গুলশান-শোলাকিয়া হামলা: অস্ত্র আসে ভারত হয়ে, অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে

বিডিপি ডেস্ক:  রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের ব্যবহৃত অস্ত্র এসেছে ভারত হয়ে। কিন্তু অস্ত্রে প্রস্তুতকারক দেশের নাম লেখা নেই। এ ছাড়া এই দুই হামলার জন্য অর্থ আসে বিদেশ থেকে, হুন্ডির মাধ্যমে। এই অর্থগ্রহীতাকে চিহ্নিত করা গেলেও শনাক্ত করা যায়নি অর্থদাতাকে। সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কেন্দ্রে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। একই সঙ্গে তিনি জানান, ওই দুই হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী রাজীব গান্ধী ওরফে প্রভাষ নামে এক ব্যক্তি। ছদ্মবেশী এই জঙ্গির পরিচয় জানার ও তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার জন্য অর্থ এসেছে বাইরে থেকে। কিন্তু সেটি বাংলাদেশের কেউ বিদেশ থেকে পাঠিয়েছেন, নাকি বাংলাদেশ থেকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পাঠিয়েছে যেন ধরা না পড়ে, তা এখনো তদন্তসাপে। অর্থ এসেছে হুন্ডির মাধ্যমে। সেই অর্থ যে গ্রহণ করেছে তার পরিচয় পাওয়া গেছে। তাকে ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন, একটা সূত্র থেকে জানতে পেরেছি প্রায় ১৪ লাখ টাকা এসেছে হুন্ডির মাধ্যমে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা ওই টাকার বেশিটা বাড়িভাড়া ও অস্ত্র কেনার পেছনে ব্যয় হয়। এ বিষয়ে তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। কোন দেশ থেকে এ অর্থ এসেছে তা আমরা খুঁজে পেয়েছি। তবে কারা পাঠিয়েছে তা তদন্তসাপেক্ষে জানা যাবে।
মনিরুল ইসলাম জানান, গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় রাজীব গান্ধী ওরফে প্রভাষ নামে আরও একজন জড়িত। তিনি বলেন, রাজীব দুই হামলার ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। জঙ্গি কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত ওই ব্যক্তি কাজ করছিলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জেএমবির ‘উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডার’ হিসেবে। তার প্রকৃত নাম আমরা জানতে পারিনি। গুলশানের ঘটনার আগে দুজন এবং শোলাকিয়ার ঘটনার আগে একজন টেরোরিস্টকে সে নিজে উত্তরবঙ্গ থেকে পাঠিয়েছিল, যাদের সে আগেই প্রশিণ দিয়েছিল। এই রাজীবসহ গুলশান হামলার অপারেশনাল কমান্ডার নুরুল ইসলাম মারজান ও আরেক জঙ্গি বাশারুজ্জামান দেশেই আত্মগোপন করে আছে বলে আমাদের ধারণা। এ ছাড়া তথ্য আছে, হামলার পর খালিদ ও রিপন নামে দুই জঙ্গি ভারতে পালিয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশের অভিযানে জঙ্গিদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শক্তি য় হয়েছে। তবে মারজান, বাশারুজ্জামান ও রাজীব আত্মগোপন করেছে। যে কোনো সময় তারা আবার সংঘবদ্ধ হতে পারে।
আজিমপুর অভিযানে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার তিন নারী জঙ্গি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা এখনো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। তিনি জানান, ওই বাসা থেকে যে তিন শিশুকে সেদিন উদ্ধার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে মেজর জাহিদের মেয়েকে তার নানা-নানির হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে তানভীর কাদেরীর এক ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছেন শিশু আদালত। এ প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, কিশোর হিসেবেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, সে যতটুকু জানে তা আমরা জানার চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হন। ওই হামলায় জঙ্গিরা একে-২২ সেমি অটোমেটিক রাইফেল ও নাইন এমএম পিস্তলের পাশাপাশি হাতে তৈরি গ্রেনেড (আইইডি) ও ছুরি-চাপাতির মতো ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে। গুলশানে হামলার এক সপ্তাহের মাথায় ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের মাঠের কাছে ফের হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই সময়ও পিস্তলের মতো আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি গুলশানের ব্যবহৃত একই ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়।

Comments (0)
Add Comment