নড়াইলসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় ইরানী জিরা চাষে কৃষকদের ইর্ষান্বিত সাফল্য
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল: নড়াইলের বিভিন্ন প্রান্তের মাঠে মাঠে এক নতুন ফসলের সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। ক্ষেতের আইলে উৎসুক জনতার ভিড়। কৃষক-কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাসহ সবাই যেন খুশিতে মেতেছে। নতুন এ ফসল নিয়ে আশায় বুক বেধেছেন নড়াইলের কৃষকরা। মশলা জাতীয় এ ফসলের নাম জিরা। সুগন্ধি বিদেশী ইরানি জিরার চাষ করে সাফল্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে নড়াইল সদর উপজেলার একাধিক কৃষক। বাংলাদেশের মাটিতে জিরা চাষ হয় না-দীর্ঘদিন এমন ধারণা ভুল প্রমান করে তারা সফলতার চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছে গেছেন। এতে দেশে দামি মশলা জিরা চাষে যুগান্তকরি বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই। সদর উপজেলায় আমন ধান কাটার পর পরই রবিশস্যের মৌসুম শুরু হয়েছে। রবিশস্যের মৌসুমে কৃষকরা সাধারণত মুগ, মুশুরির ডাল, মরিচ, গম, তিল, সরিষা, বাদাম ও সবজি চাষ করলেও চলতি মৌসুমে বিদেশী জিরা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।
জানা গেছে, দর উপজেলার চাঁচড়া গ্রামে এক চাষি ২১ শতাংশ জমিতে, নড়াইলের সীমান্তবর্তী এলাকা পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের কালিশংকরপুর গ্রামের চাষি চান্দু মোল্যা ১৫ শতাংশ জমিতে, নহাটা ইউনিয়নের খালিশাখালির তৈয়োব বিশ্বাস ৩ শতাংশ জমিতে, রামদেব পুরের ডাঃ খবির হোসেন ও একই গ্রামের মতিয়ার মোল্যা ১২ শতাংশ জমিতে, সালধা গ্রামের অসিম গয়ালি ৬ শতাংশ জমিতে ও হরিয়াখালি গ্রামের মশিয়ার ১২ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামুলক ভাবে বিদেশী জিরার চাষ করে সফল হয়েছেন। জিরা চাষিরা জানান, বীজের সমস্যার কারনে জিরা আবাদে সফল হচ্ছিলেন না তারা। নড়াইল সদরের নাজমুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ইরানের জিরা উৎপাদনের কৃষি খামার থেকে গোপনে দেশে বীজ আনেন। পরে তিনি বীজ বিক্রি করেন।এই বীজ ক্ষেতে বপণ করে কৃষকেরা জিরা উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন।
আতিয়ার মোল্যা জানান, বীজ না ভিজিয়ে পরিমিত জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে মাটি ভালো ভাবে গুড়া করে জিরা বীজ বুনতে হবে। জিরার বীজ বপনের পর মাটি ভালো ভাবে সমান করে মিশিয়ে দিতে হয়। চারার বয়স ১৫-২০ দিন হলে ১ বার ও ফুল আসার পর ১ বার পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ৮০ -১০০ দিনের মধ্যে কৃষক জিরা ফসল ঘরে তুলতে পারবে। কৃষক আকতারুজ্জামান মৃধা জানান, নড়াইল থেকে ৩০০ গ্রাম পরিমান ইরানি জিরার বীজ ৬ হাজার টাকায় কিনে ২১ শতাংশ জমিতে বপন করেন তিনি। কোন রোগ-বালাই ছাড়াই যেভাবে জিরার গাছ বেড়ে উঠেছে এবং ফুল দেখা যাচ্ছে তাতে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। শতক প্রতি জমিতে জিরা চাষ করতে গড়ে ২শ টাকা খরচ হয়েছে। আর ১ শতাংশ জমিতে জিরা উৎপাদন করা যাবে ২ থেকে আড়াই কেজি। যার বাজার মূল্যে হবে ১ হাজার টাকা। আর বীজ উৎপাদন করতে পারলে প্রতি কেজি বীজ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবে বলে মনে করেন।
নড়াইল কৃষি অফিসের উপসহকারি কর্মকর্তা জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে উপজেলার ছয়জন কৃষক জিরা চাষ করেছেন। কোন রোগ বালাই ছাড়াই যেভাবে জিরার গাছ হয়ে উঠেছে এবং ফুল দেখা যাচ্ছে তাতে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নড়াইল মশলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, আমাদের দেশের মাটি জিরা চাষের জন্য উপযোগী। মানসম্মত বীজের কারনে জিরা আবাদ সফল হচ্ছিল না। সাধারনত জিরার বীজ উৎপাদনকারী দেশ রপ্তানি করে না। কোন এক মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী জেলা মাগুরায় জিরার বীজ চলে আসায় উৎপাদনে সফল হচ্ছেন কৃষক। উন্নতবীজ উৎপাদন করতে পাররে দেশ আমদানি নির্ভর জিরা চাষে সফল হবে এবং মসলা চাষের নতুন দিগন্ত উন্মেচিত হবে।