সিরাজদিখানে গৃহবধূর আত্মহত্যা চেষ্টা
সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানে যৌতুকের দাবীতে স্বামী, শ্বশুর, শাশুরী, ও ননদের নির্যাতন সইতে না পেরে এক গৃহবধু বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে তাকে পাশ্ববর্তী বাড়ির লোকজনে উদ্ধার করে ঢাকা মিডর্ফোড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতাল ও আহতের পরিবার সুত্রে জানা গেছে, সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আজিজুল শেখের মেয়ে জহুরা বেগমের (২৩) সাথে সিরাজদিখান উপজেলার একই ইউনিয়নের আব্দুল কাশেম সিকদারের ছেলে জাবের সিকদারের (৩০) সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে শরীয়া মোতাবেক ৯ বছর পূর্বে বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুক লোভী নরপশু স্বামী জাবের, শশুর আব্দুল কাশেম, শাশুরী জরিনা বেগম ও ননদ আমেনা বিভিন্ন সময় জহুরার উপর অমানুষিক নির্যাতন করত। এসব নির্যাতনের ঘটনায় এলাকায় একাধিকবার শালিশ বিচারও হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি শক্রবার সকালে যৌতুকের দাবীতে জহুরা বেগমকে এলোপাথাড়ি মারপিট করে আত্মহত্যা করে মরে যেতে বললে সকাল ৭ টার সময় ওই গৃহ বধূ বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে স্থানীয়রা গৃহ বধূকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলার ইছাপুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মিডর্ফোড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এসময় ঢাকা মিডর্ফোড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারদের নিবির পর্যবেক্ষ জহুরা বেগম মোটামুটি আশংকা মুক্ত বলে তার পরিবার শশুর আব্দুল কাশেম শিকদার জহুরাকে বাড়ি নিয়ে আসেন। গত রবিবার জহুরা বিষক্রিয়ায় আবার অসুস্থ হলে তাকে উপজেলার ইছাপুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করানো হয়। জহুরার মামা সেলীম মল্লিক জানান, শশুর বাড়ির লোকেরা এর আগে বেশ কয়েকবার যৌতুকের জন্য আমার ভাগ্নিকে মারধর করে। ভাগ্নির দিকে তাকিয়ে স্বামী শশুরের চাওয়া মোতাবেক সবাই সাহায্য করে নগত টাকা ও একটি ঘড় যৌতুক দিয়েছিলেন । এর পর আরো টাকা দাবি করে। সেই টাকা না দিতে পারায় তার স্বামী জাবের সিকদার, শশুর আব্দুর কাশেম সিকদার, শাশুরী জরিনা বেগম ও স্বামীর বোন আমেনা যৌতুক দাবি করে মারধর ও মানসিক নির্যাতন করতো । প্রতিদিন বিষপান করে মরে যেতে বলতো , হত্যার উদ্যেশ্যে ঘরে আটক করে চাপা মাইর দিতো ওরা । তাই জহুরা বিষপান করতে বাধ্য হযেছে আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই। আহত জহুরা হাসপাতালের বিছানায় কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি আর বাঁচতে চাই না। বাড়ির সকলের অমতে স্কুলে ৭ম শ্রেনীতে পড়ার সময় জাবেরকে বিয়ে করে নয় বছর যাবত যন্ত্রনা সহ্য করছি। যৌতুকের দাবীতে স্বামীর, শ্বশুর, শাশুরী, ও ননদের নির্যাতন সইতে না পেরে বিষপানে আত্ম হত্যা করতে চেয়েছি। আমার এক ছেলে ইউসুফ(৮)ও মেয়ে আছিয়া(৩) এর সামনেই স্বামঅ জাবের যৌতুকের জন্য মারধর করে বিষ কেয়ে মরে যেতে বলে। বিয়ের পর নির্যাতন করলে কয়েক বার সালিশ বৈঠকের পরে আমার মা ও মামার বাড়ির লোকজন নগত টাকা ও একটি ঘড় তোলে দিয়েছিল এখন ওরা আবার ছেলেকে বিয়ে দিতে চায় আমাকে মারধর করে বিদায় করে দিয়ে। আমি আপনাদের সকলের কাছে বিচার চাই। মেয়ের চাচা মোঃ ইকরাম,স্থানীয় মাতব্বর মোঃ ইদ্রস খান ও মধ্যপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ হারুন অর রশিদ জানান,প্রায় ৯বছর পূর্বে জহুরা স্কুলে পড়ার সময় জাবের ও জহুরা প্রেম করে বিয়ে করে। বিয়েতে তাঁর মা সুফিয়া বেগম ধার করে নগত টাকা ও একটি ঘড় যৌতুক দিয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকে জাবের সিকদার যৌতুকের জন্য আবারও তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। কয়েকবার নির্যাতনেরও শিকার হন জহুরা। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিস বৈঠক হয়। তার চিকিৎসার পর আমরা আনগত ব্যবস্থার দিকে যাব। সিরাজদিখান উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্ম
কর্তা রাফিয়া ইকবাল জানান, কতৃপক্ষ আমাদের আইনগত সহযোগীতা চাইলে আমরা আমাদের নিজস্ব সেলের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা করব। কর্তব্যরত সিরাজদিখান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক ডাঃ ওয়ায়েছ মাহমুদ জানান, বিষপানে আহতকে ঢাকায় চিকিৎসা দিয়ে বাড়িআনা হলে আবার অসুস্থ হলে গত রবিবার বিকালে সিরাজদিখান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এখন তার অবস্থা কিছুটা ভালো ,বুকে ব্যাথা রয়েছে। এ ব্যাপারে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইযারদৌস হাসান জানান, যৌতুকের দাবীতে স্বামীর, শ্বশুর, শাশুরী, ও ননদের নির্যাতন সইতে না পেরে গৃহবধু বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করার কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।