সাটুরিয়ায় বন্যায় ফসলি জমি বিলীন; পানিবন্ধি প্রায় ২০ হাজার
সাটুরিয়ায় বন্যায় ফসলি জমি বিলীন; পানিবন্ধি প্রায় ২০ হাজার। ছবিটি সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা এলাকায় থেকে তোলা।
আব্দুস ছালাম সফিক, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ): টানা ১২ দিন ধরে মানিকগঞ্জের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। বেড়েছে ধলেশ্বরী ও কালিগঙ্গাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার ৯ ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। সরকারী তথ্যে প্রায় ৮হাজার হলেও বাস্তবে প্রায় ২০হাজার মানুষ পানিবন্দি। নিচু এলাকার লোকজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু সড়ক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিলেও দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসিদের। বেশিরভাগ পরিবার এখনো গবাদি পশু নিয়ে ঘর-বাড়িতে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সংকটে আছে এসব এলাকার মানুষ। তলিয়ে গেছে ১শত কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ৩০টিরও বেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।সাটুরিয়ায় বন্যায় ফসলি জমি বিলীন; পানিবন্ধি প্রায় ২০ হাজার। ছবিটি সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা এলাকায় থেকে তোলা।
বন্যার পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যাচ্ছে নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকার ঘর-বাড়ি। উপজেলা থেকে দরগ্রাম-সাভার সংযোগ সড়কটি ধসে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ৫০ গ্রামের মানুষ। বরাইদ ইউনিয়নের জালশুকা ও কৌড়ির চরে বন্যার পানির মধ্যেই বসবাস করছে শতাধিক পরিবার। অনেক পরিবার তাদের গবাদি পশু উচু স্থানে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বরাইদ, তিল্লি, হরগজ, ফুকুরহাটি, দিঘুলীয়া ইউনিয়নে বন্যায় প্রায় ৮শতাধিক হেক্টর জমির ফসল বিলিন হয়ে গেছে। বোনা আমন, রোপা আমন, পাট, ভুট্টাসহ সবজি ও মরিচের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাভার, আগ-সাভার, ছনকা, বরাইদসহ অনেক এলাকায় পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
সাভার গ্রামের মৃত আমির উদ্দিনের ছেলে আবু সাঈদ (৪৫) জানায়, দীর্ঘ বন্যায় হাতে কাজ না থাকায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে পরিবার গুলো। পানি বন্দি মানুষ মানবেতর দিন-যাপন করছে।
আগ-সাভার গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে এমদাদুল হক (৪৮) জানায়, বন্যার কারণে হাঁস-মুরগি মরে গেছে। দিন মজুরের হাতে কাজ নেই। ধার-দেনা করে আর কতদিন চলে। সরকার কি আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকাবে না।
কৌড়ি গ্রামের মৃত ছায়েদ আলী স্ত্রী শোভাতন বেগম (৭২) জানায়, বাড়িতে ৮/৯ দিন কষ্ট করে পানিবন্দি রয়েছি । রান্নার চুলা জ্বালাতে পারছি না। কোন রকম খেয়ে না খেয়ে আছি। এখন পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধিদের দেখা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
স্থানীয় বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ জানায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট প্রয়োজনীয় ত্রাণ বরাদ্দ চেয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মূর্তাজা মাসুম জানান, আমরা গতকাল পর্যন্ত উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ পচাত্তুর হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাদ্য, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।