের হজে যাওয়া অনিশ্চিত।
এবছর ভিসা হওয়ার পরও বিমানের টিকিট না পাওয়া হজযাত্রীদের সংখ্যা বেশি। চুক্তি অনুযায়ী সব টাকা পরিশোধের পরও বহু হজযাত্রীকে ঘুরতে হচ্ছে এজেন্সি ও দালালদের পিছনে। এজেন্সিগুলোর প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক হজযাত্রী এ বছর হজে যেতে পারছেন না। আবার হজে যাওয়ার পরও সৌদিতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছেন। এজেন্সিগুলোকে ভিসাপ্রাপ্ত সব হজযাত্রীকে টিকিট নিশ্চিত করে জরুরি ভিত্তিতে সৌদি আরব পাঠানোর লিখিত নির্দেশ দিয়েছে হজ অফিস। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। তবে অনেক এজেন্সি এতে কর্ণপাত করেনি।
আজ শনিবার বিমানের শেষ ফ্লাইট। অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সৌদি আরবের কাছে আবেদন করলেও গতকাল রাত পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। হজ অফিসের তথ্য অনুযায়ী গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব যেতে পারেননি। প্লেনে না চড়া অবধি শঙ্কা কাটছে না তাদের। আজ বিমানের ৫ টি ফ্লাইট পরিচালনার কথা,যাতে সর্বোচ্চ দুই হাজার একশত জন যাত্রী যেতে পারবেন। সাউদিয়া এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট আগামীকাল শেষ হওয়ার কথা। মুল হজ হবে ৩১ আগস্ট। ১ সেপ্টেম্বর হজ হবে এমন ধারণা করে শিডিউল করেছিলো বিমান সংস্থা দুটি। এখন পড়েছে বিপাকে। কারণ শেষ মুহূর্তে জেদ্দা বিমান বন্দরে ভয়াবহ চাপ পড়েছে। সেখানে বিমান থেকে নেমে এখন ১০-১২ ঘণ্টা সময় পার করতে হচ্ছে আনুষ্ঠানিকতা-লাগেজ ও পরিবহন সংগ্রহ করতে।
এদিকে, ভিসাপ্রাপ্ত হজযাত্রীদেরকে সৌদি পাঠাতে এজেন্সি মালিকরা টালবাহানা শুরু করেছে। প্রতিটি এজেন্সি এখন এসব হজযাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা দাবি করছে। আশকোনার হজ অফিসে অভিযোগ করতে গেলে ঠিকমত অভিযোগ নেয়া তো দূরে থাক, উল্টে হজযাত্রীদের সাথে হজ অফিসের কর্মকর্তারা অশোভন আচরণ করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনেকে বলেছেন,হজ অফিসের কর্মকর্তারা অভিযোগ নেয়া তো দূরে থাক,কারো কারো সাথে মারমুখী আচরণ করছে। এদের কেউ কেউ একাধিক প্রতারক এজেন্সির নিকট থেকে ঘুষ খেয়ে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির প্রতারিত যাত্রীদের অভিযোগ নিচ্ছে না। ঘাড় ধরে বের করে দিচ্ছে। গতকাল হজ ক্যাম্পে সরেজমিনে এমন চিত্রও দেখা গেছে।
গতকাল পর্যন্ত ৬৪ টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে গাফিলতি ও প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে হজ অফিস থেকে জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো- ইউনিরুফ,আল বালাদ অভারসীজ, সাইদ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সাদমান এয়ার ইন্টারন্যাশনাল,আবকর হজ গ্রুপ,সাউথ এশিয়া ওভারসীজ, এম. এম. ট্রাভেলস, গুলশানএ মুহাম্মদিয়া ইন্টারন্যাশনাল, সানজিদ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, হাসান অভারসীজ, নিবিড় হজ ওমরাহ এন্ড টুরিজম, এম সি ও ট্রাভেলস এন্ড টুরিজম, ইকো এভিয়েশন প্রভৃতি।
হাব এর একজন কর্মকর্তা জানান,এর মধ্যে বড় প্রতারক চক্র হলো আল বালাদ অভারসীজ, সাইদ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সাদমান এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এই তিনটি এজেন্সির মালিক হলো মো. সালাম, আবু সাইদ, মো. সায়েম ও মাহবুবুর রহমান টিটু। এরা চারজনই আপন ভাই। এরা বিভিন্ন এজেন্সির নামে যাত্রী সংগ্রহ করে। প্রতিবছরই যাত্রীদের সাথে এমন প্রতারণা করে। এবারও শত শত যাত্রী ক্যাম্পে রেখে সবাই পলাতক। মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী হজযাত্রীদের অনেকেই তাদের অফিসে গিয়ে তালাবন্ধ অবস্থায় পেয়েছে। এই এজেন্সিগুলেঅর সাথে একটি প্রভাবশালী চক্রের যোগসূত্র আছে। তারা মন্ত্রণালয়কেও ’ম্যানেজ’ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বিএইচ হারুন বলেন, এখন ৬৪ এজেন্সির বিরুদ্ধে আমরা প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান,বহু হজ এজেন্সি এবার প্রতারণা করেছে হজযাত্রীদের সাথে। যাত্রীদের ঢাকায় এনে তারা বাড়তি টাকা না দেয়ায় গা ঢাকা দিয়েছে।