Connecting You with the Truth

ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়কের ৯০ কিলোমিটার মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ!

মনিরুজ্জামান সুমন, ঝিনাইদ: ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়কের ৯০ কিলোমিটার রাস্তা মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এই মহাসড়কটি। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। অকালে প্রাণ হারাচ্ছে অনেক মানুষ আর পঙ্গুত্ব বরণ করে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে অনেকে। সেই সাথে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান করা হবে জানিয়েছে সড়ক বিভাগ।
জানা যায়, ঝিনাইদহ থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ থেকে যশোর এই মহাসড়কের প্রায় ৩০ টি স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। প্রায় ২ বছর ধরে এই সড়কটির লাউদিয়া, তেতুলতলা বাজার, বিষয়খালী এলাকা, কয়ারগাছি, বেজপাড়া, বাকুলিয়া, কালীগঞ্জের কলেজ মোড়, ব্র্যাক অফিসের সামনে, বৈশাখী পেট্রোল পাম্প এলাকা, মোবারকগঞ্জ চিনিকলের সামনে, ফুলবাড়ি, শৈলকুপার শেখপাড়া বাজার, মদনডাঙ্গা বাজার, চড়িয়ারবিল বাজার, গাড়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, ভাইট বাজার, শহরের আরাপপুর, তাসলিমা ক্লিনিকের সামনের এলাকায় বিটুমিন আর পাথর উঠে ছোট বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
এসব গর্তের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। স¤প্রতি ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের লাউদিয়া নামক স্থানে মহাসড়কের গর্ত এড়িয়ে গাড়ি চলাচল করতে গিয়ে বাস খাদে পড়ে নিহত হয় বাসের হেলপার আজাদ, আহত হয় আরও ৩ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, লাউদিয়া নামক স্থানে রাস্তায় বড় একটি গর্ত রয়েছে সেই গর্ত এড়িয়ে চলাচল করতে গিয়েই এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি নামক স্থান বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়। এমনই নিত্য দুর্ঘটনা ঘটছে ঝিনাইদহের এই মহাসড়কের প্রায় সবস্থানেই। এছাড়া প্রতিনিয়ত যান বিকল হয়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তেতুলতলা নামক স্থানে গত মাসে মহাসড়কে একটি ট্রাক বিকল হয়ে যাওয়া প্রায় ৬ ঘন্টা বন্ধ থাকে যানচলাচল। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় রাস্তা থেকে ট্রাকটি সড়ানো হলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাড়সড়কের পাঁচ মাইল নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের দুই জন কর্মকর্তা। এছাড়াও ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শক।
জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র যোগাযোগ সড়ক ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়ক। যশোর বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে ঝিনাইদহের উপর দিয়ে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের যানবাহন চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়ক দিয়ে ঢাকা, রাজশাহী, ফরিদপুরসহ জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী বাসসহ পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু রাস্তাটি ভাঙ্গার কারণে যাতায়াতের সময়ের পাশাপাশি বেড়েছে ভোগান্তি। মাঝে মধ্যে ইট-বালি দিয়ে গর্তগুলো ভরাট করা হলেও সেই মেরামত দীর্ঘ স্থায়ি হয়নি।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল গ্রামের মোটর সাইকেল চালক জহির উদ্দিন বলেন, শৈলকুপার শেখপাড়া বাজার থেকে ঝিনাইদহ শহর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়কটি সর্ম্পূণ খানাখন্দে পরণিত হয়েছে। সড়কের খারাপ অবস্থার কারণে উপজলো থেকে মোটর সাইকেলে আসা যাত্রীদরে দুর্ভোগ এখন চরম পর্যায়ে উঠেছে। জেলা শহরে আসলে রাস্তার ঝাঁকুনিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অধিকাংশ যাত্রী।
কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে ঝিনাইদহে আসা ব্যবসায়ী নন্দ দুলাল সাহা বলেন, ‘ব্যবসার প্রয়োজনে কালীগঞ্জ থেকে ঝিনাইদহ শহরে আমাকে প্রতিদিন আসতে হয়। কিন্তু কালীগঞ্জে ১৫ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তাটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই সড়কটি ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে।
মহাসড়কটি ভাঙ্গাচোরার কারণে বেশি ভোগান্তি চালকদের। প্রতিনিয়ত রাস্তার মাঝে বিকল হয়ে পড়ে গাড়ী।
বাস চালক রবিউল আলম জানান, সড়কের বেহাল দশার কারণে ৫ মিনিটের পথ বর্তমানে যেতে এখন ২৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। মাঝে মধ্যে গাড়ির চাকা পাংচার, যান্ত্রিক সমস্যাসহ গর্তে পড়ে হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থাকতে হয় গাড়ি নিয়ে।
ট্রাক চালক কালাম হোসেন জানান, মহাসড়কটি ভাঙ্গার কারণে প্রতিনিয়ত গাড়ী পাতি, এক্সেল, টায়ার বসে যায়। একবার নষ্ট হলে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। রাস্তাটি যদি ভালোমত মেরামত করা হত তাহলে এই ভোগান্তি থেকে তারা রেহাই পেত।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সওজ থেকে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে কয়েক দফা খোয়া-বালু দিয়ে জোড়াতালির সংস্কার করা হয়। কিন্তু এসব কাজের মান খারাপ হওয়া দু’এক দিনের মধ্যে তা উঠে যায়।
ঝিনাইদহ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি রোকনুজ্জামান রানু বলেন, জেলা বাস মালিক সমিতির অধিনে প্রায় ৩ হাজার গাড়ী রয়েছে। মহাসড়কটির বেহাল দশার কারণে মালিকদের ডেমারেজ বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবহণ ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কুষ্টিয়া থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় সব স্থানে ক্রোকোডাইল ক্রাক (কুমিরের গায়ের ন্যায় ভাঙ্গা)। বর্তমানে এই মহাসড়কটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। সড়কটি মাঝে মধ্যে সংস্কার করা হচ্ছে কিন্তু অধিক ভারী যানবাহন চলাচল করার জন্য তা স্থায়ী হচ্ছে না। এই সড়কটি কাজের জন্য দ্রুত টেন্ডার আহŸান করা হবে।

Comments
Loading...