কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল হলে অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে?
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেছেন যে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগের কারণে সরকারের নৈতিকতা ক্ষুণ্ণ হয়। তিনি বলেন, “এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অপরাধীরা ক্ষমতাবান বলে শাস্তি পায় না।” কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করার মাধ্যমে সরকার এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চায় যেখানে নৈতিকতা এবং আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করলে অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষজ্ঞ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “এটি ধারাবাহিক অনেকগুলো পদক্ষেপের মধ্যে একটি। সরকারের উচিত আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।”
বর্তমানে, কালো টাকার পরিমাণ জিডিপির ১০ থেকে ৩৮ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। এর ফলে, অর্থনীতিতে কালো টাকার উপস্থিতি অনেক বেশি, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করতে পারে।
একদিকে, সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে যেতে পারে কারণ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করার পর জনগণ নিয়মিত কর পরিশোধের দিকে মনোনিবেশ করতে পারে। তবে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলের ফলে পূর্বে সাদা করা কালো টাকার পরিমাণও সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে।
বিগত সরকারের সময়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অর্থ পাচার এবং দুর্নীতিকে উৎসাহিত করেছে বলে মনে করা হয়। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ পাওয়ার ফলে দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে, অর্থনীতিতে কালো টাকা সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন যে, প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নীতিগত স্তরে রয়েছে এবং এটি চূড়ান্ত আইনি কাঠামোতে পরিণত করা হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সঠিক আইনি কাঠামো এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে কালো টাকার পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে।
এফটিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “কালো টাকা পাচার হয়েছে সেগুলো ফেরত আনার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।” অর্থ পাচার রোধ এবং কালো টাকার ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে সহযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। নৈতিকতার উন্নতি, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার কমানোর প্রচেষ্টা, এবং সঠিক আইনি কাঠামোর প্রবর্তন এই পরিবর্তনের অংশ হতে পারে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য একটি সমন্বিত ও স্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।