বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো
বিডিপি ডেস্ক:
বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো। মূলত টিকিট বিক্রির আয় ডলার করে পাঠাতে না পারার কারণেই বাংলাদেশের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স। অনেক এয়ারলাইন্স কমিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট সংখ্যা। আর ফ্লাইটের সংখ্যা হ্রাস অব্যাহত থাকলে যাত্রী পরিবহণে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে যেসব বিদেশি এয়ালাইন্সের ফ্লাইট কমিয়ে দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে টার্কিশ এয়ারলাইন্স সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট থেকে কমিয়ে ৫টি চালাচ্ছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ১০টি ফ্লাইট থেকে কমিয়ে ৭টি করেছে। ক্যাথে প্যাসিফিক ৫টির পরিবর্তে ১টি ফ্লাইট চালাচ্ছে। মালিন্দো এয়ারলাইন সপ্তাহে ৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করত তা কমিয়ে ১টিতে নামিয়েছে। কুয়েত এয়ারলাইন্স ১২টি ফ্লাইট চালাতো এখন ১০টি চালাচ্ছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর টিকিট বিক্রয়ের পরিমাণ ৫০% নেমে এসেছে। ফলে এজেন্সিগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আর আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইটের সংখ্যা শতকরা ৭৫% কমে যেতে পারে। তাছাড়া টিকিটের বিক্রয়লব্ধ অর্থ অনির্দিষ্টকাল বাংলাদেশে আটকে থাকার বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ওই অর্থের ‘কস্ট অব ফান্ড’ সমন্বয়ের জন্য টিকিটের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিট বিক্রয়লব্ধ প্রায় ২০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্লক হয়ে আছে। ওই কারণেও অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিটের মূল্য। এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশে ডলারের সঙ্কট এখনো কাটেনি। সঙ্কট নিরসনে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি বাজার পরিস্থিতি। মূলত ডলার সঙ্কটের কারণেই বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রির আয় নিজ নিজ দেশে পাঠাতে পারছে না। আর ডলার সঙ্কটের দরুন বিদেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকলে প্রবাসী কর্মী পরিবহণে মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া ফ্লাইটের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় টিকিটের দামও দফায় দফায় আকাশচুম্বী হচ্ছে। ফলে বিদেশগামী কর্মীরা বিমানের টিকিটের উচ্চ মূল্যের টাকা যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। রাতারাতি বৃদ্ধি পাচ্ছে অভিবাসনের ব্যয়। সদ্য বিদায়ী বছর ২০২২ সালে সউদীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৬২৬ জন নারী-পুরুষ কর্মী বিদেশে চাকরি লাভ করেছে।
সূত্র জানায়, টিকিট বিক্রয়লব্ধ আয় নিজ নিজ দেশে পাঠানোর সুযোগ না পেলে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স তাদের ফ্ল্ইাট বাংলাদেশ থেকে পরিচালনার পরিবর্তে লাভজনক রুটে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে। তাতে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালুর পর আয়ের লক্ষ্যমাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট সংখ্যা না বাড়লে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনাল থেকে আর্থিক আয়ের পরিমাণও বাড়বে না। সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত প্রায় নয় মাস যাবত এয়ারলাইন্সসমূহের রেমিট্যান্স বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া শিডিউল ব্যাংকসমূহের নানাবিধ সীমাবদ্ধতার দরুনও রেমিট্যান্স প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশে টিকিট বিক্রি ও ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাতে পর্যটন শিল্প ও ট্রাভেলস এজেন্সি ব্যবসায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। যদিও বিদ্যমান অস্থিতিশীল বিশ্ব পরিস্থিতির মধ্যেই গত এক বছরে জনশক্তি রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ৯ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গত জানুয়ারি থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ লাখ ১৮ হাজার ৬২৬ নারী-পুরুষ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি অভিবাসী শ্রমিক নেয়ার দেশ সউদী আরবের নিয়োগকর্তারা অভিবাসী কর্মী আমদানির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ও শর্তহীনভাবে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ফলে জনশক্তি রপ্তানির সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী-পুরুষ কর্মী সউদীতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। ওই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৩ সালে জনশক্তি রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে। মূলত বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ২০২১ সালে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফের বিমান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ফলে আকাশপথে যাত্রীর চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আর এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে এয়ারলাইন্সগুলো বিমানের টিকিটের দাম দুই থেকে তিন গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।
এদিকে বিগত ২০২১ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৬ জন যাত্রী পরিবহণ করেছে। তার মধ্যে ডিপার্চার যাত্রীর সংখ্যা ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৯৬৬ জন এবং অ্যারাইভাল যাত্রীর সংখ্যা ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭১০ জন। আর ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বিমানসহ বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো সর্বমোট যাত্রী পরিবহণ করেছে ৫৮ লাখ ৮৪ হাজার ৪৫০ জন। তার মধ্যে ডিপার্চার যাত্রীর সংখ্যা ৩২ লাখ ৫৯ হাজার ৩২২ জন এবং অ্যারাইভাল যাত্রীর সংখ্যা ২৬ লাখ ২৫ হাজার ১২৮ জন। মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমান, বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা, সালাম এয়ার, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, ইতিহাদ এয়ারলাইন্স, ফ্লাই দুবাই, সাউদিয়া অ্যারাবিয়ান, কাতার এয়ারলাইন্স, কুয়েত এয়ারলাইন্স ও ওমান এয়ারলাইন্স।