যেভাবে এলো জার্সি
পুরো বিশ্ব এখন ভাসছে ফুটবল উন্মাদনায় । তার হাওয়া লেগেছে আমাদের দেশের মানুষের মনেও। এ সময় সবচেয়ে জনপ্রিয়তা দেখা যায় যে পণ্যের, তা হচ্ছে জার্সি। প্রিয় খেলোয়াড়রা যে পোশাক গায়ে চড়িয়ে নেমে পড়েন ফুটবলের মাঠে, সে পোশাক নিয়ে আগ্রহের জায়গাটাও অনেক। কীভাবে এসেছে এই জার্সি, কী তার ইতিহাস- তাই নিয়ে এই আয়োজন।
ফুটবল খেলার জন্ম ১৮ শতকের প্রথম দিকে প্রাচীন চীনে হলেও আধুনিক ফুটবলের প্রচলন হয় একই শতকের মাঝের দিকে যুক্তরাজ্যে এবং ১৯ শতকের শুরুর দিকে এটা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করা শুরু করে। তখনকার সময়ে খেলোয়াড়দের জন্য নির্ধারিত কোনো পোশাক ছিল না। শার্ট, কোট কিংবা গেঞ্জি যা-ই থাকুক না কেন পরনে, খেলোয়াড়রা তাদের ইচ্ছামতো পোশাক পরে খেলা চালিয়ে যেতে পারতেন। যার ছবি আমরা এখনও আর্কাইভ ঘেঁটে দেখতে পারি। কিন্তু ক্রমে ক্রমে একই ধরনের পোশাকের প্রয়োজন অনুভব করতে লাগলেন খেলোয়াড় এবং এর সঙ্গে জড়িত কর্তাব্যক্তিরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৭০ সালে কর্তাব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নিলেন, খেলোয়াড়রা বোতামসহ ফুল কলার শার্ট, বো টাই, নিপাট ভদ্রলোকের মতো জামা পরে ফুটবল খেলবেন। কিন্তু খুব দ্রুতই এই পোশাকের পরিবর্তে খেলোয়াড়রা ফুল হাতার পোলো পরে খেলতে লাগলেন। ১৮৭৯ সালের এফএ কাপে দেখা যায় ফুল হাতা পোলো এবং হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট পরে তাদের মাঠে নামতে। ১৮৮২ সাল থেকে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা ফুল হাতা সাদা পোলো শার্ট পরে নিয়মিতভাবে খেলা শুরু করলেন। তখনকার সময় এই ক্লাবটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব। আর সাদা রঙকে বেছে নিল অন্য একটি ক্লাব করিনথিয়ান এফসিএর সম্মানে। জার্সি সম্পর্কে পুরনো নথি ঘেঁটে, ১৮৪০ সালে ইংল্যান্ডের উইন্ডচেস্টার কলেজের দুই বিভাগের মধ্যে ফুটবল খেলার ছবি পাওয়া যায়। যেখানে লেখা- সাধারণ দর্শকদের লাল রঙ আর কলেজের ছাত্রদের নীল রঙের বিশেষ জামা পরে খেলতে বলা হয়েছে। কিন্তু নথি থেকে আরও জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ ফুটবল জোটের অধীনে নির্দিষ্ট পোশাক বা জার্সি পরে খেলা হয় ইংল্যান্ডে ১৮৬০ সালে। এরপর থেকেই অন্য দলগুলো তাদের খেলোয়াড়দের নিজস্ব দলের জার্সি পরিয়ে খেলা শুরু করে। ১৮৭০ সালে দলগুলোর মধ্যে তাদের জন্য বিভিন্ন রঙের জার্সি ও অনুষঙ্গের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ১৮৯০ সালে অনুষ্ঠিতব্য ফুটবল লীগ থেকে বিভিন্ন ক্লাব নিজেদের মধ্যে বিবাদ এড়ানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন রঙ আর ডিজাইনের জার্সির ব্যবহার করতে থাকে। তার পাশাপাশি নিজেদের মাঠে ক্লাবগুলো তাদের পছন্দমতো জার্সি পরতে পারত। এই নিয়মটি একটু বদল হয় ১৯২১ সালে। যা কি-না প্রতিপক্ষ দল তাদের প্রতিপক্ষের মাঠে ব্যবহার করতে পারত। দ্য নিউ ব্রামটন দলটি ১৮৯৪ সালে খেলোয়াড়ি পোশাক বা জার্সির যুগের প্রবর্তন করে। তারা ভারী জার্সির সঙ্গে লম্বা হাফপ্যান্টেরও ব্যবহার শুরু করে। আর ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স তাদের দলের জন্য হাফ হাতা জার্সির ব্যবহার শুরু করে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যখনই ফুটবলের রঙিন জার্সি ইংল্যান্ডে জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করল, ঠিক তখনই ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাব তাদের সাদাকালো জার্সির ব্যবহার বাদ দিয়ে রঙিন জার্সি ব্যবহার করতে লাগল। তাদের মধ্যে ইতালির জুভেন্টাস ক্লাবটি একই সঙ্গে তাদের জার্সিতে সাদা ও কালো এই দুই রঙের ব্যবহার করে। এর বছর দুয়েক পরে আর্জেন্টাইন ক্লাব অ্যাথলেটিকো ইন্ডিপেন্ডেন্টে নিজেদের জন্য লাল জার্সি গায়ে তোলে ইংল্যান্ডের ক্লাব নটিংহাম ফরেস্টের খেলা দেখার পরে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ১৯১০ সালে গোলকিপার তার জার্সি অন্যান্য সবার থেকে একটু ভিন্ন রঙে পরা শুরু করেন। জার্সির অন্যতম প্রধান পরিবর্তন হলো এর পেছনে নাম্বার যোগ। এই পরিবর্তনটির কথা ১৯২০ সালে শুরু করলেও সফল হয় ১৯৩৩ সালে এফএ কাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের এভারটন আর ম্যানচেস্টার সিটির খেলার মধ্য দিয়ে। ১৯৭৫ সালে লিডস ইউনাইটেড তাদের নীল আর সোনালি রঙ বাদ দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের অনুকরণে জার্সির রঙ সাদা করে। ২০০০ সাল থেকে জার্সির ডিজাইনে বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষণীয়। ২০০২ সালে ক্যামেরুনে অনুষ্ঠিত আফ্রিকান নেশন কাপে মালির খেলোয়াড়রা হাতাকাটা জার্সি পরে খেলে। কিন্তু ফিফার পক্ষ থেকে বলা আছে- এমন জার্সি ব্যবহার করা যাবে না। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের সময় আন্তর্জাতিক পোশাক ব্র্যান্ড কাপ্পা আর্জেন্টিনা দলের জন্য স্কিনটাইট জার্সি সরবরাহ করে।