পাল্টে গেল সব পরিসংখ্যান, প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে জয় পেল ভারত

স্পোর্টস ডেস্ক:

মুখোমুখি লড়াইয়ে পূর্বের সব পরিসংখ্যান দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে থাকলেও তাদের নাকানিচুবানি খাইয়ে জয় ছিনিয়ে নিলো এশিয়ার অন্যতম ক্রিকেট শক্তি ভারত। বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১৩০ রানে বিশাল জয় পায় মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। বিশ্বকাপে এর আগে কখনোই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে না পারার জ্বালা মেটাতেই যেন এদিন মাঠে নেমেছিল ভারতীয়রা। টস জিতে ব্যাটিং এ নেমে শিখর ধাওয়ানের অনবদ্য সেঞ্চুরি ও অজিঙ্কা রাহানের ৭৮ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ভর করে ৩০৭ রানের বিশাল পুঁজি দাঁড় করায় বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

দিনের শুরুতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামা ভারত দলের শুরুটা ভালো হয়নি। দলীয় ৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় তারা। ডি ভিলিয়ার্সের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে যান রোহিত শর্মা। দ্বিতীয় উইকেটে কোহলির সঙ্গে ১২৭ রানের জুটি গড়ে দলকে সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে দেন ম্যাচ সেরা ধাওয়ান। ইমরান তাহিরের বলে কোহলি দু প্লেসির তালুবন্দি হলে ভাঙে ২৪.২ ওভার স্থায়ী জুটি। তৃতীয় উইকেটে রাহানের সঙ্গে ১৬.৩ ওভার স্থায়ী ১২৫ রানের আরেকটি চমৎকার জুটি উপহার দেন ধাওয়ান। পার্নেলের বলে আমলার ক্যাচে পরিণত হয়ে থামে তার ১৩৭ রানের দারুণ ইনিংসটি। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটাই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন স্টিফেন ফ্লেমিং। ২০০৩ এর আসরে দলকে জয় এনে দেয়ার পথে ১৩৪ রানে অপরাজিত ছিলেন নিউ জিল্যান্ডের এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের সপ্তম শতকে পৌঁছানো ধাওয়ানের ১৪৬ বলের ইনিংসটি ১৬টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো ছিল। ব্যক্তিগত ৫৩ রানে পার্নেলের বলেই আমলার হাতে একবার জীবন পেয়েছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ধাওয়ানের বিদায়ের পর সুরেশ রায়না, রাহানে ও রবিন্দ্র জাদেজার দ্রুত বিদায়ে অস্বস্তিতে পড়ে ভারত। ৭৯ রান করা রাহানের ৬০ বলের আক্রমণাত্মক ইনিংসটি গড়া ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায়। অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ১০ বলে খেলা ১৮ রানের আক্রমাত্মক ইনিংসে তিনশ’ পার হয় ভারতের সংগ্রহ। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার মর্নে মরকেল ২ উইকেট নেন ৫৯ রানে।
জবাবে ৩০৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে প্রোটিয়াদের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করেন হাশিম আমলা এবং কুইন্টন ডি কক। আর ভারতের হয়ে বোলিং সূচনা করেন উমেশ যাদব। ম্যাচের চতুর্থ ওভারেই ডি কককে ফেরান মোহাম্মদ সামি। দলীয় ১২ রানে মিড অফে দাঁড়ানো বিরাট কোহলির হাতে ধরা পড়ার আগে ডি কক করেন ৭ রান। এতে প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে কোনো শতক ছাড়াই সাজঘরে ফেরেন ডি কক। ওপেনার ডি কককে হারানোর পর ব্যক্তিগত ২২ রান করে আরেক ওপেনার হাশিম আমলা মোহিত শর্মার বলে সামির হাতে ধরা পড়েন। ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৪০ রানে ফেরেন আমলা। দুই ওপেনারকে হারিয়ে বেশ সর্তকভাবেই খেলতে থাকে প্রোটিয়ারা। তবে, ২৩তম ওভারের পঞ্চম বলে রানআউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন ডি ভিলিয়ার্স। ব্যক্তিগত ৩০ রান করে রান আউটের শিকার হন তিনি। ভিলিয়ার্সের দেখানো পথে সাজঘরে ফেরেন ফাফ ডু প্লেসিস। ব্যক্তিগত ৫৫ রান করে মোহিত শর্মার বলে তুলে মারতে যেয়ে মিড অফে শিখর ধাওয়ানের তালুবন্দি হন তিনি। এরপর অশ্বিনের বলে স্লিপে দাঁড়ানো সুরেশ রায়নার হাতে ধরা পড়েন ডুমিনি (৬ রান)। প্রোটিয়াদের ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে দলীয় ১৫৩ রানের মাথায়। ব্যক্তিগত ২২ রান করে ডেভিড মিলার রানআউট হওয়ার পর এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে একই ওভারে সাজঘরের পথ ধরেন ফিল্যান্ডার। ফলে, সপ্তম উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। এরপর এক রান যোগ করে ম্যাচের ৩৭তম ওভারে মোহাম্মদ সামির বলে রবিন্দ্র জাদেজার তালুবন্দি হন ডেল স্টেইন। প্রোটিয়াদের নবম উইকেটের পতন ঘটে ৩৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে। আশ্বিনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মরনে মরকেল। এরপর ৪০ তম ওভাবে রবীন্দ্র জাদেজা ইমরান তাহিরকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলে গুটিয়ে দেন প্রোটিয়াদের। প্রথমবার বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোয় মেলবোর্ন স্টেডিয়ামে ভারতীয় সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। ১৩৭ রান করে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন শিখর ধাওয়ান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভার ৩০৭/৭ (রোহিত ০, ধাওয়ান ১৩৭, কোহলি ৪৬, রাহানে ৭৯, রায়না ৬, ধোনি ১৮, জাদেজা ২, অশ্বিন ৫*, সামি ৪*; মরকেল ২/৫৯, তাহির ১/৪৮, স্টেইন ১/৫৫, পার্নেল ১/৮৫)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪০.২ ওভারে ১৭৭ (আমলা ২২, ডি কক ৭, দু প্লেসি ৫৫, ডি ভিলিয়ার্স ৩০, মিলার ২২, ডুমিনি ৬, পার্নেল ১৭*, ফিল্যান্ডার ০, স্টেইন ১, মরকেল ২, তাহির ৮; অশ্বিন ৩/৪১, সামি ২/৩০, মোহিত ২/৩১, জাদেজা ১/৩৭)।

Comments (0)
Add Comment