বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয়ে স্কুল-ছাত্রীকে হত্যার ঘটনা আবারো ঘটেছে বাংলাদেশে। গতকাল রোববার মাদারীপুরে নবম শ্রেণীর ছাত্রী নিতু মণ্ডলকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। কয়েক সপ্তাহ আগে ঢাকায় একইভাবে এক স্কুলছাত্রীকে হত্যা করা হয়েছিল।
ঢাকার একটি স্কুলের সামনে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েকে বাসায় নিতে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন রিনা আক্তার।
মাদারীপুরে নিতু মণ্ডলকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনা সকালেই তিনি খবরের কাগজে পড়েছেন।
কয়েক সপ্তাহ আগে একই ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা।
রিনা আক্তার বলেছেন, এসব ঘটনা তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। নিতু কিংবা রিশার জায়গায় তিনি নিজের মেয়েকে ভাবছেন। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করে আঁতকে উঠেন তিনি ।
রিনা আক্তার বলেন, “এ রকম ঘটনা যদি আমার সন্তানের ক্ষেত্রে ঘটে! আমার সন্তানের পিছনে লেগে কেউ তো ক্ষতিও করতে পারে।”
বাংলাদেশের শহরে কিংবা গ্রামে রাস্তাঘাটে মেয়েদের উত্যক্ত করার ঘটনা নতুন কোন বিষয় নয়। এর জের ধরে সহিংস আচরণও একেবারে নতুন কোন বিষয় নয়। বিভিন্ন সময় বখাটেদের হাতে মেয়েদের অভিভাবকদের আক্রান্ত হবার ঘটনাও পত্র-পত্রিকায় উঠে এসেছে। প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয়ে মেয়েদের উপর এসিড কিংবা নানা ধরনের আক্রমণ অতীতেও বিভিন্ন সময় দেখা গেছে। এখনও হচ্ছে। উত্যক্তকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা তৈরিরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।
এমনকি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির বিধানও করা হয়েছিল। তারপরেও সেটা কমেনি। ঢাকার ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ সেলিনা বানু মনে করেন, রাস্তাঘাটে মেয়েদের উত্যক্ত করার বিরুদ্ধে যদি কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটতো না।
সেলিনা বানু মনে করেন, ইভ-টিজিং এর বিরুদ্ধে যে প্রচারণা হয়েছে তাতে মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। কিন্তু শুধু সচেতনতা দিয়ে এটি মোকাবেলা সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন। এজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরো তৎপর ভূমিকা রাখতে হবে বলে সেলিনা বানু উল্লেখ করেন।
মাদারীপুরের ঘটনায় হত্যাকারীকে কলেজের ছাত্র হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে যিনি নিতু মণ্ডলের গৃহশিক্ষক ছিলেন।
অন্যদিকে, ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী রিশা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এক দর্জিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মনোবিদ মেখলা সরকার মনে বলছেন, প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয়ে হত্যার ঘটনা শুধু আইন শৃঙ্খলার বিষয় নয়। এর সাথে মনোজগতের সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, সন্তান কিভাবে বেড়ে উঠছে তার সাথে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। মেখলা সরকার বলেন, এক্ষেত্রে কে ধনী আর কে দরিদ্র সেটি কোন বিচার্য বিষয় নয়।
মেখলা সরকার বলেন, “অনেকে এমনভাবে বড় হয়ে উঠে যে সবসময় সে যা চাবে তাই পাবে। তাকে কিছু প্রত্যাখ্যান করা হলে সেটা সে গ্রহণ করতে পারেনা।” তিনি বলেন, পৃথিবীতে চাইলেই যে সবকিছু পাওয়া যায় না সে উপলব্ধি থাকতে হবে।
এ ধরনের উপলব্ধি না থাকার কারণেই প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সহিংস আচরণের পথ বেছে নিচ্ছে কেউ-কেউ। পুলিশ বলছে, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে হত্যাকাণ্ডের এসব ঘটনাকে তারা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখেছে। কারণ এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে না। কিন্তু তারপরেও এসব ঘটনা মোকাবেলার ব্যাপারে পুলিশ যথেষ্ট তৎপর আছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।