নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ৪নং শালখুরিয়া ইউনিয়নের বড় তেতুলিয়া কৃষক সমবায় সমিতির দুটি গভীর নলকুপে বিদ্যুৎ সংযোগ ও মালিকানা নিয়ে দ্বন্দের কারণে কৃষকের ১ হাজার বিঘা জমির বোরো চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে কৃষকেরা। তেতুলিয়া গ্রামের কৃষক সমবায় সমিতির সদস্যরা জানান, ১৯৭৮ সালে উপজেলা বিআরডিবি কর্তৃক ওই মৌজায় দুটি গভীর নলকুপ সমিতির মাধ্যমে স্থাপন করা হয়। এরপর ঋণের বেড়াজালে পড়ে যায় গভীর নলকুপ। সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তার কারনে ঋণের মাধ্যমে গ্রহণ করা টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় সমিতি। এরপর ২০০২ সালে সেই সময়ের উপজেলা ঋণ কমিটি যথাক্রমে ওই গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন ও আব্দুর রব তোতার নিকট টাকা পরিশোধ স্বাপেক্ষে মালিকানা হিসেবে ডিড সম্পন্ন করে দেয় উপজেলা ঋণ আদায় কমিটি। এরপর থেকে দীর্ঘদিন গভীর নলকুপ দুটো ব্যক্তি মালিকানায় চলতে থাকে। এদিকে ওই গ্রামের পূর্বের সমিতির সদস্য ও নতুন সদস্যদের নির্বাচনে পুনরায় তেতুলিয়া কৃষক সমবায় সমিতি গঠিত হয়। এরপর সমিতির সভাপতি ও সদস্যরা সমিতির অধীনে গভীর নলকুপটি পরিচালনা করার জন্য এগিয়ে আসে। গত বছর বোরো মৌসুমে সেচের প্রয়োজন হলে ব্যক্তি মালিকানা ও সমিতির সদস্যদের মাঝে দেখা দেয় উত্তেজনা। সে সময় উপজেলা সেচ কমিটি সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরে আলম সিদ্দিকী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বজলুর রশীদ দুই পক্ষের সংঘাত এড়াতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রেফাউল আজমকে সেচ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্ব ভার অর্পন করেন। বর্তমানে গঠিত সমিতি ও ক্রয় করা মালিকদের মাঝে দেখা দেয় দ্বন্দ। এদিকে ওই গভীর নলকুপের সেচ কার্যক্রম চালাতে উচ্চ আদালতে আবেদন করে সমিতি পক্ষরা। আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দিনাজপুর ২ এর জেনারেল ম্যানেজারকে দায়িত্ব দেন। এ বিষয়ে জেনারেল ম্যানেজার সন্তোষ কুমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই গভীর নলকুপ দুটির বিদ্যুৎ সংযোগের বেলাল হোসেন ও আব্দুর রবের ব্যক্তি নামে রয়েছে। এদিকে ২রা জানুয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধা করার জন্য আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় নবাবগঞ্জ বিআরডিবি অফিসের অফিস সহকারী মো. মোজাম্মেল হক ও চেয়ারম্যান মো. আজিজার রহমান অভিযোগ করে জানান। সমিতির দেয়া গভীর নলকুপ বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। বেলাল ও আব্দুর রব জানান, গভীর নলকুপের বকেয়া টাকা পরিশোধ করে সেই সময়ের বিআরডিবি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রউফ উপজেলা সেচ কমিটির সিদ্ধান্ত ক্রমেই ঋণের টাকা পরিশোধ বুঝে নিয়ে তাদেরকে হস্তান্তর করে। এদিকে গত ১৮/০৭/২০০৭ ইং তারিখে স্মারক নং বাপউবো/সেচ-৪(৬)/৯১-৯৬/৯৯-০২/৫৬৫৫ নং স্মারকে আব্দুস সোবহান শিকদার মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ করেছেন কৃষক সমবায় সমিতির মালিকানাধীন গভীর নলকুপ/সেচ যন্ত্র অবৈধভাবে বিক্রয় বিষয় উল্লেখ করে জানিয়েছেন। সরকার কৃষি উন্নয়ন এবং সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারনের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র কৃষক ও প্রান্তিক চাষীদের সাহায্যার্থে ভর্তুকি দিয়ে গভীর নলকুপ/সেচ যন্ত্র সরবরাহ করেছে। সামান্য ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকার অধিক মূল্যের গভীর নলকুপ নাম মাত্র মূল্যে সমবায় সমিতিকে সেচ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এক শ্রেণীর দুর্নিতীবাজ কর্মকর্তা সমিতির সদস্য এবং প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে কৃষক সমবায় সমিতিতে স্থাপিত গভীর নলকুপ সমূহ অবৈধভাবে বিক্রয় করে দিচ্ছে, যা আইন সম্মত নয় এবং দন্ডনীয় অপরাধ। উল্লেখ্য গভীর নলকুপ সরবরাহের পূর্বে সমিতির সাথে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক কোন গভীর নলকুপ বিক্রয় কিংবা হস্তান্তরযোগ্য নয়। কোন সমিতি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে গভীর নলকুপ বিক্রয় করলে তা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত পত্রে তা উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার কৃষকেরা সেচের জন্য অপেক্ষা করছে। এখন দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।