Connecting You with the Truth

কুড়িগ্রামে ঘর-বাড়ি হারিয়েছে ২ শতাধিক পরিবার দ্রুত সরকারী-বেসরকারী হস্তক্ষেপ কামনা

শাহ্ আলম, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে বন্যার পানি নেমে গেলেও এবারের ভয়াবহ বন্যা সর্বশান্ত করে দিয়েছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর অববাহিকার দুই শতাধিক পরিবারকে। এর মধ্যে শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি বিদ্ধস্ত হয়ে বাড়ির জায়গায় পড়ে থাকলেও শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি, গাছপালা, আসবাবপত্রসহ সব কিছুই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সর্বনাশী বন্যার পানির স্রোত। কোন কোন পরিবারের বাড়ির জায়গায় এখন অথৈই পানি।
বাঁধ ও পাকা সড়কে আশ্রয় নেয়া এসব পরিবার ভিটে-মাটিতে ফিরে সব হারানোর দৃশ্য দেখে শুধুই আর্তনাদ করেই চলেছেন।
ঘর-বাড়ি হারানো এসব পরিবারের থাকার জায়গার পাশাপাশি বাড়ি-ঘর মেরামতে সরকারী সহযোগীতা জরুরী হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি বিদ্ধস্ত ও ভেসে যাওয়া পরিবারের সংখ্যাই শতাধিক।
এছাড়াও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চর সারডোব গ্রামে ধরলার অববাহিকার তালুকদার, ফজলু, মজলুম, মনজু, মফিজুলসহ ইউনিয়নে বন্যা পানিতে ভেসে যাওয়া ও বিদ্ধস্ত হওয়া বাড়ির সংখ্যা প্রায় ৬৩টি।
সরে জমিনে দেখা যায় এসব পরিবারের কারও কারও বাড়ির চিহ্ন মাত্র নেই। অনেকের বাড়ির জায়গায় বাঁশ সমানে পানি। দেখে বোঝার উপায় নাই এখানে বন্যার আগে কোন বাড়ি ছিল। আর অনেকের বাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে বিদ্ধস্ত হয়ে পড়ে আছে। যেন বড় কোন ঝড় বয়ে গেছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এসব বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলতেই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কষ্টের বর্ণনা দিচ্ছেন তারা।
সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চর সারডোব গ্রামের বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া বাড়ির মালিক তালুকদার (৫০) সাংবাদিক দেখে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, আমার জীবনে ধরলা নদীর এমন অবস্থা দেখি নাই। তীব্র বেগে বন্যার পানি বাড়িতে ঢুকে পড়ায় কিছুই নিতে পারি নাই। শুধু বউ-বাচ্চা নিয়ে যান বাঁচিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। তারপর মুহুতেই ঘর-বাড়ি ভেসে নিয়ে গেল। বাড়ির জায়গায় এখন অথৈই পানি। থাকার জায়গাও নাই, ঘরতোলার একটি খুঁটিও নাই। এখন যে কি হবে আল্লাহই ভালো জানেন।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের আবুল হোসেন সাংবাদিকের সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাড়ি-ঘর সব ভেঙ্গে চুরে বিদ্ধস্ত হয়ে পড়ে আছে। বাড়ির চারটি ঘর ঠিক করতে অনেক টাকা লাগে। কিভাবে ঠিক করবো কোন উপায় নাই। চেয়ারম্যান চাল দিছে কিন্তু সে চাল দিয়ে ঠিক মতো খেতেই পারছি না।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ময়না বেগমের বাড়ির জায়গায় শুধু নলকুপটি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। বন্যার সময় যেখানে আশ্রয় নিয়েছে সেখান থেকে আর ফেরার উপায় নেই তার। সব হারিয়ে এখন ছেলে-মেয়েকে বাঁচানোর তাগিদে ছুটে বেড়াচ্ছেন রিলিফের আশায়।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোঃ ফেরদৌস খান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ঘর-বাড়ির তালিকা তৈরি হচ্ছে। আমরা তালিকা তৈরি করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা তালিকা তৈরির কাজ করছে। তালিকা তৈরি হলে আমরা দ্রæততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ ঘর-বাড়ির মালিকদের টিন ও টাকা দিয়ে পুর্ণবাসন করা হবে।

Comments
Loading...