তথ্য প্রযুক্তি আইনে ১৪ বছর সর্বোচ্চ সাজা; কোটি টাকার জরিমানা
তথ্য প্রযুক্তি আইনে ১৪ বছর সর্বোচ্চ সাজা
কোটি টাকার জরিমানা, তাই সবাই সাবধান
………. এ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ
বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রায় ৫ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রের দ্বারা প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করে থাকেন। কিন্তু হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে রয়েছে কঠোর আইন। মুখ থাকলে যেমন অনেক কথা বলা যায় না, কলম থাকলেও অনেক কিছু লেখা যায় না। অর্থাৎ অন্যের সম্মান ক্ষুণœ হয় এমন কিছু করা ঠিক না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি আমাদের কিছু বন্ধু এই বিষ্ময়কর ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে অপব্যবহার করে ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ ও ইচ্ছারবশে অন্যের মানহানি, অন্য ধর্মকে হেয়, সন্ত্রাসের উসকানী ইত্যাদি অপরাধমুলক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছেন। এই সব অপপ্রয়াস থেকে শিক্ষিত, অক্ষিত, জ্ঞান পাপীদের লাগাম টেনে ধরার জন্য বাংলাদেশেও আইন রয়েছে। বিশেষ করে ২০০৬ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের নামে একটি যুগান্তকারী আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে এই আইনকে দু’দফা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালে ৪২ নং আইন দ্বারা এই আইনের সংশোধন পূর্বক অপপ্রয়োগকারীদের সাজার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। তাই প্রতিটি জনগণের এই আইনটি জানা জরুরী। বিশেষ করে আমরা যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি তাদের সাবধান ও সতর্ক করার ব্যক্তিগত তাগিদ থেকে এই সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ধারা নিয়ে আজ লিখলাম।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ (২০০৬ সালের ৩৯ নং আইন, ৮ অক্টোবর ২০০৬ পাশ হয়) এর ধারা-৫৭।
(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, “কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক্স বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যা মিথ্যা, অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয় তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) কোন ব্যক্তি উপধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক ১৪ বৎসর কারাদন্ডে এবং অন্যূন ৭ বৎসর এবং অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থ দন্ডে দন্তিত হইবেন”।
ধারা-৬৬
(১) যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কম্পিউটার ই-মেইল বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক রিসোর্স বা সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনের সহায়তা করেন তাহা হইলে তাহার উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) কোন ব্যক্তি উপধারা (১) এর অধীন কোন অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করিবার ক্ষেত্রে মূল অপরাধীর জন্য যে দন্ড নির্ধারিত রহিয়াছে তিনি সেই দন্ডেই দিন্ডত হইবেন।
৬৭ ধারা মোতাবেক কোন কোম্পানী কর্তৃক এই আইনের অপপ্রয়োগ হলে অংশিদার বা পরিচালকরাও সবাই দোষী সাব্যস্ত হবেন। পূর্বে এই আইনটি জামিনযোগ্য ও অআমলযোগ্য অপরাধ ছিল, বর্তমানে এই আইনটিকে অজামিন যোগ্য ও আমলযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। এছাড়া পূর্বে সর্বোচ্চ সাজা ছিল ১০ বছর, বর্তমানে ৪ বছর সাজা বাড়িয়ে ১৪ বছর করা হয়েছে।
খুলনা থেকে প্রকাশিত অন্যতম প্রবীণ ও প্রভাবশালী প্রত্রিকা “দৈনিক পূর্বাঞ্চল” এর সম্পাদক ও প্রকাশক এবং খুলনা ওয়াসার প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লিয়াকত আলী’র বিরুদ্ধে মানহানীকর ই-মেইল প্রেরণ ও কয়েকটি পত্রিকায় সেই সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর আইনগত প্রতিকার পাওয়ার জন্য তিনি ১৩ জানুয়ারী’১৫ ইং তারিখ খুলনা থানায় এই আইনের ৫৭, ৬৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন যার নম্বর- ১১। খুলনার ০৫ (পাঁচ) জন সংবাদিক এর বিরুদ্ধে এই প্রথম এ ধরনের মামলার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হলো।
তাই পরিশেষে বলতে চাই- ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি ব্যবহারকারী বন্ধুদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করুন মানুষের কল্যাণে এবং মাথা থেকে সকলেই সব ধরনের খারাপ চিন্তা পরিহার করুন। অতএব সাবধান!
এ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ
বিভাগীয় স্পেশাল পিপি
খুলনা বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত।
মোবাইল নং ০১৭১১-২৮০৮১৪