কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের কাঠালবাড়ি থেকে চওড়াহাট পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়ক তলিয়ে যাওয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলাসহ সোনাহাট স্থল বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বরকত মোঃ খুরশিদ আলম জানান, কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ের সাড়ে ৪ কিলোমিটার ও কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সহড়ের সাড়ে ৯ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে আছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম ভুরুঙ্গামারী সড়কের পাটেশ্বরী এলাকায় দুইটি পয়েন্টে ধ্বসে গেছে।
কুড়িগ্রাম পৌরসভা এলাকার ভেলাকোপায় দুলু মিয়ার দেড় বছরের শিশু বাবু বন্যার পানিতে ডুবে ও হলোখানা ইউনিয়নের খামার হলোখানায় খালেকের স্ত্রী জোসনা (২৫) এর সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে।
বন্যার পানিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সাড়ে ৫ শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠন।
সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ১২৪ সোন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী ও সদর উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। তলিয়ে গেছে ৪০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত।
পানির তীব্র ¯্রােতে সদরের আরডিআরএস বাজারে ৩০ মিটার ও ফুলবাড়ী উপজেলার গোড়কমন্ডলে ১৫ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে ১০টি গ্রাম ও কাঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাংটুর ঘাট এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। প্রবল পানির তোরে ধরলার তীরবর্তী মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে গবাদি পশুসহ উচুঁ স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভরে যাওয়ায় অনেকেই উচু সড়কে খোলা আকাশের নীচে গবাদি পশু ও পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করছে।
সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের বাংটুর ঘাট এলাকার আছিয়া খাতুন জানান, রোববার সকালে বাঁধ ভেঙ্গে ঘর-বাড়ির তলিয়ে গেছে। শুধু মাত্র গরু ছাগল নিয়ে কাঠালবাড়ি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। স্কুলের মাঠও পানিতে তলিয়ে গেছে।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, আমার ইউনিয়নের সম্পুর্ণটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ২৭ টি ঘর-বাড়ি পানির প্রবল ¯্রােতে ভেসে গেছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যা মোকাবেলায় সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য সাড়ে ১১ লাখ টাকা ও ৫শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বিভাগ জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৮৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, সহ অন্যান্য ১৩টি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।