Connecting You with the Truth

সোনাইমুড়ীর হত্যাযজ্ঞ ও তাণ্ডব; দুইমাসেও গ্রেপ্তার হয়নি জোড়া খুনের আসামিরা

nk

নোয়াখালী প্রতিনিধি: সোনাইমুড়ীর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ও তা-বলীলার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রচারণা চালালেও প্রধান আসামি হানিফ মোল্লাকে ‘খুঁজে পায়নি’ পুলিশ। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেওয়া চাষিরহাট ইউনিয়ন শিবির সভাপতি শাহাদাৎ ও হামলার মূল নায়ক নুরুল আলম মুন্সী, শফিকুল্লাহ, মহিউদ্দিন বেছু, জহির, রহিম গংরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে সকল মসজিদে হেযবুত তওহীদ সদস্যদেরকে খ্রিষ্টান আখ্যা দিয়ে হত্যা করার জন্য আহ্বান করা হয়েছিল সে সকল ঘোষক এবং নেতাদেরকে রহস্যজনক কারণে মামলার এজাহারে নাম থাকা সত্ত্বেও গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। বর্তমানে সোনাইমুড়ীর চাষিরহাট বাজার, বিপুলাসার বাজার, সোনাইমুড়ী বাজার এবং এলাকার মোড়ে মোড়ে আসামিদেরকে আড্ডায় মেতেfile
থাকতে দেখা যায়। আড্ডার অন্যতম বিষয়বস্তু থাকে এই তা-বে কে কত বেশি নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছিল। হামলাকারী ধর্মভিত্তিক রাজনীতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা সরকারি দলের স্থানীয় এক নেতার ছত্রছায়ায় দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছে সোনাইমুড়ীতে। ঘটনায় জড়িত অনেকেই ফেসবুকে নিজেদের নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে উল্লাস প্রকাশ করলেও সে বিষয়ে পুলিশি তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই।
তারা হত্যাকা- ঘটিয়ে নিজেরাই ছবি তুলে উল্লাস প্রকাশ করে ফেসবুকে নানা রকম স্ট্যাটাস দেয়। ঘটনার সাথে জড়িত আরমান খন্দকার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখে, “আজ ১৪-৩-২০১৬ সোনাইমুড়ী নোয়াখালী বিপুলাসার পাশে পোরকরা মোসলমানের সাথে খ্রিষ্টানের মারামারি সকাল ১১টায় শুরু হয়। বিকাল ৫.৩০ এর মধ্যে খ্রিষ্টানের ২ জনকে মেরে আগুন ধরিয়ে দেয় ও ২ জনকে মেরে পুকুরে ফেলে দেয়। আর ২০ এর অধিক আহত হয়। চারপাশের একাংশের মানুষে ছবি দিলাম। আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি ইসলামের পক্ষে(!) এই প্রথম মারামারি করতে পেরে অনেক খুশি।” এভাবে ধর্মবিশ্বাস ভুল খাতে প্রবাহিত হয়েছে। এধরনের অনেক স্বীকারোক্তিমূলক, উসকানিমূলক ফেসবুক স্ট্যাটাসধারীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রসঙ্গত ২০০৯ সালের ৯ই মার্চ গ্রামের কতিপয় সন্ত্রাসী নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী থানাধীন পোরকরা গ্রামে হেযবুত তওহীদের ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম এর বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে ৮টি বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়, বাড়ির সমস্ত মালামাল ও ঘেরের মাছ লুট করে নিয়ে যায়, ১২ জনকে গুরুতর আহত করে। সেই আসামীরাই আবার গত ১৪ই মার্চ ২০১৬ পরিকল্পিতভাবে দূর থেকে ভাড়া করা বাহিনী নিয়ে এসে একই স্থানে হামলা চালায়। তার কিছুদিন আগেই পাঞ্জাবী-টুপি পরিহিত অচেনা কিছু যুবক মিথ্যা ফতোয়া সংবলিত নাম-ঠিকানা বিহীন বানোয়াট একটি হ্যান্ডবিল মসজিদে মসজিদে বিলি করে দিয়ে যায়। কোনো বছা-বিচার না করেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে সম্পৃক স্থানীয় কয়েকটা মসজিদের ইমাম জুম’আর খুতবায় হ্যান্ডবিলটি পড়ে সাধারণ মুসলমানদেরকে উত্তেজিত করে। পরিকল্পিতভাবে ভ্যানে করে বহু পাথর ও হাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘটনার দিন সকাল থেকে তারা হাজার হাজার বহিরাগত লোক এনে অবিশ্রান্তভাবে হামলা চলতে থাকে। বৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের প্রথমে আহত করা হয়, পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়। নির্মাণ করা হচ্ছিল মসজিদ, গুজব রটিয়ে দেওয়া হলো গীর্জা। আশপাশের মসজিদের মাইক থেকে আহ্বান করা হলো হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা চালানোর জন্য। বলা হলো- হেযবুত তওহীদের সদস্যরা খ্রিষ্টান হয়ে গেছে, তাদেরকে হত্যা কর, তাদের গীর্জা ধ্বংস কর। দিনব্যাপী হামলা করে মসজিদ নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসা হেযবুত তওহীদের শতাধিক মানুষকে আহত করে ও দু’জনকে হাত-পায়ের রগ কেটে, চোখ উপড়ে, জবাই করে, গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যা করা হয়। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় হেযবুত তওহীদের ইমাম ও অন্য সদস্যদের বাড়ি, লুট করে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির যাবতীয় মালামাল। অজানা কারণে স্থানীয় প্রশাসনকে এসময় নীরব থাকতে দেখা যায়। দু’জনকে নৃশংসভাবে হত্যা ও হেযবুত তওহীদের উপস্থিত সকল কর্মীকে গুরুতর আহত করার পর আশেপাশের থানা থেকে আগত র‌্যাপ, পুলিশ, বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হেযবুত তওহীদের আহত কর্মীদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় বেরিকেড দিয়ে পুলিশের গাড়িতে হামলা করা হয় এবং সোনাইমুড়ী থানাতেও হামলা করা হয়। প্রায় সকল মিডিয়াতে সেদিন ঘটনাটি বিভিন্নভাবে প্রচারিত হয়।
এই ঘটনার দুই মাসেও প্রধান আসামীরা গ্রেপ্তার না হওয়া প্রসঙ্গে আক্ষেপ প্রকাশ করে হেযবুত তওহীদের কুমিল্লা অঞ্চলের আমীর নিজাম উদ্দিন বলেন, সেদিনের সেই তা-ব চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। তারা পরিকল্পিতভাবে আমাদের ১১৪ জন লোককে হত্যা করার জন্যই আক্রমণ করেছিল কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। তারা আসলে এই ঘটনা ঘটিয়ে নির্বাচনী ফায়দা হাসিল করতেও চেয়েছিল। তারা কী ভয়াবহ তা-ব চালিয়ে আমাদের দু’জন নিরপরাধ মুমিন, মুসলিম ভাইকে শহীদ করেছে, বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিয়েছে, সব মালামাল লুট করে নিয়েছে সেটা আপনারা দেখেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এজাহারভুক্ত আসামীরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। সরকারের কাছে আসামীদেরকের গ্রেপ্তার করে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিডিপি/ আমিরুল

Comments
Loading...