Connecting You with the Truth

নারীর মর্যাদা কী? অধিকার কী?


Dil Afrozদিল আফরোজ

আজকে আমরা দেখছি বিভিন্ন অফিস আদালতে নারীরা কাজ করছেন। এমনকি শিল্প কারখানায়, অবকাঠামো নির্মাণকার্যে, রাস্তাঘাটে, ক্ষেতে খামারে তারা পুরুষের মতোই সমান কায়িক পরিশ্রমের কাজ করছেন, ইট পাথর টানছেন, মাটি কাটছেন, কৃষিকাজ করছেন। এ কাজগুলো করতে গিয়ে তারা প্রায়শই তাদের সম্মানের সংকট অনুভব করছেন। গার্মেন্ট শিল্পের নারী শ্রমিকদের দুর্দশার কথা, নিগ্রহের কথা আমরা প্রতিদিনই পত্রিকায় দেখি। কিন্তু তারা নিজেদের সম্মান ও মর্যাদার সংকট সত্ত্বেও পেটের ভাত জোগাড় করতে এই কাজগুলো করে যেতে বাধ্য।

বর্তমানে জীবিকার জন্য মাটিকাটা, দিনমজুরের কাজ করা, উদয়াস্ত কঠোর পরিশ্রমের কাজ করাকে তার অধিকার বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু এখানে আমাদের দ্বিমত রয়েছে। এগুলো আসলে নারীর অধিকার নয়, অধিকার হারানোর পরিণতি। অন্যায়ভাবে কাউকে আঘাত করে আহত করার পর যদি বলা হয় ওষুধ ও চিকিৎসা লাভ আহত ব্যক্তির অধিকার তাহলে তা কতটুকু যৌক্তিক হবে?

তাহলে আসলে নারীর অধিকার কী? প্রথমে আমি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করছি।
নারীকে স্রষ্টা মূলত কী কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন সেটা সর্বপ্রথম হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। আল্লাহ প্রথমে পুরুষ সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু পৃথিবীতে মানবজাতির বিকাশের প্রয়োজনেই নারীকে তিনি সৃষ্টি করলেন এবং নারী-পুরুষ পরস্পরের মধ্যে তীব্র আকর্ষণ সৃষ্টি করলেন মূলত ঐ বংশগতি রার জন্যই। তাদের উভয়কে পৃথক শারীরিক ও মানসিক গঠন কাঠামো প্রদান করা হলো। নারীকে আল্লাহ দিলেন সন্তান ধারণ মতা আর পুরুষকে দিলেন শক্তিশালী পেশি, পরিশ্রমের উপযোগী দেহ যেন যে প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে নিজের পরিবারকে সুরা ও আহার্য প্রদান করতে পারে। নারীকে দিলেন করুণা, ভালোবাসা, মমতায় পূর্ণ স্নেহপরায়ণ হৃদয় যেন সে তার সন্তানকে লালন পালন করে বড় করে তোলে। নারী ও পুরুষের এই মৌলিক কাজ যদি উপো করা হয় তাহলে মানবজাতিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
সুতরাং নারীর অধিকার হলো সে একটি সংসার লাভ করবে যেখানে তার সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা থাকবে। সে কন্যা হিসাবে বাবা-মায়ের আদর ও স্নেহ লাভ করবে এটা তার অধিকার। সে স্ত্রী হিসাবে ভরণপোষণ, ভালোবাসা ও মর্যাদা লাভ করবে। সে মা হিসাবে সন্তানদেরকে উত্তম সংস্কার দিয়ে গড়ে তুলবে। নেপলিয়নের বিখ্যাত উক্তিটি এেেত্র স্মরণীয়, আমাকে আদর্শ মা দাও, আমি তোমাকে আদর্শ জাতি উপহার দেব। জাতিগঠনে মায়ের ভূমিকা বলার অপোই রাখে না। নারী পরিণত বয়সে সন্তানদের সেবা-যত্নে আর ভালোবাসায় সিক্ত হবেন এটা তার মৌলিক অধিকার। যেহেতু নারী শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষ অপো কোমলতর তাই জীবনের প্রতিটি অবস্থানেই তার সুরার আবশ্যকতা রয়েছে। এজন্য পুরুষকে পারিবারিক জীবনে নারীর রাকারী ও অভিভাবক হিসাবে দায়িত্ব প্রদান করেছেন। এটি তার সামাজিক নিরাপত্তার জন্যও অপরিহার্য এ কথা আশা করি কোনো সমাজবিজ্ঞানীও অস্বীকার করতে পারবেন না। এইরূপ নিরাপদ ও সুখময় সাংসারিক পরিবেশ নারীর প্রথম অধিকার।
আমি দু’একজন নারীকে নিয়ে বলছি না, বলছি সকল নারীর চিরন্তন অবস্থানের কথা। নারী তার এই চিরন্তন অধিকার কখন হারিয়ে ফেলল? মানুষ যখন ইবলিসের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করল, তখন নারী পুরুষ উভয়েই যার যার অবস্থান ও দায়িত্ব থেকে সরে গেল। বর্তমান সভ্যতায় জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের যে ঊর্ধ্বশ্বাস দৌড় আরম্ভ হয়েছে তাতে নারী পুরুষ উভয়কেই জীবিকার অন্বেষণে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছে। এটি প্রাকৃতিক নিয়ম যে, অর্থ যার কাছে কর্তৃত্বও তার কাছেই থাকে। একটি সংসারে নারী যখন উপার্জন করতে শিখল তখন সে তার জন্য কারো সুরার প্রয়োজন আছে তা ভুলে যেত শুরু করল। পাশ্চাত্যের বাধনহারা জীবন তার জীবনের বাধনেও টান দিতে লাগল। অপরিণামদর্শী নারী ভুলে গেল যে সে এই বেলা তার সব সম্মান ও মর্যাদা হারাতে চলেছে। নারীর লালিত্য, মাধুর্য, লাবণ্য তার সৃষ্টিগত সৌন্দর্য। এসব ছাড়া নারীর অস্তিত্ব অপূর্ণ। জীবিকার সংগ্রাম দিন দিন কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। সেই সংগ্রামে পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে অথবা অংশগ্রহণ করে নারী তার শারীরিক লাবণ্য, মানসিক সৌরভ, চারিত্রিক মাধুর্য- এক কথায় তার নারীত্ব হারিয়ে ফেলছে। লোহাকে আগুনে পুড়িয়েই আকৃতি দিতে হয়, কিন্তু ফুলকে রাখতে হয় ফুলবাগানে কিংবা ফুলদানিতে। সেই ফুলকে যদি কামারশালায় নিয়ে তপ্ত আগুনে পুড়িয়ে হাতুড়ি পেটা করা হয় তার পরিণতি কী হবে? আজ নারীকে তাই করা হয়েছে। এতে তার মর্যাদা বাড়ে নি বরং সে নিজের সমস্ত অধিকার হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে।
পশ্চিমা সংস্কৃতির ক্রমাগত ‘আঘাতে’ একটি কিশোরী তার বাবা-মাকে অবজ্ঞা করতে শিখছে, তাদের অবাধ্যতা করে নিজের কপথ নিজেই বেছে নিচ্ছে। বাবা-মা নিজেদেরকে অসহায় মনে করছেন আধুনিকার আক্রমণের সামনে। তার একরোখা জেদী স্বভাবের কারণে অথবা তার স্বামীর দায়িত্বহীনতার কারণে যৌবনে সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে, সে স্বামীর স্নেহ ও সুরা হারাচ্ছে। যদি সংসার থাকেও সেখানে শান্তি থাকছে না। আকাশ সংস্কৃতি প্রতিটি মানুষের চরিত্রে কালিমা লেপন করে দিচ্ছে, তাদেরকে অশ্লীলতার পুজারী ও কলহপ্রিয় করে তুলছে। বাবা-মায়ের অবহেলায় সন্তানের শিকের আসন গ্রহণ করেছে টেলিভিশন, ইন্টারনেট, মোবাইল। সে বড় হচ্ছে কাজের লোকের কাছে, ফলে সে বাবা-মা কাউকেই আপন বলে ভাবতে পারছে না। বার্ধক্যে ঐ সন্তানেরা তার মাকে যতœ করছে না, তার কাছে স্ত্রীই অধিক গুরুত্ব আদায় করে নিচ্ছে। এভাবে সে নারী একে একে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের প্রতিটি পর্যায় থেকে অথবা কোনো না কোনো পর্যায় থেকে অধিকার-বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ এই পারিবারিক বন্ধন ও শ্রদ্ধাবোধই ছিল তার মৌলিক অধিকার, কেননা দিনশেষে পরিবারই মানুষের একান্ত আশ্রয়।
তবে মানুষের পরিবার থাকুক আর না থাকুক প্রাণধারণ করতে হলে খাদ্য-বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি তার লাগবেই। তাই নারীও বাধ্য হয়ে সেই কষ্টকর পরিশ্রমগুলির দিকে পা বাড়ায়। যারা উচ্চশিায় শিতি তারা হয়ত একটু ভদ্রস্থ পরিবেশে কাজের সুযোগ পান, আর যারা সার্টিফিকেট যোগাড় করতে পারেন নি তাদেরকে দিনমজুর পর্যন্ত হতে হয়। ইসলাম কিন্তু বৈধ কোনো কাজের ক্ষেত্রেই নারীর উপর কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করে নি। উপার্জনের যে কাজ পুরুষের জন্য বৈধ সেই কাজ নারীর জন্যও বৈধ। কিন্তু ধর্মব্যবসায়ীরা ফতোয়ার জাল বিস্তার করে কার্যত সেই পথও বন্ধ করে দিয়েছে। নারীরা বহির্জগতের কাজে নামলেই ‘সব শেষ করে দিল, সব নাপাক হয়ে গেল’ বলে হা-হুতাশ করতে থাকে।
তাহলে আমরা দেখতে পাই যে দাজ্জাল বা বস্তুবাদী সভ্যতা নারীদের যে সৃষ্টিগত, জন্মগত অধিকার সেটা কেড়ে নিল। আর ধর্মব্যবসায়ীরা সমাজের অর্ধাংশ হিসাবে পুরুষের সঙ্গে নারীর সামাজিক পরিসরে কাজ করার যে অধিকার তা কেড়ে নিল। কিন্তু আল্লাহ ভারসাম্যপূর্ণভাবে নারীকে দুই প্রকার অধিকারই দান করেছেন। তবে নারীদেরকে যে কষ্টকর কাজগুলি আজ করতে হয় সেগুলো করা তার অধিকার না, অধিকার হারানোর পরিণতি। লেখিকা: আমির, হেযবুত তওহীদ, ফেনী।

Comments
Loading...