অবরোধের মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতালের কারণে আজকের ও আগামী মঙ্গলবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজকের পরীক্ষা আগামী ১৩ ফেব্র“য়ারি শুক্রবার এবং ১০ ফেব্র“য়ারি মঙ্গলবারের পরীক্ষা আগামী ১৪ ফেব্র“য়ারি শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।
গত কাল চট্টগ্রাম ডাক বাংলোয় এক সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষা পেছানোর ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের আমরা সহিংসতার মধ্যে ঠেলে দিতে পারি না। তাদের জীবনের নিরাপত্তা সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। হরতাল-অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে নেওয়ার চাপ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। অন্যান্য পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করে একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী ন্যূনতম পরীক্ষার আগে ২ ঘণ্টা আর পরের ২ ঘণ্টা হরতালের আওতামুক্ত রাখার জন্য অনুরোধ জানান।
৮ ফেব্র“য়ারি রোববার এসএসসিতে ইংরেজি (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, ১০ ফেব্র“য়ারি মঙ্গলবার ইংরেজি (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে ৮ ফেব্র“য়ারি আরবি প্রথম পত্র ও ১০ ফেব্র“য়ারি আরবি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা হওয়ার কথা। এছাড়া কারিগরি বোর্ডের অধীনে ৮ ফেব্র“য়ারি গণিত-২ (১৯২৩) ও গণিত-২ (৮১২৩) এবং ১০ ফেব্র“য়ারি বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়-২ (১৯২৪) (সৃজনশীল) ও সামাজিক বিজ্ঞান-২ (৮১২৪) (সৃজনশীল/সাধারণ) বিষয়ের পরীক্ষা নির্ধারিত ছিল। এই সব কটি পরীক্ষা এখন আগামী শুক্র ও শনিবার যথাক্রমে সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলবে।
এনিয়ে এবারের এসএসসি ও সমমানের চার দিনের ২০টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে গেল। এর আগে হরতালের কারণে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর দিন গত ২ ফেব্র“য়ারির এবং দ্বিতীয় দিনের অর্থাৎ ৪ ফেব্র“য়ারির পরীক্ষাও পিছিয়ে দেওয়া হয়। অবরোধ থাকলেও শুক্র ও গত কাল এসব পরীক্ষা নির্বিঘেœ হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এর আগে গত কাল সকালে চট্টগ্রাম নগরীর কলেজিয়েট স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের মাধ্যমে ২০ দলেরপ্রতি হরতার অবরোধ বন্ধ করার আহ্বান জানান। মন্ত্রী বলেন, “মানুষ পুড়িয়ে মারা, গাড়িতে আগুন দেয়া, ককটেল-পেট্রলবোমা মারা এগুলো রাজনীতি নয়। যদি আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের স¤পৃক্ততা থাকত তাহলে জনগণ রাস্তায় নেমে আসত, জনগণই অবরোধ করত। হরতালে দোকানপাট বন্ধ করে আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করত। কিন্তু আন্দোলনের নামে দেশে যা চলছে তা হত্যাযজ্ঞ। এটা কোন সভ্য দেশে চলতে পারেনা।”
পরীক্ষার দিন ছাড়া অন্যদিন হরতাল দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে হরতাল না দেওয়ার জন্য অনেকবার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে জাতির বিরুদ্ধে আন্দোলন ঘোষণা করেছেন। লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। পরীক্ষার দিন ছাড়া অন্যদিন হরতাল দিন। আজকের এ প্রজম্ম আগামীতে দেশ পরিবচালনা করবেন। তাদের বেড়ে উঠা যদি এখন বাধাগ্রস্থ হয় তবে তা জাতির জন্য শুভ কিছু বয়ে আনবে না।” মন্ত্রী বলেন, “যারা এসএসসি পরীক্ষার্থী তারা তো কোন দলের নয়। তাদের মধ্যে বিএনপি নেতাদের ছেলেমেয়েও আছে, জামায়াতের নেতাদের ছেলেমেয়েও আছে। তারা পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছে না কি হবে। এতে তাদের মধ্যে আÍবিশ্বাসের ঘাটতি থাকবে। আন্দোলনের নামে তাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করা হবে, এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। ”
পরীক্ষার্থীদের প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনি রাজনীতি করেন জনগণের জন্য। আর জনগণ যদি এ রাজনীতিতে খুশি না থাকে তবে সে রাজনীতি করে লাভ নেই। আপনারও মন আছে, বিবেক আছে। পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যা বন্ধ করে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করুণ। পরীক্ষার্থীদের শিক্ষার পথকে রুদ্ধ করবেন না।” নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে পরীক্ষা শুরু করেছি। রাজনীতির কিছু আচার আচরণ আছে। রাজনৈতিক আচরণ ভুলে গিয়ে সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধ করা দরকার। এ অবস্থায় দল, মত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।