এ ব্যাপারে গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অফিসার মাহমুদ হোসাইন বলেন, এনআইডি সার্ভারে প্রবেশাধিকার পাওয়া গেলে সঠিকভাবে গ্রাহক তথ্য যাচাই করা সহজ হবে। এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বলে মত দেন তিনি।
যেভাবে সিমকার্ড নিবন্ধন : বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব মোবাইল ফোন গ্রাহক অর্থাৎ প্রতিটি সিমকার্ড যথাযথ নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ জন্য আবারও নির্ধারিত ফরমে গ্রাহকদের নিবন্ধন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের অনিয়ম ও ফাঁকির সুযোগ না থাকে সে জন্য বিশেষভাবে তদারকি করা হবে। নিবন্ধিত গ্রাহকদের প্রদত্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারে মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। এ চুক্তির ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু করতে খুব শিগগির মন্ত্রণালয় থেকে বিটিআরসিকে চিঠি দেওয়া হবে। বিটিআরসি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।
দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টার পরও এনআইডি সার্ভারে মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রবেশে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমঝোতার ব্যাপারে অগ্রগতি না হওয়া সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, এ বিষয়টি মন্ত্রণালয় অবগত। এ কারণে এবার বিশেষভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে যেন সিমকার্ড নিবন্ধন চলাকালীন সময়ের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করা যায়।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, গ্রাহকদের নিবন্ধনে উৎসাহিত করার জন্য মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে সব গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধনের সুফল এবং নিবন্ধন না করার ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত করার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিজ্ঞাপনেও সিমকার্ড নিবন্ধন সংক্রান্ত বার্তা প্রচার বাধ্যতামূলক করা হবে, যেমন সিগারেটের প্যাকেটে স্বাস্থ্যের ক্ষতি সম্পর্কিত সতর্কবার্তা থাকে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমেও এ ব্যাপারে বিশেষভাবে প্রচার চালানো হবে।
ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদেরও নিবন্ধন হবে :শুধু মোবাইল ফোনের গ্রাহক নন, সিমকার্ডের ডিলার এবং খুচরা বিক্রেতাদেরও তালিকা করা হবে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে এই তালিকা নেওয়া হবে। সে অনুযায়ী তারা নিবন্ধিত হবেন।
এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জানান, অনিবন্ধিত সিমকার্ড বিক্রি এবং ভুয়া নিবন্ধনের জন্য বরাবরই সিমকার্ড বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিক্রেতাদের কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকা নেই। ফলে অনিবন্ধিত সিমকার্ড বিক্রেতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বিক্রেতাদেরও সুনির্দিষ্ট তালিকা করা হবে। নতুন সিমকার্ড বিক্রির ক্ষেত্রে গ্রাহককে অবশ্যই যে বিক্রেতার কাছ থেকে সিমকার্ড কিনেছেন তার প্রমাণপত্রও সংগ্রহ করতে হবে। নতুন গ্রাহকের সিমকার্ডের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিক্রেতার নাম, ঠিকানাও তথ্য হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে মোবাইল ফোন অপারেটরদের।
অনিবন্ধিত সিমকার্ড বিক্রিতে অপারেটরদের জবাবদিহিতা :সিমকার্ড নিবন্ধন শুরুর আগেই এতদিন যেসব সিমকার্ড অনিবন্ধিতভাবে বিক্রি হয়েছে কিংবা ভুয়া নিবন্ধনে বিক্রি হয়েছে সে সম্পর্কে জবাবদিহিতা চাওয়া হবে অপারেটরদের কাছে। বৈঠকে বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনিবন্ধিত এবং ভুয়া নিবন্ধনে সিমকার্ড বিক্রির ক্ষেত্রে ডিলারদের সঙ্গে মোবাইল ফোন অপারেটরদের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ধরনের প্রায় ৫০ হাজার সিমকার্ডের তথ্য রয়েছে। এ ব্যাপারে মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে জানতে চাওয়া হবে ডিলারদের সঙ্গে তাদের যোগাসাজশের বিষয়টি সঠিক কি-না। এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জানান, বিটিআরসির কাছে যে প্রমাণ আছে তার ব্যাপারে মোবাইল ফোন অপারেটরদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতেই তাদের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হচ্ছে।
এর পাশাপাশি নিবন্ধনবিহীন সিমকার্ড বিক্রির বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের অভিযান চলমান থাকবে। জেলায় জেলায় এ অভিযান পরিচালনার জন্য এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এ ছাড়া বিটিআরসির ২০১০ সালের আইনটি পরিবর্তন করে কাজে গতিশীলতা নিয়ে আসারও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। কারণ আইনের বাধার কারণে সিমকার্ড নিবন্ধনের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিটিআরসির সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে আইনের কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা হবে তা এখনও সুনির্দিষ্ট করা হয়নি বলে জানান তিনি।
অনেক অপরাধের মাধ্যম অনিবন্ধিত সিমকার্ড : আইন অনুযায়ী নতুন সিমকার্ড কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহক তথ্য ফরম পূরণ বাধ্যতামূলক। এ ফরমেই গ্রাহক নিবন্ধন হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু ২০০৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ সিমকার্ড বিক্রি হয় গ্রাহক নিবন্ধন ছাড়াই। যে কারণে অনিবন্ধিত সিমকার্ড ব্যবহার করে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাক মেইলিংয়ের পাশাপাশি অবৈধ আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানও চলে অবাধে। এ কারণে ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সব মোবাইল গ্রাহকের পুনঃনিবন্ধন করা হয়। কিন্তু সেই নিবন্ধন নিয়েও পরবর্তী সময়ে নানা অনিয়ম ও ভুলের অভিযোগ ওঠে। জাতীয় পরিচয় পত্রের সার্ভারে মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রবেশাধিকার না থাকার কারণে গ্রাহকের সঠিক তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে আবারও বিক্রেতাদের পাশাপাশি রাস্তা-ঘাটে ফেরিওয়ালার কাছেও অনিবন্ধিত সিমকার্ড বিক্রি শুরু হয়। আবারও এসব সিমকার্ড ব্যবহার করে হুমকি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা বেড়ে যায়। পাশাপাশি অবৈধ আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানেও ব্যবহৃত হতে থাকে অনিবন্ধিত সিমকার্ড। বিটিআরসি গত কয়েক বছরে এ ধরনের প্রায় ৭১ লাখ সিমকার্ড বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া সম্প্রতি মোবাইলভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হলেও সেখানেও শুরু হয় নতুন নতুন প্রতারণা। গত জুলাই মাসে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই তারানা হালিম অবৈধ সিমকার্ড বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা নেন।
এ ব্যাপারে তারানা হালিম আরও বলেন, অনিবন্ধিত সিমকার্ডের ব্যবহার যে কোনো নিরপরাধ সাধারণ মানুষকেও বিপদে ফেলতে পারে। কারণ কোনো অপরাধী তার সিমকার্ড অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের পর তা বিক্রি করতে পারে এবং এই সিমকার্ড না বুঝে কোনো সাধারণ মানুষ কিনে সেই অপরাধীর দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে ফেলতে পারে। এ কারণে সিমকার্ড পুনঃনিবন্ধনে সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।সমকাল
বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর