Connecting You with the Truth

শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি যেন মৃত্যু ফাঁদ

বরিশাল প্রতিনিধি:
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলাধীন শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ অবস্থায় কোন রকমে দাঁড়িয়ে রয়েছে মূর্তিমান মৃত্যু আতঙ্ক হয়ে। তার ভেতর পাঠ্যশিক্ষা লাভ করছে ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী এবং পাঠ্য দান করছেন প্রায় ২০ জন শিক্ষক । কর্মচারী রয়েছে। এছাড়া তারা সবাই মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে কাটাচ্ছেন প্রতিটা মুহূর্ত। কারণ শিক্ষাই যে জাতির মেরুদণ্ড!
স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, ভবনের এই ভগ্নদশা দেখে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কষ্ট হলেও দূরের স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নিজামুল কাদির জানান, ১৯৩২ সালে তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার স্বর্গীয় হিরনা কুমার রায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে এই বিদ্যালয়টি স্থানীয়দের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার কারণে বিদ্যালয়টি কয়েক বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পরে এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আ: রাজ্জাক মিয়া ১৯৫৯ সালে পুন:প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে এর কার্যক্রম, ১৯৬০ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। এ বিদ্যালয়টি স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময় বাকেরগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিবাহিনীর একমাত্র ক্যাম্প ছিলো। একপর্যায়ে পাকবাহিনী বিদ্যালয়টি একেবারে আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং হত্যা করে এলাকার অনেক নিরীহ ছাত্র ও মুক্তি কর্মী মানুষকে। প্রধান শিক্ষক আরো জানান, বর্তমানে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৬ শতাধিক। গত বছর এসএসসিতে ৭৩ জনের মধ্যে পাস করেছে ৭১ জন। বর্তমানে উপবৃত্তি পাচ্ছে ১১৭ জন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯৯৭ সালে নির্মিত শ্রেণি কক্ষ ও অফিস রুমগুলির ছাদ থেকে অল্প বৃষ্টি হলেই চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ে শিক্ষার্থীদের বই খাতা ভিজে যাচ্ছে। ওয়াল পিলার ও ছাদে বড় বড় ফাটল, যে কোন মুহূর্তে ভবনটি ধসে পড়ে অকালে ঝড়ে যেতে পারে অনেকগুলি প্রাণ। যদি এ রকম ঘটনা ঘটে, তবে কে নিবে এর দায়ভার। প্রধান শিক্ষক আরো জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংস্কার ও নতুন ভবনের আশায় ইতোমধ্যে একাধিকবার স্থানীয় সংসদ থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নির্বাহী প্রকৌশলী (শিক্ষা প্রকৌশল) বরিশাল, প্রধান প্রকৌশলী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকা এর বরাবর আবেদন জানানো হয়েছে। পরিশেষে গত ২৭/৫/১৪ ইং তারিখে ঝুঁকিপর্ণ ভবনগুলোর ভেতর থেকে ৪টি রুম ভেঙ্গে ৩টি রুম করার টেন্ডার দিয়েছে ফ্যাসালিটি বিভাগ বরিশাল। কিন্তু দৃশ্যমান কোন কাজ এখনো শুরু হয়নি, কবে নাগাদ শুরু হবে তা জানা যায়নি। কিন্তু বাস্তবতা আরো ভিন্ন যেখানে শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে যেখানে নতুন নতুন ভবন তৈরি করা প্রয়োজন, সেখানে ৪টি রুম ভেঙ্গে ৩টি রুম করার যৌক্তিকতা কতটুকু? বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে সব মিলিয়ে কক্ষ রয়েছে ১৫ টি কিন্তু প্রয়োজন ২৪টি। সকলের চাওয়া বিদ্যালয়টি ৩ তলা ভবন করা হলে চলমান সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। বিকল্প হিসাবে ঝুকিপূর্ণ ভবনগুলো সংস্কার ও আলাদা ৩টি রুম করার দাবি ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের। এই মর্মে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষা মন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের হস্তক্ষেপ কামনা করছে সবাই, যাতে করে বিদ্যালয়টি পুন:নির্মাণসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের ১টি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।

Comments
Loading...