‘দেশের মাটি রক্ষায় উগ্রবাদ-সাম্প্রদায়িকতা-অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ঐকবদ্ধ হতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের মাটি রক্ষায় স্বার্থের রাজনীতি, ধর্মব্যবসা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, ধর্মব্যবসা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান গ্রহণ করলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদ হবে, প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের মাটি অস্ত্রব্যবসায়ী পরাশক্তিধর রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের কবল থেকে রক্ষা পাবে। এটা একাধারে আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য এবং সামাজিক কর্তব্য। এখনও যদি আমরা দেশ ও জাতির স্বার্থে এসকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ না গড়ে তুলি তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে, তখন আর হয়ত কিছুই করার থাকবে না।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় রাজধানীর বিজয়নগরের হোটেল ৭১ -এ হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে আয়োজিত “উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, বিগত শতাব্দীর দুটো বিশ্বযুদ্ধের দগদগে ঘা এখনও এ সভ্যতার পিঠে দৃশ্যমান। যুদ্ধের প্রত্যক্ষ পরিণামে মৃত্যু বরণ করেছে ১৪ কোটি মানুষ। আহত, বিকলাঙ্গ, উদ্বাস্তুর কোনো হিসেব নেই। যুদ্ধপরবর্তী অভাব, দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ, মহামারীতে মারা গেছে আরো কয়েক কোটি মানুষ। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে জন্ম দেওয়া হয়েছিল জাতিসংঘসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার। কিন্তু যুদ্ধ একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ১৯০০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বিশ্বে ১০৮৫টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের মধ্য দিয়ে আবারও একটা ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধের পদধ্বনি দুনিয়া শুনতে পাচ্ছে। যুদ্ধের পরিণামে সৃষ্ট বিভিন্ন সংকট, যেমন জ্বালানী সংকট, বিদ্যুৎসংকট, দ্রব্যমূল্য, বাণিজ্য অবরোধ ইত্যাদির প্রভাব আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকেও ঘিরে ধরেছে। তাদের যুদ্ধের ব্যয়ভার পরোক্ষভাবে আমাদেরকেও বহন করতে হচ্ছে।

“১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার মূল দাবি ছিল এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যেখানে সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রবাদ, ধর্মান্ধতা, জুলুম, নিপীড়ন থাকবে না, বাকস্বাধীনতাসহ অন্যান্য মানবাধিকার যেখানে সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে। যে স্বপ্ন বুকে ধারণ করে দেশটি স্বাধীন করেছেন এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবী, সৈনিক, ছাত্রজনতা, আজ স্বাধীনতার ৫১ বছর পর আমরা পর্যালোচনা করে সে স্বপ্নের কতটুকু বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি? হ্যাঁ, এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমরা অবকাঠামোগত, বস্তুগত উন্নয়ন অবশ্যই করে চলেছি। কিন্তু আমাদের দেশে স্বার্থের রাজনীতির যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দীর্ঘকাল থেকে চলে আসছে, তা ক্রমান্বয়ে ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। যদি এই হানাহানির রাজনীতি এখনই বন্ধ করা না হয়, তবে আমাদেরকেও সিরিয়া, লিবিয়া, পাকিস্তান, ইরাকের মত পরিণতি ভোগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সাম্প্রদায়িকতা, রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার, ধর্মীয় উগ্রবাদের চাষাবাদই এ সমস্ত দেশগুলোকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।”

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। একটি গোষ্ঠী ইসলামকে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার (ধর্মব্যবসা) করছে। তারা ধর্মকে অবলম্বন করে উগ্রতা, বাড়াবাড়ি, ধর্মান্ধতার চর্চা করছে। সুযোগ পেলেই ভিন্নমতের মানুষকে কাফের, মুরতাদ, মালাউন, ভারতের দালাল, ইসরাইলের দালাল, নাস্তিকের দালাল বলে ফতোয়াবাজি, উন্মাদনা সৃষ্টি করে বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে সেটাকে তওহীদী জনতার হামলা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। এরা ধর্মপ্রাণ জনতার ইমানী চেতনাকে হাইজ্যাক করে তা ভুল পথে চালিত করে নিজেদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ হাসিল করছে। ধর্মীয় সমাবেশে তারা উস্কানিমূলক, উগ্রবাদী, অযৌক্তিক, বিজ্ঞানবিরোধী, নারীবিদ্বেষী ফতোয়া ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারী বক্তব্য প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য এ দেশকে একটি অকার্যকর মোল্লাতান্ত্রিক উগ্রবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা। সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক নেতাও এ জাতীয় ধর্মীয় উগ্রতা ও সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করে থাকেন। এই উদ্দেশ্যে দেশে বারবার সংখ্যালঘু শ্রেণির উপর নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে, অনর্থক ধর্মীয় ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, সঙ্গীতালয়, সরকারি অফিস, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, পিটিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।

তাদের এ ধরনের উগ্রবাদী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মাঠে ময়দানে সোচ্চার ভূমিকা রাখছে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ। এজন্য তারা হেযবুত তওহীদকে টার্গেট করেছে। সারাদেশে সাড়ে চার শতাধিক স্থানে তারা এ আন্দোলনের সদস্যদের উপরে, তাদের বাড়িঘরে, আন্দোলনের কার্যালয়ে হামলা করেছে। সোনাইমুড়িতে হেযবুত তওহীদের এমামের বাড়িতে কমপক্ষে চারবার বড় ধরনের হামলা চালানো হয়েছে। ২০১৬ সালে সেখানে তাঁর বাড়ির আঙিনায় নির্মাণাধীন মসজিদকে গির্জা বলে গুজব রটিয়ে হামলা চালায় স্থানীয় ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তারা সেখানে হেযবুত তওহীদের দুইজন সদস্যকে জবাই করে, হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা করে, তাদের চোখ তুলে নেয়। তারপর তাদের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। কয়েকটি বাড়ি লুটপাট করে ভস্মীভূত করে দেয়।

এ সময় তিনি সকলকে স্বার্থের রাজনীতি, ধর্মব্যবসা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে জানান।

Comments (0)
Add Comment